রাহুল গান্ধী। —ফাইল চিত্র।
মহারাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাহুল গান্ধী দুই শরিক দল শরদ পওয়ারের এনসিপি (এসপি) ও উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনা (ইউবিটি)-র সঙ্গে মতভেদ কমিয়ে সমন্বয় বাড়াতে চাইছেন। এই সমন্বয় নিয়ে রাহুলমুম্বই গিয়ে দুই শরিক নেতার সঙ্গেকথা বলবেন।
চলতি মাসের ২০ নভেম্বর এক দফায় মহারাষ্ট্রের ২৮৮টি আসনে বিধানসভার ভোটগ্রহণ। রাহুল ঘনিষ্ঠ শিবিরের খবর, আগামী ৬ নভেম্বর, বুধবার মুম্বইয়ে কংগ্রেসের নির্বাচনী ইস্তাহার প্রকাশ হবে। পাশাপাশি, বিরোধী জোট মহাবিকাশ আঘাড়ীর তরফে যৌথ গ্যারান্টি ঘোষণার চেষ্টা চলছে। ওই দিন মুম্বইয়ের বান্দ্রা-কুর্লা কমপ্লেক্সে মহাবিকাশ আঘাড়ীর যৌথ জনসভা হবে। রাহুল, শরদ, উদ্ধবের এক মঞ্চ থেকে জোটের প্রচার করবেন। কিন্তু কংগ্রেস সূত্রের দাবি, রাহুল মনে করছেন, এই মুহূর্তে জোটের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। এনসিপি (এসপি) মূলত অজিত পওয়ারের এনসিপি-কে হারানোর কৌশল নিয়ে চিন্তা করছে। উদ্ধব শিবসেনা একনাথ শিন্দের শিবসেনাকে কী ভাবে টেক্কা দেওয়া যায়, তা নিয়ে মাথা ঘামাতে ব্যস্ত। মহারাষ্ট্রের এনডিএ বা মহায্যুতি জোটের আসল শক্তি বিজেপিকে নিয়ে দুই দলের কোনও মাথাব্যথা নেই। শরদ, উদ্ধবকে দেখে মনে হচ্ছে, তাঁরা বিজেপিকে সামলানোর দায়িত্ব পুরোপুরি কংগ্রেসের উপরে ছেড়ে দিয়েছেন। রাহুলের মতে, এ ভাবে আলাদা আলাদা ভাবে মহারাষ্ট্রের ভোটের লড়াইয়ে নামলে কোনও লাভ হবে না। মহাবিকাশ আঘাড়ীরতিন দলকে এককাট্টা হয়ে ভোটে লড়তে হবে।
মহারাষ্ট্রের ভোটে মহাবিকাশ আঘাড়ীর মধ্যে আসন রফা নিয়ে এমনিতেই যথেষ্ট বাদানুবাদ হয়েছে। বিরোধী শিবিরের মতে, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি নানা পাটোলে ও শিবসেনা (উদ্ধব ঠাকরে)-র সঞ্জয় রাউতের নিয়মিত বিবৃতির লড়াইয়ের ফলে জোটে তার প্রভাব পড়েছে। মহারাষ্ট্রের কংগ্রেস নেতাদেরমতে, উদ্ধব তাঁর ক্ষমতার বাইরে গিয়ে বহু আসনে লড়তে চাইছিলেন। যাতে তিনি মহাবিকাশ আঘাড়ী ক্ষমতায় এলে মুখ্যমন্ত্রী পদের দাবিদারহতে পারেন।
কংগ্রেস নেতারা মনে করছেন, কংগ্রেস ও শিবসেনা (ইউবিটি)-র মধ্যে বিরোধের মধ্যস্থতার ভূমিকায় নেমে শরদ নিজের ফায়দা কুড়িয়েছেন। তিনিও ক্ষমতার বাইরে গিয়ে দলের জন্য বহু আসন আদায় করে নিয়েছেন। রাহুল নিজে এ নিয়ে কংগ্রেসের বালাসাহেব খোরাটকে তোপ দেগে বলেছিলেন, তিনি কংগ্রেসের হাত থেকে বেশ কিছু ভাল আসন শরদের ঝুলিতে তুলে দিয়ে এসেছেন।
কংগ্রেস নেতাদের মতে, এই তিক্ততা থেকে বেরিয়ে ৬ নভেম্বর মহাবিকাশ আঘাড়ী যদি যৌথ ঘোষণা করতে পারে, তা হলে জোটের মধ্যে সমন্বয়ের বার্তা দেওয়া যাবে। ৬ নভেম্বর কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে ও রাহুল সকালে নাগপুরে সংবিধান সম্মান সম্মেলনে যোগ দেবেন। তার পরে বিকেলে মুম্বইতে আঘাড়ীর যৌথ জনসভায় অংশ নেবেন। মহারাষ্ট্র নির্বাচনেকংগ্রেসের অন্যতম পর্যবেক্ষক টি এস সিংহদেও বলেন, “ভোটের আগে যদি জোটের তরফে কোনও গ্যারান্টির ঘোষণা করা যায়, তা হলে ভাল বার্তা যাবে। আমার মনে হয়, আঘাড়ী জোটের পরিণত মনস্ক নেতারা সেই চেষ্টা করবেন।”
আসন রফার শেষে কংগ্রেস মহারাষ্ট্রের ২৮৮টি আসনের মধ্যে ১০২টি আসনে লড়ছে। উদ্ধবের দল লড়ছে ৯৬টি আসনে। শরদের এনসিপি ৮৭টি আসনে লড়ছে। কংগ্রেস শিবির মনে করছে, ১৪ থেকে ১৫টি ভাল আসন কংগ্রেসের মহারাষ্ট্রের নেতারা শরদ ও উদ্ধবের হাতে তুলে দিয়েছেন। কিন্তু এখন শরদ ও উদ্ধব দু’জনেই তাঁদের দল ভেঙে বেরিয়ে বিজেপির সঙ্গে হাত মেলানো অজিত পওয়ার ও একনাথ শিন্দেকে শায়েস্তা করতে বেশি চিন্তিত। অথচ তাঁরা ভুলে যাচ্ছেন, মহায্যুতি জোটে এখন বিজেপিই সব থেকে বড় দল। ২০ নভেম্বর মহারাষ্ট্রের ভোটেও বিজেপি জোটের মধ্যে সবথেকে বেশি আসনে লড়ছে। ২৮৮টি আসনের মধ্যে বিজেপি একাই ১৪৮টি আসনে লড়ছে। সেখানে শিন্দের শিবসেনা ৮০টি ও অজিতের এনসিপি মাত্র ৫২টি আসনে লড়ছে। এর মধ্যে ৭৬টি আসনে বিজেপির সঙ্গে কংগ্রেসের মুখোমুখি লড়াই।
কংগ্রেস শিবিরের বক্তব্য, এই ৭৬টি আসনের ফলই মহারাষ্ট্র নির্বাচনের ভাগ্য ঠিক করবে।এর মধ্যে ৩৬টি আসন বিদর্ভের। যেখানে কংগ্রেস শক্তিশালী হলেও নানা সমস্যায় ভুগছে। ফলে শরিকদেরও এককাট্টা হয়ে লড়তে হবে। নজর দিতে হবে বিজেপির মোকাবিলায়। মহারাষ্ট্র ভোটে বিরোধী জোট হেরে গেলে কেন্দ্রে লোকসভা নির্বাচনের পরে বিজেপির উপরে যে চাপ তৈরি হয়েছে, তা অনেকটাই আলগা হয়ে যাবে। রাহুল মুম্বই গিয়ে শরদ, উদ্ধবের সঙ্গে আলোচনায়বসে সেই কারণে সমন্বয়ের দিকেজোর দেবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy