শ্রোতা রাহুল। শুক্রবার পুণের ফিল্ম ইনস্টিটিউটে। ছবি: পিটিআই।
শিক্ষায় গৈরিকীকরণ নিয়ে আগেও মুখ খুলেছেন তিনি। টুইটারে বিতর্কে জড়িয়েছেন মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী স্মৃতি ইরানির সঙ্গে। আরও এক বার শিক্ষিত ছাত্র সমাজের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিলেন কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধী।
আজ পুণের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট (এফটিআইআই)-এর ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে দেখা করেন রাহুল। প্রায় দু’মাস ধরে ক্লাস বয়কট করছেন এফটিআইআইয়ের আড়াইশো প়ড়ুয়া। ওই প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং কাউন্সিলের চেয়ারম্যান পদে বিজেপি-ঘনিষ্ঠ গজেন্দ্র চৌহানকে বসানো নিয়ে যাবতীয় বিতর্কের সূত্রপাত। বি আর চোপড়া পরিচালিত ‘মহাভারত’ সিরিয়ালে যুধিষ্ঠিরের ভূমিকায় অভিনয় করে জনপ্রিয় হয়েছিলেন গজেন্দ্র। শুধুমাত্র সেই ‘যোগ্যতায়’ গজেন্দ্র কী ভাবে এত বড় একটি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান পদে বসেছেন, সেই প্রশ্ন তুলে ক্লাস বয়কট শুরু করেন ছাত্র-ছাত্রীরা। প্রায় ৫০ দিন হয়ে গেল। গজেন্দ্র আসার পর থেকে এক দিনের জন্যও ক্লাস হয়নি এফটিআইআইয়ে।
ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র সংগঠনের কিছু সদস্য দিন কয়েক আগে দেখা করেছিলেন রাহুল গাঁধীর সঙ্গে। তাঁদের দাবি, অবিলম্বে নিজের পদ থেকে সরে দাঁড়ান গজেন্দ্র। এফটিআইআইয়ের বেশ কিছু প্রাক্তনী এবং প্রাক্তন শিক্ষকদেরও পাশে পেয়েছেন ছাত্ররা। তাঁরাই পুণে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন রাহুলকে। সেই আমন্ত্রণে সাড়া দিতেই আজ পুণে আসেন রাহুল। তবে আজ সহ-সভাপতির পরনে চেনা সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি ছিল না। নীল জিনস্ আর কালো টি শার্ট পরা রাহুলকে দেখা গিয়েছে ছাত্রদের ভিড়ে মিশে যেতে। সরাসরি বিজেপি এবং আরএসএসের বিরুদ্ধেই তোপ দেগেছেন তিনি। রাহুল ছাত্রদের বলেছেন, ‘‘গজেন্দ্রর মতো অতি সাধারণ মাপের অভিনেতাকে শীর্ষ পদে বসিয়ে আসলে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মানকে নামিয়ে আনতে চাইছে আরএসএস। শুধু এফটিআইআই কেন, নিজেদের পছন্দের লোক বসিয়ে সারা দেশের শিক্ষার মান নামিয়ে আনতে চায় আরএসএস। দেশের আমলাতন্ত্র আর বিচার বিভাগেও এখন একই অবস্থা।’’
গজেন্দ্র নিজে বহু বার বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, কেন্দ্র তাঁকে যোগ্য মনে করে বলেই তিনি চেয়ারম্যান হয়েছেন। তাঁর ইস্তফা দেওয়ার প্রশ্নই নেই। এই অবস্থায় সরকার আলোচনায় না বসলে তাঁদের পক্ষে ক্লাসে ফেরা সম্ভব নয় বলে আগেই জানিয়েছেন ছাত্ররা। কিন্তু ছাত্রদের অভিযোগ, কেন্দ্র তাঁদের সঙ্গে আলোচনার রাস্তায় হাঁটতে চাইছেন না। এই প্রসঙ্গেই রাহুল আজ বলেছেন, ‘‘ছাত্ররা শুধু চাইছে আলোচনা করতে। চায় ওদের দাবিগুলো শোনা হোক। কিন্তু এই সরকার তো কোনও আলোচনাতেই রাজি নয়। ওদের (সরকারের) আদর্শ না মিললেই তুমি হলে হিন্দু-বিরোধী, দেশদ্রোহী।’’ এই প্রসঙ্গেই কংগ্রেস জমানার সঙ্গে মোদী সরকারের তুলনা টেনেছেন রাহুল। বলেছেন, ‘‘আমাদের সরকার আলোচনায় বিশ্বাসী ছিল। যখনই সমস্যা হয়েছে, সরকার কথা বলতে রাজি হয়েছে। আর এই সরকারের প্রধানমন্ত্রী এক বার যা বলবেন, তার পরে আর কারও কথা বলার উপায় থাকে না।’’
আজ যখন রাহুল এফটিআইআইয়ে ঢুকছেন, তখনই বিজেপি সমর্থকেরা গেটের বাইরে বিক্ষোভ দেখান। কংগ্রেস সহ-সভাপতিকে ‘অভিনেতা’ আখ্যা দিয়ে মস্করা করতে ছাড়েননি বিজেপি নেতা তথা অভিনেতা পরেশ রাওয়ালও।
তবে শিক্ষার গৈরিকীকরণ নিয়ে এই প্রথম বার মুখ খুললেন রাহুল, এমনটা নয়। কয়েক মাস আগে মোদী-বিরোধী আলোচনাসভার আয়োজন করায় আইআইটি মাদ্রাজের এক ছাত্র সংগঠনকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। সে বারও প্রতিবাদ করতে দেখা গিয়েছিল রাহুলকে। মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী স্মৃতি ইরানির সঙ্গে সে সময় টুইট বিতর্কেও জড়িয়ে পড়েন।
এক দিকে জমি বিল নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরোধিতা করে দেশের কৃষক সম্প্রদায়ের কাছে আসতে চাইছেন তিনি। অন্য দিকে আইআইটিএম বা এফটিআইআইয়ের মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গোলমালের সূত্রে শিক্ষিত শহুরে ছাত্র
সমাজের পাশেও দাঁড়াচ্ছেন। অনেকের মতে, বিজেপিকে বিঁধতে এখন কোনও পথই ছাড়ছেন না সনিয়া-পুত্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy