প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।
লালকৃষ্ণ আডবাণী থেকে বিনয় কাটিয়ার। মুরলীমনোহর জোশী থেকে উমা ভারতী। আজ থেকে তিন দশক আগে মন্দির আন্দোলনের এই শীর্ষ ব্যক্তিত্বেরা রামমন্দির উদ্বোধনের এক দিন আগে কার্যত লোকচক্ষুর আড়ালে। তাঁদের দূরে ঠেলে দেওয়া নিয়ে গেরুয়া শিবিরে প্রশ্ন ওঠায় শেষ মুহূর্তে নিমন্ত্রণ পাঠিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করা হয় বটে, কিন্তু বিতর্ক এড়ানো যাচ্ছে কোথায়? যাবতীয় কৃতিত্ব কেড়ে নেওয়ার চেষ্টায় এঁদের প্রান্তিক করে দেওয়া কি যুক্তিসঙ্গত, এই প্রশ্ন উঠছেই।
রাত পোহালেই রামমন্দিরের উদ্বোধন ও রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠা। কিন্তু গোটা অযোধ্যায় তন্নতন্ন করেও আডবাণীর কোনও ছবি খুঁজে পেলাম না। অথচ অবিভক্ত ভারতের করাচিতে জন্ম নেওয়া লালকৃষ্ণ আডবাণী সেই ব্যক্তি, যাঁর হাত ধরে এ দেশ রথযাত্রা ও রামমন্দির আন্দোলনের সাক্ষী হয়েছিল। রামমন্দির আন্দোলন সূচনার অন্যতম প্রধান কারিগর এবং পরে বৃহত্তর রামমন্দির আন্দোলনের সূত্রধর সেই আডবাণী আগামিকাল আসবেন কি না, জানেন না দায়িত্বপ্রাপ্ত গেরুয়া শিবিরের নেতারা। বয়সের যুক্তি দেখিয়ে আডবাণীকে অনেক আগেই মার্গদর্শকমণ্ডলীতে পাঠিয়ে দিয়ে গুরুত্বহীন করে দিয়েছেন বিজেপির বর্তমান ক্ষমতাসীন নেতৃত্ব। আর মন্দির উদ্বোধনে আমন্ত্রণ জানানোর ক্ষেত্রে বয়স ও ভিড়ের যুক্তি দেখিয়ে আডবাণীকে ঘরেই থাকার পরামর্শ দেন মন্দির কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে গেরুয়া শিবিরের মধ্যে তীব্র মতপার্থক্য তৈরি হলে তার পরে অবশ্য আডবাণীকে আমন্ত্রণ জানিয়ে আসে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। আডবাণীর পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শারীরিক অবস্থা ঠিক থাকলে অবশ্যই মন্দির উদ্বোধনে যাবেন আডবাণী। কিন্তু রবিবার রাত পর্যন্ত তাঁর অযোধ্যায় পা দেওয়ার কোনও খবর নেই।
আডবাণীর মতোই নব্বইয়ের দশকে রামমন্দির আন্দোলনের অন্যতম মুখ ছিলেন মুরলীমনোহর জোশী। সঙ্ঘ-ঘনিষ্ঠ ওই নেতাও আডবাণীর মতোই দক্ষ সংগঠক ছিলেন। তাঁকেও বয়সের কারণ দেখিয়ে প্রথমে আমন্ত্রণপত্র না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মন্দির কর্তৃপক্ষ। শেষে মত পরিবর্তন করে তা পাঠানো হয়। সদ্য নব্বইয়ে পা দেওয়া জোশী আগামিকাল আসবেন কি না, সে বিষয়ে স্পষ্ট কিছু জানাতে পারলেন না মন্দির কর্তৃপক্ষ। তবে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের এক কর্মকর্তার কথায়, যাঁদের জন্য ওই আন্দোলন দানা বেঁধেছিল, যাঁরা আন্দোলনকে গতি দিয়েছিলেন, তাঁদের গুরুত্ব না দেওয়া বড় চোখে লাগছে। আন্দোলনের পুরোধা হিসাবে ওই ব্যক্তিদের যোগ্য সম্মান প্রাপ্য ছিল।
অযোধ্যায় থেকেও লোকচক্ষুর অন্তরালে বসে রয়েছেন সে সময়কার আর এক হিন্দুত্ববাদী নেতা বিনয় কাটিয়ার। নব্বইয়ের দশকে রামমন্দির আন্দোলন ও পরবর্তী সময়ে বাবরি মসজিদ ধ্বংসে যে ক’জন সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তার মধ্যে অগ্রণী ছিলেন বিশ্ব হিন্দু পরিষদের বিনয়। পরবর্তী সময়ে বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে মনোমালিন্যের কারণে গেরুয়া শিবিরে একঘরে হয়ে পড়েন তিনি। বিক্ষুব্ধ হলেও, বিনয় আগামিকাল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন বলে আশা করছেন ভিএইচপি নেতৃত্ব। আজ বিনয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে, তিনি কথা বলবেন না বলে জানানো হয়।
মহিলা নেতৃত্বের মধ্যে সে সময়ে পুরোভাগে ছিলেন উমা ভারতী ও সাধ্বী ঋতম্ভরা। এক সময়ে সক্রিয় রাজনীতিতে থাকলেও, নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের যুগে আপাতত আর দেখা যায় না তাঁদের। আমন্ত্রণ পেয়ে গত কালই বৃন্দাবন থেকে ব্রজভূমির মাটি ও যমুনার জল পুজোর কাজে ব্যবহারের জন্য নিয়ে এসেছেন সাধ্বী। আগামিকাল মন্দির উদ্বোধনে উপস্থিত থাকছেন বলেই জানা গিয়েছে। আমন্ত্রণ পেয়েছেন উমা ভারতীও। উমা ১৭ জানুয়ারি মধ্যপ্রদেশ থেকে সড়ক পথে রওনা হয়ে ১৮ জানুয়ারি অযোধ্যা এসে পৌঁছেছেন। কিন্তু অযোধ্যায় পা দেওয়ার পর থেকে সেই যে ঘরের দরজা বন্ধ করেছেন, তার পর আর খোলেননি। নিজের এক্স হ্যান্ডলে জানিয়েছেন, অযোধ্যা আসার পর থেকে তাঁর এমন জ্বর হয়েছে, কিছুতেই ওষুধে সারছে না। তাই তিনি বিশ্রাম নিচ্ছেন। কারও সঙ্গে কথা বলতে না পারার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন। উমা শিবির থেকেও জানানো হয়েছে, আগামিকাল শরীর সুস্থ থাকলে তিনি অবশ্যই মন্দির উদ্বোধনে যাবেন। বার্তা স্পষ্ট, তাঁকে প্রাপ্য সম্মান না দেওয়াটা আদৌ ভাল ভাবে নেননি উমা।
‘অসম্পূর্ণ মন্দিরে’ থাকা বিগ্রহে প্রাণপ্রতিষ্ঠা নিয়ে দু’দিন আগেই প্রশ্ন তুলেছিলেন যিনি, উত্তরাখণ্ডের জ্যোতিষপীঠের সেই শঙ্করাচার্য অভিমুক্তেশ্বরানন্দ এ বার বলেছেন, তিনি মোদীর গুণগ্রাহী। কিন্তু বক্তব্য থেকে সরছেন না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy