Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
Bharat Rice

দামবৃদ্ধি ঠেকাতে কি ‘ভারত চাল’

নভেম্বর মাসে মূল্যবৃদ্ধির হার সাড়ে পাঁচ শতাংশের বেশি ছিল। গত তিন মাসে সর্বোচ্চ। মূল কারণ খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির হার। নভেম্বরে খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির হার ছিল ৮.৭ শতাংশ।

rice.

—প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৭:৫৪
Share: Save:

প্রচারে থাকছে রামমন্দির। দুশ্চিন্তায় রাখছে খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি।

এমনিতেই খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে রাশ টানা যাচ্ছে না বলে লোকসভা নির্বাচনের আগে মোদী সরকার চিন্তায় রয়েছে। কারণ, খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির ধাক্কায় খুচরো বাজারে মূল্যবৃদ্ধিও লাগামের বাইরে চলে যাচ্ছে। তার উপরে মোদী সরকারের দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে কৃষি মন্ত্রকের রিপোর্ট বলছে, রবি মরসুমে গম, ডাল, মিলেটের পরে ধানের বীজ বপনও যথেষ্ট পরিমাণে হচ্ছে না। এমনিতেই খরিফ মরসুমে খাদ্যশস্যের উৎপাদন গত বছরের মতো হয়নি। তার উপরে রবি মরসুমেও খাদ্যশস্যের চাষ কম হলে বাজারে ফের খাদ্যপণ্যের দাম বাড়বে বলে মোদী সরকারের আশঙ্কা।

বিজেপি নেতাদের প্রশ্ন, রামমন্দির ঘিরে হিন্দু ধর্মীয় ভাবাবেগে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে ক্ষোভ ধামাচাপা দিয়ে রাখা যাবে তো? পরিস্থিতি সামলাতে লোকসভা ভোটের আগে ২৫ টাকা কেজি দরে ‘ভারত চাল’ ব্র্যান্ডের সরকারি চাল বাজারে আনারও পরিকল্পনা রয়েছে।

নভেম্বর মাসে মূল্যবৃদ্ধির হার সাড়ে পাঁচ শতাংশের বেশি ছিল। গত তিন মাসে সর্বোচ্চ। মূল কারণ খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির হার। নভেম্বরে খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির হার ছিল ৮.৭ শতাংশ। এর মধ্যে চাল, গমের মতো খাদ্যশস্যে মূল্যবৃদ্ধির হার ১০ শতাংশেরও বেশি। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের কর্তারাও জানিয়ে দিয়েছেন, খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণেই খুচরো বাজারে মূল্যবৃদ্ধির হার সহনশীল মাত্রার মধ্যে বেঁধে রাখা যাচ্ছে না। শুক্রবার কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের ষাণ্মাষিক আর্থিক রিপোর্টে মেনে নেওয়া হয়েছে, তুলনামূলক ভাবে খাদ্যপণ্যে চড়া মূল্যবৃদ্ধির হার উদ্বেগের কারণ। যদিও গোটা বিশ্বেই একই ছবি বলে অর্থ মন্ত্রকের দাবি।

অর্থ মন্ত্রকের চিন্তা বাড়িয়ে কৃষি মন্ত্রকের রিপোর্ট বলছে, নভেম্বর মাস পর্যন্ত রবি ফসলের চাষে গমের বীজ বপন স্বাভাবিকের তুলনায় কম হয়েছে। একই অবস্থা ডালের ক্ষেত্রে। রাজস্থান, মহারাষ্ট্র, গুজরাত, কর্নাটকে রবি মরসুমে ডালের বীজ বপন কম হয়েছে। বাজারে আটা ও ডালের দাম বাড়ছে। এদিকে গত সপ্তাহের রিপোর্ট অনুযায়ী, গত বছরের তুলনায় এ বছরে এখনও পর্যন্ত ১৭.১৮ লক্ষ হেক্টর কম জমিতে গম ও ডালের বীজ বপন হয়েছে। যে মিলেটকে মোদী সরকার শ্রীঅন্ন বলে প্রচার করছে, সেখানেও ফসল উৎপাদন কম হওয়ার আশঙ্কা।

শনিবার দিনভর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অযোধ্যায় নানা অনুষ্ঠানে ব্যস্ত থেকেছেন। কিন্তু শুক্রবারের কৃষি মন্ত্রকের রিপোর্ট গোটা মোদী সরকারের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। আরও চিন্তায় ফেলেছে মোদী সরকারকে। গম, ডাল, মিলেটের মতো ধান উৎপাদনও কম হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। রবি মরসুমে গোটা দেশে ৫২.৫০ লক্ষ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়। এই সময়ের মধ্যে ১৬.৫৭ লক্ষ হেক্টর জমিতে ধানের বীজ বপন হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে, ২.২১ লক্ষ হেক্টর কম জমিতে ধান চাষ শুরু হয়েছে। জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে এমন হচ্ছে বলে প্রাথমিক ভাবে কৃষি মন্ত্রকের কর্তারা মনে করছেন।

অর্থ মন্ত্রকের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, প্রাথমিক অনুমান অনুযায়ী খরিফ মরসুমে খাদ্যশস্য উৎপাদন কম হবে বলে আশঙ্কা রয়েছে। গত বছর খরিফ মরসুমে হয়েছিল ১৫৫৭ কোটি টন খাদ্যশস্য উৎপাদন হয়েছিল। এ বছর ১৪৮৫ কোটি টনের মতো হবে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, বর্ষার সময় গড়ের তুলনায় কম বৃষ্টিপাত হয়েছিল। তার উপরে কর্নাটক, মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রে খরা পরিস্থিতি ছিল। তামিলনাড়ুতে বন্যা হয়েছে। কৃষি মন্ত্রকের কর্তারা আশা করছেন, পুরো হিসেব এলে ছবিটা ভার হতে পারে। রবি মরসুমে চাষের যে ঘাটতি রয়েছে, তা-ও মিটতে পারে।

তা না হলে? খাদ্যপণ্যের উৎপাদন কম হবে আশঙ্কায় যদি মূল্যবৃদ্ধি আরও বাড়তে থাকে? খাদ্য ও উপভোক্তা বিষয়ক মন্ত্রকের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর দফতরের কড়া নির্দেশ, লোকসভা ভোটের আগে যে কোনও উপায়ে খাদ্যপণ্যের দামে রাশ টানতে হবে। আমরা বেআইনি মজুতদারি, কালোবাজারি বন্ধ করতে পদক্ষেপ করেছি, সরকারি গুদাম থেকে চাল, গম বাজারে ছাড়া হচ্ছে। বিদেশ থেকে নিঃশুল্ক ডাল আমদানি করা হচ্ছে।” সরকারি সূত্রের বক্তব্য, ইতিমধ্যেই ‘ভারত আটা’ ব্র্যান্ডে কম দামে আটা বাজারে ছাড়া হয়েছে। যার দাম প্রতি কেজি সাড়ে সাতাশ টাকা। চালের ক্ষেত্রেও সরকারি কৃষি বিপণন, কৃষি সমবায় সংস্থাগুলির মাধ্যমে ‘ভারত চাল’ নাম দিয়ে সস্তায় চাল বাজারে ছাড়া হবে। লোকসভা ভোটের আগেই।

অন্য বিষয়গুলি:

Narendra Modi Central Government
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy