গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
‘‘মাত্র কয়েক ঘণ্টার নোটিসে দেশের ৫৪৩টা লোকসভা কেন্দ্রে দলীয় কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ফেলতে পারতেন উনি। ওই রকম ক্ষমতা আর কার ছিল!’’ এই ‘উনি’টি হলেন প্রণব মুখেপাধ্যায়। আর বক্তা প্রয়াত কংগ্রেস নেতা প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির এক ঘনিষ্ঠ, যিনি এখন বিজেপি-তে। এ হেন প্রণব মুখোপাধ্যায়ের ২৪ ঘণ্টা কাটতে চলল নাগপুরে। মহারাষ্ট্রের বা নাগপুরের কোনও কংগ্রেস নেতা গভর্নর কোঠির (রাজভবন) দিকে পা বাড়ালেন না। কেউ দেখাই করলেন না প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে।
নাগপুর বিমানবন্দরে বুধবার প্রণব মুখোপাধ্যায়কে স্বাগত জানিয়েছে আরএসএস। তাদের আমন্ত্রণেই নাগপুরে এসেছেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি। তাই এই সৌজন্যে অস্বাভাকিতার কিছু দেখছেন না কেউই। কিন্তু স্থানীয় রাজনৈতিক শিবিরের কাছে বেশ অস্বাভাবিক ঠেকছে কংগ্রেসের মেজাজ। যে কর্মসূচিতেই প্রণববাবু নাগপুর সফর করুন না কেন, তাঁর মতো বর্ষীয়ান নেতার সঙ্গে এক বারও দেখাই করবেন না স্থানীয় কংগ্রেস নেতারা, এটা দৃষ্টিকটূ ঠেকছে কারও কারও কাছে।
রাজনৈতিক সাক্ষাৎ না-ই বা হল, ব্যক্তিগত সম্পর্কের খাতিরে অন্তত প্রণববাবুর সঙ্গে দেখা করতে যাওয়া উচিত ছিল মহারাষ্ট্রের কংগ্রেস নেতাদের— ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় এ কথা বলছেন নাগপুরের সঙ্ঘ ঘনিষ্ঠ লোকজন। ‘‘পরস্পর বিরোধী দুটো দলের লোকজনের মধ্যেও তো সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়। সেখানে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মতো আজীবন কংগ্রেসি ব্যক্তিত্ব নাগপুরে এলেন, অথচ কংগ্রেসের কেউ তাঁর সঙ্গে দেখা করলেন না, এতে কি কংগ্রেসের মুখ উজ্জ্বল হল? তাদের রাজনৈতিক সঙ্কীর্ণতাই আরও একবার স্পষ্ট হয়ে গেল না কি?’’ রেশম বাগ ময়দানে দাঁড়িয়ে এক প্রবীণ স্বয়ংসেবক বললেন এ কথা। ঠোঁটের কোনে মুচকি হাসি তাঁর। কেমন ফাঁপরে পড়েছে কংগ্রেস বুঝে দেখুন, একেবারে শাঁখের করাত— হাসির ইঙ্গিতে যেন এমনই কোনও বাক্য।
আরও পড়ুন: জলে টইটম্বুর প্রণবের মাঠ, খরার বিদর্ভ বলছে ‘আশীর্বাদ’
প্রণবের সঙ্ঘ সফরে কংগ্রেসের এই অস্বস্তি নিয়ে সঙ্ঘের লোকজন মুখ যা-ই বলুন, ভিতরে ভিতরে কিন্তু তাঁরা বেজায় খুশি। প্রণব মুখোপাধ্যায় সঙ্ঘের মঞ্চ থেকে কী বার্তা আজ দেবেন, তা নিয়ে খুব একটা ভাবিত নয় সঙ্ঘ। সমারোপের মঞ্চে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের উপস্থিতিটাই সবচেয়ে বড় বিষয় সঙ্ঘের কাছে। কংগ্রেস চিরকাল আরএসএস-কে রাজনৈতিক ভাবে ‘অস্পৃশ্য’ করে রাখার যে চেষ্টা চালিয়ে এসেছে, প্রণববাবুর উপস্থিতিতে সে ‘অস্পৃশ্যতা’ ধূলিসাৎ হয়ে যাবে, মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরদের একাংশও। সে কথা মাথায় রেখেই বেজায় খুশি মোহন ভাবগবতরা।
বুধবার রাতেই কিন্তু মোহন ভাগবত দেখা করেছেন প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে। গভর্নর কোঠিতে গিয়ে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ভাগবত নৈশভোজ সেরেছেন বলেও খবর। সরসঙ্ঘচালক যে বুধবার রাতেই প্রণবের সঙ্গে নৈশভোজ করবেন, তা কিন্তু আগে জানা ছিল না। আজ বিকেলের চা-টা প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি সরসঙ্ঘচালকের সঙ্গেই খাবেন। নৈশভোজও হবে একসঙ্গেই।
আরও পড়ুন: ‘ওদের কোনও সুযোগ দিয়ো না বাবা’
সঙ্ঘের সঙ্গে প্রণবের ঘনিষ্ঠতার ছবি যত উজ্জ্বল হচ্ছে, কংগ্রেসের অস্বস্তি কিন্তু ততই বাড়ছে। জয়রাম রমেশ, সি কে জাফর শরিফ, রমেশ চেন্নিথালা, পি চিদম্বরম, সলমন খুরশিদের মতো নেতারা আগেই মুখ খুলেছিলেন বিষয়টি নিয়ে। বুধবার রাতে মুখে খোলেন খোদ প্রণব-কণ্যা শর্মিষ্ঠাও। দীর্ঘ টুইটে তিনি বাবার এই পদক্ষেপের সমালোচনাই করেন।
পরে সামনে এসেছে আরও তাৎপর্যপূর্ণ একটি টুইট। সেটি সনিয়া গাঁধীর রাজনৈতিক সচিব আহমেদ পটেলের। কী লিখেছেন পটেল? তিনি লিখেছেন, ‘‘প্রণবদার কাছ থেকে আমি এটা আশা করিনি।’’
আহমেদ পটেলের এই টুইটকে শুধু আহমেদ পটেলের বক্তব্য হিসেবে কিন্তু দেখছে না রাজনৈতিক শিবির। গাঁধী পরিবারের তথা সনিয়া গাঁধীর কতটা ঘনিষ্ঠ পটেল, তা কারও অজানা নয়। সনিয়া বা রাহুল সরাসরি প্রণবের নাগপুর সফর নিয়ে এখনও কোনও মন্তব্য করেননি। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে আহমেদ পটেল মোক্ষম টুইটটি করলেন। আসলে সনিয়াই বার্তা দিলেন, প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কাছ থেকে এটা সনিয়া আশা করেননি, আহমেদ পটেলের টুইটে সেই বার্তাই প্রচ্ছন্ন রইল— বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy