বায়ুদূষণ। ফাইল চিত্র।
বায়ুদূষণ রুখতে দিল্লিতে সব ধরনের বাজি ফাটানো বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে অরবিন্দ কেজরীওয়ালের সরকার। ওই সিদ্ধান্ত হিন্দু-বিরোধী বলে বিজেপি প্রচারে নেমে পড়ায় গুজরাতে ভোটের আগে অস্বস্তিতে আম আদমি পার্টি। যদিও ওই সিদ্ধান্তের পরেও দীপাবলির সকালে দিল্লির আকাশে দূষণের স্তর বিপদসীমার বেশ উপরে রয়েছে বলেই জানিয়েছে পরিবেশ মন্ত্রক।
ফি বছর শীত পড়তেই দিল্লির আকাশ ঢেকে যায় দূষণের চাদরে। মূলত এ সময়ে বায়ুপ্রবাহ কম থাকায় দিল্লি ও রাজধানী সংলগ্ন নয়ডা, গাজিয়াবাদ, ফরিদাবাদ, গুরুগ্রামের বাসিন্দাদের প্রবল মাত্রায় বায়ুদূষণের শিকার হতে হয়। এরই মধ্যে দীপাবলি উপলক্ষে বাজি ফাটানোর ঘটনা দূষণ পরিস্থিতি আরও ঘোরালো করে তোলে। ফি বছরের হওয়া দূষণ এড়াতে এ বার দিল্লিতে সব ধরনের বাজি ফাটানো বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দিল্লির সরকার। দিল্লির আপ সরকার হিন্দু বিরোধী এই অভিযোগে ওই সিদ্ধান্তের সমালোচনায় এক দিকে যেমন বিজেপি সরব হয়েছে, তেমনই ওই সিদ্ধান্ত ব্যাবসায়িক স্বার্থ-বিরোধী ও অবৈজ্ঞানিক বলে মন্তব্য করে মুখ খুলেছে সঙ্ঘের শাখা সংগঠন স্বদেশি জাগরণ মঞ্চ। বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, দূষণের মূল কারণ হল দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানায় খেতের আগাছা পোড়ানো। সেই সমস্যা মেটাতে ব্যর্থ কেজরীওয়াল সরকার। তাই মূল সমস্যা থেকে মানুষের নজর ঘোরাতে বাজি ফাটানোর উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, দূষণ সমস্যার যে বাজিগুলি দায়ী সেগুলি চিনে তৈরি হয়। ওই বাজিগুলিতে উপস্থিত পটাসিয়াম নাইট্রেট ও সালফার বাতাসে মিশে দূষণ সৃষ্টি করে। কিন্তু এ দেশে যে সবুজ বাজি বানানো হয়ে থাকে, সেগুলি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর নয়। কিন্তু দিল্লি সরকার বাছবিচার না করে সব বাজির উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করে ব্যবসায়ী ও শ্রমিক শ্রেণির স্বার্থে আঘাত করেছে। ওই সিদ্ধান্তের ফলে কয়েক লক্ষ কারিগরের রুটি-রুজিতে হাত পড়বে বলে মনে করেছে সঙ্ঘ ঘনিষ্ঠ ওই সংগঠন।
অন্য দিকে দিল্লি সরকারের ওই সিদ্ধান্ত হিন্দু ভাবাবেগের বিরোধী, ওই অভিযোগে সরব হয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। বিজেপির দিল্লির সাংসদ মনোজ তিওয়ারি বলেন, “গত কয়েক বছরে কেজরীওয়াল সরকারকে একাধিক হিন্দু বিরোধী পদক্ষেপ নিতে দেখা গিয়েছে। যার সর্বশেষটি হল দীপাবলিতে বাজি ফাটানো বন্ধ রাখা।” দিল্লি সরকার হিন্দু-বিরোধী বলে রাজধানীতে প্রচারের পাশাপাশি বিষয়টি গুজরাত নির্বাচনেও প্রচারের অন্যতম বিষয় হিসাবে তুলে ধরার কৌশল নিয়েছে দল। গুজরাতে বিধানসভা নির্বাচনে এই প্রচার প্রভাব ফেলতে পারে মেনে নিচ্ছেন আপ নেতারা। সাফাইয়ে দিল্লির পরিবেশমন্ত্রী গোপাল রাই বলেন, “যাদের ইচ্ছা তারা বাজি নিয়ে রাজনীতি করুক। আমাদের লক্ষ্য হল মানুষের জীবন বাঁচানো।” কেজরী সরকার জানিয়েছে, দিল্লিতে বাজি ফাটাতে গিয়ে যদি কেউ গ্রেফতার হয়, তা হলে তাঁকে ছয় মাসের জেল ও দু’শো টাকা জরিমানা করা হবে। তা ছাড়া কোনও ব্যক্তি যদি বাজি বিক্রি করেন সে ক্ষেত্রে তাঁকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে ও তাঁর তিন বছরের জেল হবে।
কেজরী সরকারের বাজি বন্ধের সিদ্ধান্তের সমর্থনে অবশ্য এগিয়ে এসেছে সুপ্রিম কোর্ট। দিল্লি সরকারের সিদ্ধান্তের উপরে স্থগিতাদেশ জারি করার আর্জি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন বিজেপি সাংসদ মনোজ তিওয়ারি। শীর্ষ আদালত ওই আবেদন খারিজ করে জানিয়েছে, “মানুষকে বরং দূষণমুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নিতে দেওয়া হোক। আর বাজির টাকা মিষ্টির পিছনে খরচ করা হোক।” কিন্তু সমস্যা হল দিল্লি সরকারের সিদ্ধান্তের পরেও দিল্লির আকাশ গত কয়েক দিনের মতোই ছিল মুখ ভার। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাজি থেকে উৎপন্ন ধোঁয়া একমাত্র দূষণের কারণ নয়। রাজধানী ও সংলগ্ন এলাকায় নির্মাণের কাজ, খেতের আগাছা পোড়ানো, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি বায়ুদূষণ করে থাকে। বিশেষ করে এই সময়ে রাজস্থান, হরিয়ানা, পঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশে শীতের ফসলের আগে জমি তৈরি করতে খেতের আগাছা জ্বালিয়ে থাকেন কৃষকেরা, যা এই এলাকার দূষণের অন্যতম কারণ। তা ছাড়া এই সময়ে দিল্লির উপরে বায়ুপ্রবাহ কার্যত বন্ধ থাকায় ওই ধোঁয়া দিল্লির আকাশে স্থির হয়ে ভেসে থাকে। ফলে বায়ুপ্রবাগের গতিতে উন্নতি হওয়া বা বৃষ্টিপাত না হওয়া পর্যন্ত রাজধানী এলাকার আকাশে দূষণের ওই মোটা চাদর থাকবেই। দিল্লির বায়ুর মান বিপদসীমা পেরিয়ে গেলেও, মুখ্যমন্ত্রী কেজরীও আজ টুইট করে বলেন, “কিছু দিন আগে পর্যন্ত দিল্লি বায়ুদূষণের প্রশ্নে বিশ্বে এক নম্বরে ছিল। কিন্তু এখন আর নেই। তবে দিল্লিকে সম্পূর্ণ দূষণমুক্ত করার প্রশ্নে আমাদের আরও অনেক পথ চলার বাকি রয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy