Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

আমার ওপর বিশ্বাস রাখুন, ডাক চানুর

দীর্ঘ ১৬ বছর পরে অনশন ভেঙে, প্রথমবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলেন ইরম শর্মিলা চানু। নাকে নেই এত দিনের সর্বক্ষণের সঙ্গী রাইলস টিউব। সদ্য মুখে ঠেকিয়েছেন মধু। ডান হাতের বুড়ো আঙুলে ব্যক্তিগত বন্ডে টিপছাপ দেওয়ার নীল কালি জ্বলজ্বল করছে। পরণে সাদা চিকনের ফুলহাতা কুর্তি, আকাশ-নীল পাজামা। গলায় জড়ানো মণিপুরি মাফলার।

রাজীবাক্ষ রক্ষিত
ইম্ফল শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৬ ০৪:২৬
Share: Save:

দীর্ঘ ১৬ বছর পরে অনশন ভেঙে, প্রথমবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলেন ইরম শর্মিলা চানু। নাকে নেই এত দিনের সর্বক্ষণের সঙ্গী রাইলস টিউব। সদ্য মুখে ঠেকিয়েছেন মধু। ডান হাতের বুড়ো আঙুলে ব্যক্তিগত বন্ডে টিপছাপ দেওয়ার নীল কালি জ্বলজ্বল করছে। পরণে সাদা চিকনের ফুলহাতা কুর্তি, আকাশ-নীল পাজামা। গলায় জড়ানো মণিপুরি মাফলার। প্রথমেই বললেন, “আজ খুব দুঃখের দিন। এত দিনের সংগ্রাম শেষ করা এক বিরাট শূন্যতা। কিন্তু আমি সাধারণ মানুষের মতো বাঁচতে চেয়েছিলাম।”

গাঁধীবাদী নেত্রী কি মেনে নিচ্ছেন, তাঁর অনশন সত্যাগ্রহ আন্দোলন ব্যর্থ? চানু জানান, মন্তব্য করবেন না। তবে তাঁর নিজের মতো করে, নিজের পথে আফস্পা-বিরোধী আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

কাকে সঙ্গে নিয়ে চলবেন এ বার? শর্মিলা কানবা লুপ, ইমারা, পরিবার, সহযোদ্ধারা সকলেই তো বিরূপ। শর্মিলা বলেন, “আমার দিনবদলের আহ্বান মানুষের উপরে বর্ষিত হবে। তাঁরা দেবী হিসেবে আমায় এত দিন বিশ্বাস করেছেন। এ বার মানুষ হিসেবে বিশ্বাস করে দেখুন। যদি মানুষ সত্যিই আমার সঙ্গে না-থাকেন, মনে করব, তাঁরা পরিবর্তন চাইছেন না।”

১৬ বছর পরে মুখে মধু দিয়ে কেমন লাগল? “স্বাদটা একেবারে অন্য রকম। রাতে ভাবছি চাবোন বা ফেনা ভাত খাব” বললেন শর্মিলা।

সকলে বলছে, প্রেমে পড়েই এই ‘অধঃপতন’ দেবীর। প্রেমিকের পরামর্শেই কি অনশন ভাঙা? শর্মিলা বলেন, “এটা আমার জীবন, আমার সিদ্ধান্ত। প্রেম তো একটা মেয়ের জীবনে স্বাভাবিক নিয়ম মেনেই আসে। মানুষ আমায় বিপ্লবের প্রতীক ভাবে। কিন্তু আমারও যে আশা-আকাঙ্খা থাকতে পারে, তা কেউ বিশ্বাসই করেন না। আর আমার প্রেমিক এই সিদ্ধান্তে কোনও প্রভাব ফেলেনি।”

কাল থেকে তো অন্য জীবন। অন্য আন্দোলন। কী করবেন এর পর?

চানু জানান, ২০১৭ সালের প্রথম দিকেই বিধানসভা নির্বাচন। তাই প্রথমেই নির্বাচন কমিশনের কাছে গিয়ে ভোটে লড়ার পদ্ধতি জানবেন। তাঁর স্পষ্ট কথা, “আমি রাজনীতির কিছুই জানি না। পড়াশোনাও তেমন করিনি। আমি সাম্য আর ন্যায়ের জন্য লড়ব। কোনও দলে যোগ দেব না। ওক্রাম ইবোবি সিংহ (মণিপুরের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী)-কে হারাতে চাই। ক্ষমতা পেলেই আফস্পা তুলে দেব।”

এত দিনের হাসপাতালের পাট তো চুকল। এ বার কোথায় থাকবেন? নিরাপত্তা লাগবে তো? চানু জানান, রাতটা পুলিশের হেফাজতে কাটিয়ে, কাল কোনও আশ্রমে যাবেন (সম্ভবত ইসকনের আশ্রম)। কিন্তু আশ্রম জীবন কী ফের তাঁকে জনবিচ্ছিন্ন করে দেবে না? চানুর মতে, আশ্রম সমাজেরই অঙ্গ। তাঁর কোনও নিরাপত্তাও চাই না। জঙ্গি সংগঠনগুলি ইতিমধ্যে তাঁকে হুমকি দিয়ে রেখেছে। চানু বলেন, “ইচ্ছে হলে আমায় হত্যা করতে পারে। মিথ্যে অপবাদে গাঁধী বা যিশুকেও মরতে হয়েছে।”

প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কোনও বার্তা?

শর্মিলা বলেন, “নরেন্দ্র মোদী বরাবর হিংসায় মদত দিয়ে এসেছেন। পিতৃতুল্য দরদ দিয়ে, অহিংসভাবে দেশ চালান প্রধানমন্ত্রী। সরিয়ে দিন অমানবিক আইন। কাশ্মীর ও মণিপুরের লোককে নিজের পছন্দ মতো ভবিষ্যৎ বেছে নেওয়ার অধিকার দেওয়া হোক। তবেই সমস্যা মিটবে।”

অন্য বিষয়গুলি:

Irom chanu sharmila trust
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE