Advertisement
০৫ অক্টোবর ২০২৪

শোকবার্তা নিয়ে নেপাল দূতাবাসে হাজির রাহুল

তিনি কৃষকদের পাশে আছেন। ভাবছেন মধ্যবিত্তের জন্যও। নেপাল-দুর্গতদেরও ভোলেননি। ভূমিকম্পের দু’দিন পরে কংগ্রেসের কৌশল নির্ধারণ বৈঠকে দলের উৎসাহী এক নেতা বলেছিলেন, ‘‘রাহুলজি আপনি এক বার নেপালে ভূকম্প কবলিত এলাকা ঘুরে আসুন না! লোকে প্রশংসা করবে।’’

দুর্গতদের পাশে আছি। লিখছেন রাহুল। নেপাল দূতাবাসে। —নিজস্ব চিত্র।

দুর্গতদের পাশে আছি। লিখছেন রাহুল। নেপাল দূতাবাসে। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০২ মে ২০১৫ ০২:০৯
Share: Save:

তিনি কৃষকদের পাশে আছেন। ভাবছেন মধ্যবিত্তের জন্যও। নেপাল-দুর্গতদেরও ভোলেননি।

ভূমিকম্পের দু’দিন পরে কংগ্রেসের কৌশল নির্ধারণ বৈঠকে দলের উৎসাহী এক নেতা বলেছিলেন, ‘‘রাহুলজি আপনি এক বার নেপালে ভূকম্প কবলিত এলাকা ঘুরে আসুন না! লোকে প্রশংসা করবে।’’ সপাটে জবাব না দিলেও রাহুল সে দিন বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, লোক দেখানো সফর করে ত্রাণ ও উদ্ধারে বিঘ্ন ঘটানোর কোনও ইচ্ছা নেই তাঁর। কিন্তু আজ উদ্ধার কাজ যখন প্রায় শেষের দিকে তখন নয়াদিল্লিতে নেপালি দূতাবাসে চলেই গেলেন রাহুল গাঁধী। ভূমিকম্পে নেপালের হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু ও সম্পদ নষ্ট হওয়ার জন্য শোক প্রস্তাব লিখে এলেন দূতাবাসের খাতায়। লেখার সময় বার বার নাকি মোবাইলের দিকে তাকাচ্ছিলেন রাহুল। যা দেখে বিরোধীদের একটি অংশের টিপ্পনী, ‘‘রাহুল কি মোবাইলে আগে থেকে শোকবার্তা টাইপ করে এনেছিলেন?’’ তাঁদের কারও কারও বক্তব্য, শোকজ্ঞাপনের নেপথ্যেও রাজনীতি নেই তো!

কংগ্রেসের এক নেতা যেমন বলেন, নেপালের উদ্ধার কাজে কেন্দ্রে মোদী সরকার যে ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছে তা নিয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে প্রশংসা হচ্ছে। জাতীয় রাজনীতিতে কৃষক অসন্তোষ থেকে শুরু করে নানা বিষয়ে সরকারের যে সমালোচনা হচ্ছে তার থেকে মুখ ঘোরাতে মোদী এই বিষয়টিকে খুব কৌশলে ব্যবহার করতে চাইছেন। সেটা বুঝেই কংগ্রেসের অনেক নেতার মধ্যে অসহিষ্ণুতা বাড়ছে। বলা যেতে পারে, কংগ্রেসের কৌশল বৈঠকে মূলত সেই অসহিষ্ণুতা থেকেই রাহুলকে নেপাল যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন দলের এক নেতা। এমনকী ওই বৈঠকে কংগ্রেসের এক সাংসদ আফসোস করে বলেন, লিবিয়া থেকে ১৮ হাজার ভারতীয়কে প্রায় নিঃশব্দে উদ্ধার করেছিল মনমোহন সরকার। কিন্তু উদ্ধার কাজের বিপণনটাও কী ভাবে করা যায়, জানেন নরেন্দ্র মোদী। কংগ্রেসের তা শেখা উচিত।

কংগ্রেস সূত্র বলছে, দলের ওই বৈঠকের পরেই সনিয়া গাঁধী নেপালের প্রধানমন্ত্রী সুশীল কৈরালাকে চিঠি লেখেন। তার পর আজ নেপালের দূতাবাসে যান রাহুল।

তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এতে রাহুলের নিজস্ব রাজনীতিও রয়েছে। অজ্ঞাতবাস থেকে ফিরে এসে রোজই কোনও না কোনও ভাবে প্রকাশ্যে আসছেন তিনি। গত কাল বিদর্ভে গিয়ে কৃষকদের দুর্দশা খতিয়ে দেখতে ১৫ কিলোমিটার পদযাত্রা করেছিলেন তিনি। দিল্লিতে নতুন বাড়ি কিনেছেন যাঁরা, কিন্তু প্রোমোটার-দালাল চক্রে বাড়ি ঠিক সময়ে পাননি বা খারাপ মানের নির্মাণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন— এ বার সেই সব মধ্যবিত্তের পাশেও দাঁড়াতে চান রাহুল। আগামিকাল ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করবেন রাহুল। এক জন গ্রহণযোগ্য নেতা হিসাবে নিজেকে তুলে ধরার জন্য এ ভাবেই সক্রিয় হয়েছেন তিনি।

কংগ্রেস সূত্র জানাচ্ছে, মহারাষ্ট্র সফরের পর এ বার তেলঙ্গানাও যাবেন রাহুল। কৃষক আত্মহত্যার ঘটনা তেলঙ্গনাতেও ঘটছে। পৃথক তেলঙ্গানা রাজ্যের আবেগে এক সময় সায় দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু কংগ্রেস তার রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে পারেনি। এ বার তেলঙ্গানার কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়ে সেখানে কংগ্রেসকে ফের শক্তিশালী করতে চাইছেন তিনি। সম্ভবত ৯ ও ১০ মে সেখানে সফর করবেন রাহুল।

তবে তার আগে আগামী সপ্তাহে ফের সংসদে সক্রিয় হবেন কংগ্রেস সভাপতি। মোদী সরকারের বিরুদ্ধে এ বার সম্ভবত পেট্রোল, ডিজেলের দাম বাড়ার ঘটনা নিয়ে আক্রমণাত্মক হবেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE