বিতর্কিত আইএএস পূজা খেড়কর। ছবি: সংগৃহীত।
সপ্তাহ ঘুরলেও প্রশিক্ষণরত আইএএস পূজা খেড়করকে নিয়ে বিতর্ক যেন থামার নামই নেই! এ বার জানা গেল, ইউপিএসসি পরীক্ষায় সংরক্ষণের সুবিধা পেতে যে ভুয়ো ‘প্রতিবন্ধী’ শংসাপত্রগুলি বানিয়েছিলেন পূজা, তাতে দু’টি ভিন্ন নাম ব্যবহার করা হয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, আলাদা আলাদা জায়গা থেকে মঞ্জুর করা হয়েছিল শংসাপত্রগুলি।
সদ্য প্রকাশ্যে আসা দু’টি শংসাপত্রে দেখা যাচ্ছে, আলাদা আলাদা নাম ও পদবি ব্যবহার করেছেন পূজা। একটিতে তাঁর নাম খেড়কর পূজা দিলীপ রাও, অন্যটিতে পূজা মনোরমা দিলীপ খেড়কর!
আগেই পূজার বিরুদ্ধে ভুয়ো শংসাপত্র দাখিল করে নিজেকে ‘অনগ্রসর’ (ওবিসি) শ্রেণিভুক্ত বলে দেখানোর অভিযোগ উঠেছিল। পুণের কাশীবাই নাভালে মেডিক্যাল কলেজের ডিরেক্টর অরবিন্দ ভোরে জানান, পূজা ওই কলেজের ছাত্রী ছিলেন। এমবিবিএস পড়ার সময়ে পূজা ওবিসি সংরক্ষণ ব্যবহার করেছিলেন বটে, তবে শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কোনও বিষয় প্রকাশ্যে আসেনি। ২০০৭ সালে মেডিক্যাল কলেজে পড়ার সময়ে জাতিগত সংরক্ষণের সুবিধা নিতে ওবিসি নোম্যাডিক ট্রাইব-৩ ক্যাটেগরিতে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি, যা শুধুমাত্র বানজারি সম্প্রদায়ের জন্য সংরক্ষিত থাকে।
এর পর ইউপিএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে নতুন ফন্দি বার করেন পূজা। সংরক্ষণের সুবিধা পেতে ভুয়ো জাতিপরিচয়গত শংসাপত্রের পর এ বার ভুয়ো প্রতিবন্ধী শংসাপত্রের আবেদন করেন তিনি! দু’বার ইউপিএসসি পরীক্ষায় সেই ভুয়ো মেডিক্যাল সার্টিফিকেট জমাও দেন— এক বার দৃষ্টিশক্তির সমস্যার কথা উল্লেখ করে, আর এক বার মানসিক অসুস্থতার কথা উল্লেখ করে। এই দু’টি সার্টিফিকেটই ইস্যু হয়েছিল আহমেদনগর জেলা হাসপাতাল থেকে। একটি ২০১৯ সালে, অন্যটি ২০২১ সালে। আলাদা আলাদা কমিটি সেই শংসাপত্রগুলি মঞ্জুর করেছিল। এর পর ২০২২ সালের অগস্টে পুণের একটি হাসপাতালে ফের আংশিক প্রতিবন্ধকতার শংসাপত্রের জন্য আবেদন করেন পূজা। কিন্তু চিকিৎসকেরা তা নাকচ করে বলেন, “ওই শংসাপত্র দেওয়া সম্ভব নয়।” কিন্তু, ওই বছরই পিম্পরির আর একটি হাসপাতাল থেকে প্রতিবন্ধকতার শংসাপত্র জোগাড় করে নেন তিনি। যদিও নিয়োগের আগে ২০২২ সালে এমস-এ প্রতিবন্ধকতার পরীক্ষার বন্দোবস্ত করা হলেও ছ’বার নানা অজুহাতে পূজা তা এড়িয়ে গিয়েছেন বলে অভিযোগ। এত গলদ সত্ত্বেও তিনি কী ভাবে চাকরি পেলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
কয়েক সপ্তাহ আগে মহারাষ্ট্রের পুণের সহকারী জেলাশাসক হিসাবে নিযুক্ত পূজার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজের ব্যক্তিগত ব্যবহারের বিদেশি গাড়িতে ভিআইপি স্টিকার, নেতা-মন্ত্রীদের মতো লাল-নীল আলো এবং মহারাষ্ট্র সরকারের বোর্ড ব্যবহারের অভিযোগ ওঠে। এ ছাড়া ছিল অতিরিক্ত জেলাশাসকের কক্ষ ‘দখল’ করা এবং জেলাশাসকের সহকারীর কাছে বেআইনি দাবিদাওয়া পেশ করে সেই দাবি পূরণের জন্য হুমকি দেওয়ার অভিযোগও। এর পরই কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে একে একে পূজার নানান কীর্তি প্রকাশ পেতে থাকে। অবশ্য কীর্তিকলাপে তাঁর বাবা-মাও কিছু কম যান না! পূজার পরিবার মহারাষ্ট্রের আহমেদনগর জেলার পাথারদি এলাকার বাসিন্দা। পূজার বাবা দিলীপরাও খেড়করও এক জন প্রশাসনিক কর্তা ছিলেন। মহারাষ্ট্র দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের উচ্চপদস্থ কর্মচারী ছিলেন তিনি। পূজার দাদুও ছিলেন এক জন আমলা। অবসরের পর রাজনীতিতে যোগ দেন দিলীপরাও। পূজার মা মনোরমা অবশ্য অনেক আগে থেকেই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি ভালগাঁও গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান। এত সব বিতর্কের মধ্যে আবার প্রকাশ্যে এসেছে গ্রামে বচসার সময় মনোরমার বন্দুক উঁচিয়ে ধমকানোর ভিডিয়ো (আনন্দবাজার অনলাইন অবশ্য সেই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি)। এর পর গ্রেফতার করা হয়েছে তাঁকে।
প্রসঙ্গত, পূজাকে নিয়ে বিতর্কের মধ্যেই প্রকাশ্যে আসে আইএএস অফিসার অভিষেক সিংহের নামও। ২০১১ ব্যাচের এই অফিসার ২০২৩-এ চাকরি থেকে ইস্তফা দেন। অভিযোগ, তিনিও ভুয়ো শংসাপত্র ব্যবহার করে সংরক্ষণের সুযোগ নিয়েছিলেন। আর এতেই প্রশ্ন উঠেছে যে, ইউপিএসসি-র মতো গুরুত্বপূর্ণ নিয়োগে কী ভাবে ভুয়ো শংসাপত্র ব্যবহার করা সম্ভব! কাদের গাফিলতির জন্য পূজা-অভিষেকরা নিয়োগ পেলেন? নিট-সহ একাধিক পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগে এমনিতেই কেন্দ্র অস্বস্তিতে। এ বার ইউপিএসসি ঘিরেও উঠছে প্রশ্ন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy