লন্ডভন্ড: কানপুরের কাছে লাইনচ্যুত হাওড়া-দিল্লি পূর্বা এক্সপ্রেস। পিটিআই
যাত্রীদের বেশির ভাগই তখন ঘুমে আচ্ছন্ন। হাওড়া থেকে নয়াদিল্লিগামী পূর্বা এক্সপ্রেস রুমা স্টেশন পেরিয়ে দুরন্ত বেগে ছুটছে। আচমকা বিকট শব্দ, তীব্র ঝাঁকুনিতে কেঁপে উঠল রেলগাড়ি। যাত্রীরা ছিটকে পড়লেন এ দিক-সে দিক।
শুক্রবার রাতে পূর্বা এক্সপ্রেসের বেলাইন হওয়ার ঘটনাকে এ ভাবেই ব্যক্ত করেছেন যাত্রীদের অনেকে।
রেল জানিয়েছে, শুক্রবার রাত ১টা নাগাদ কানপুর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে পূর্বা-র ৫টি ‘থ্রি-এসি’, দুটি ‘টু-এসি’, ‘একটি প্রথম শ্রেণির কামরা’, প্যান্ট্রি কার এবং একটি লাগেজ ভ্যান-সহ মোট ১২টি কামরা লাইনচ্যুত হয়। তার মধ্যে ৪টি কামরা এক পাশে কাত হয়ে গিয়েছিল। আহত হয়েছেন ১৪ জন যাত্রী। তাঁদের মধ্যে ১১ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হলেও ৩ জনের অবস্থা গুরুতর।
বছর দুয়েক ধরেই দুর্ঘটনা কমাতে রেল লাইন রক্ষণাবেক্ষণের প্রশ্নে সরকারি তৎপরতার কথা ঘটা করে প্রচার করা হয়েছে। কিন্ত তা আদতে কতটা হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন ছিল। ভোট শুরু হওয়ার পরে ফের দুর্ঘটনা সেই প্রশ্নকেই জোরালো করেছে। রেলের খবর, গত ফেব্রুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত তিনটি ট্রেন বেলাইন হয়েছে। ৩ ফেব্রুয়ারি বিহারের শাদাই বুজুর্গ স্টেশনে সীমাঞ্চল এক্সপ্রেসের ১১টি কামরা লাইনচ্যুত হয়ে ৭ জন যাত্রী মারা যান। ৩১ মার্চ তাপ্তী-গঙ্গা এক্সপ্রেস গৌতমস্থানের কাছে লাইনচ্যুত হলে ৪ জন আহত হন।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
রেলের খবর, পূর্বার দুর্ঘটনায় আহতদের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের ৪ জন রয়েছেন। তাঁদের সাধনা রায় এবং জয়ন্ত কুমার মাইতি দুর্গাপুর থেকে ‘বি-১’ কামরায় উঠেছিলেন এবং হাওড়া থেকে বাসন্তী দাস নামে এক বৃদ্ধা ‘বি ৩’ কামরা এবং সন্তোষ কুমার নামে এক যুবক ‘এস ৯’ কামরায় উঠেছিলেন। বাসন্তীদেবীর আঘাত গুরুতর বলে রেলের খবর।
রেলের দাবি, ‘এলএইচবি’ কোচ থাকায় এ বার বড় ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো গিয়েছে। ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে পূর্বায় এলএইচবি কোচ চালু হয়েছিল।
প্রশাসনের খবর, প্রথমে উদ্ধার কাজ শুরু করেন স্থানীয়েরা। পরে পৌঁছয় কানপুর জেলা প্রশাসন এবং জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীও। আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। দু’জন হ্যালেট হাসপাতালে এবং এক জন কাঁসিরাম হাসপাতালে ভর্তি। উদ্ধারকাজে স্থানীয়দের ভূমিকার প্রশংসা করেছেন জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী।
রেলের মুখপাত্র স্মিতা বৎস শর্মার দাবি, ‘‘দুর্ঘটনার পরেই রিলিফ ট্রেন এবং জরুরি চিকিৎসা পরিষেবা পাঠানো হয়েছিল।’’ রেল সূত্রের খবর, অক্ষত যাত্রীদের বাসে চাপিয়ে কানপুর সেন্ট্রাল স্টেশনে আনা হয়েছিল। সেখান থেকে বিশেষ ট্রেনে তাঁদের শনিবার দুপুরেই দিল্লি পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
রেল জানিয়েছে, দুর্ঘটনার জেরে ১৬টি ট্রেন বাতিল হয়েছে। ২৮টি ট্রেনকে ঘুরপথে চালানো হয়েছে। হাওড়া এবং শিয়ালদহের বেশ কয়েকটি দূরপাল্লার ট্রেন বিলম্বে ছেড়েছে। শনিবার বিকেলের দিল্লি থেকে হাওড়ামুখী পূর্বা এক্সপ্রেস বাতিল করা হয়েছে।
রেলের খবর, এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে উত্তর-মধ্য রেল। তদন্তে নেতৃত্ব দেবেন উত্তর-মধ্য রেলের সেফটি কমিশনার এ কে জৈন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy