নতুন বন্ধু। মঙ্গলবার অম্বালার পথে সচখন্দ এক্সপ্রেসে সাধারণ কামরার যাত্রী রাহুল। — নিজস্ব চিত্র।
দু’দিন আগে হেঁটে উঠেছিলেন কেদারনাথ মন্দির! বলা-কওয়া নেই আজ উঠে পড়লেন প্যাসেঞ্জার ট্রেনের জেনারেল কামরায়। পঞ্জাবের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সঙ্গে দেখা করতে ট্রেনে চেপে অম্বালা গেলেন রাহুল গাঁধী!
আগেও জেনারেল কামরায় উঠেছেন রাহুল। মুম্বইয়ের লোকাল ট্রেনেও ঘুরেছেন। আজকের ঘটনা তাই নতুন নয়! নতুন হল, মানুষের মাঝে এখন রোজ দেখা যাচ্ছে রাহুলকে। কংগ্রেসের সহ-সভাপতির আচরণে এটা কি বড় পরিবর্তন নয়?
লোকসভা ভোটের আগে একটা দীর্ঘ সময় তো বটেই, ভোটের পরেও রাহুল নিজেকে ব্যস্ত রেখেছিলেন চার দেওয়ালের মধ্যে। নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করলেও ঘর থেকে বেরোননি।
৫৬ দিন ছুটি কাটিয়ে আসার পর রাহুলের এই পরিবর্তন চোখে পড়ার মতো। রামলীলা ময়দানে কৃষক সমাবেশের পর থেকে প্রতিদিনই রাহুল হয় সংসদে, না হয় সড়কে! মোদী সরকারের সমালোচনা করে কখনও বলছেন, ‘কেন্দ্রে স্যুট-বুটের সরকার’ চলছে। কখনও আবার ১৬ কিলোমিটার হেঁটে কেদারনাথ ধাম যাত্রা করে বোঝাতে চাইছেন, হিন্দু ভাবাবেগ সম্পর্কেও তাঁর দল সচেতন। কংগ্রেস যে শুধু সংখ্যালঘু তোষণ করে না, সেই রাজনৈতিক বার্তাই দিতে চাইছেন।
বেলা ২টো নাগাদ আজ নয়াদিল্লি স্টেশন থেকে সচখন্দ এক্সপ্রেসে চড়েন রাহুল। গন্তব্য পঞ্জাবের অম্বালা। পরণে চকোলেট রঙের পোলো টি শার্ট আর ডেনিম। পায়ে স্পোর্টস শ্যু! গালে তিন-চার দিনের খোঁচা খোঁচা দাড়ি। সঙ্গী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। সচখন্দ এক্সপ্রেস নয়াদিল্লি স্টেশন ছাড়ার আগে জেনারেল কামরার ভিতর থেকেই মুখ বাড়িয়ে সাংবাদিকদের রাহুল বলেন, ‘‘আমি শুনেছি পঞ্জাবের কৃষকদের অবস্থা খুবই খারাপ। ওঁরা কৃষিপণ্যের উচিত মূল্য পাচ্ছেন না। ওঁদের সমস্যা খতিয়ে দেখতে যাচ্ছি।’’
ট্রেন ছাড়তেই রাহুল মিশে যান সহযাত্রীদের সঙ্গে। কখনও তাঁদের অভাব অভিযোগের কথা শোনেন। তাঁকে নিয়ে কৌতুহলী প্রশ্নের জবাব দেন। আবার ছোট বাচ্চাদের কোলে তুলে নিয়ে তাঁদের সঙ্গে মোবাইল নিয়ে খেলাও করেন। অম্বালায় নেমে আজ গোবিন্দগড় ও খন্নায় কৃষিপণ্যের দু’টি পাইকারি বাজার ঘুরে দেখেন রাহুল। এই দু’টি এলাকা পঞ্জাবের শস্য-ভাণ্ডার বলে পরিচিত। কংগ্রেস সূত্র বলছে, কাল ফের আটারি ও রাজা সানসি, এই দু’টি পাইকারি বাজারে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলবেন তিনি।
কংগ্রেস সূত্র জানাচ্ছে, পঞ্জাবের পর তিনি ক্রমে মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশ ও তেলঙ্গানার কৃষকদের সঙ্গে দেখা করবেন রাহুল। কৃষকদের দাবি আদায়ের জন্য পদযাত্রায় বেরোবেন। যার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য একটাই। জমি নীতি নিয়ে কেন্দ্রে মোদী সরকারকে চাপের মুখে ফেলে দেওয়া। আর দেশ জুড়ে এই রাজনৈতিক ধারণা গড়ে তোলা যে, এই সরকার কৃষক-গরিব বিরোধী এবং পুঁজিপতিদের ইচ্ছাপূরণে অনেক বেশি আগ্রহী। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষিপণ্যের ক্ষতিপূরণের দাবিতে ইতিমধ্যেই পঞ্জাবে আন্দোলন করছেন কৃষকরা। সন্দেহ নেই, রাহুল তাতে আরও ঘি ঢালতে চাইছেন।
বিজেপির পাল্টা দাবি, সরকারের জমি নীতির বিরোধিতা করে রাহুল আদতে কৃষক ও গরিব মানুষের কর্মসংস্থানের পথে বাধা তৈরি করছেন। পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ সিংহ বাদলের পুত্রবধূ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হরসিমরত কৌর বলেন, ‘‘রাহুল গাঁধী নাটক করছেন। এর আগে পঞ্জাবে যখন বন্যা হয়েছিল, তখন তিনি কোথায় ছিলেন?’’
মজার ব্যাপার, রাহুলের পোশাক নিয়েও আজ অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। বলছেন, টি শার্টের বদলে কুর্তা-পাজামা পরে যাওয়া উচিত ছিল তাঁর। তা ছাড়া, সঙ্গে গ্বালিয়রের মহারাজ জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়াকে না নিয়ে কোনও কৃষক নেতাকে সঙ্গী করতে পারতেন রাহুল! এর জবাবও দিয়েছে কংগ্রেস! দলের মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা বলেন, ‘‘ভেক ধরার পক্ষপাতী নন রাহুল। তিনি কৃষকদের সমস্যা সম্পর্কে আন্তরিক। বরং যাঁরা ভেক ধরে রয়েছেন, তাঁদের মুখোশ খুলে দিতে চান তিনি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy