বালেশ্বরের বাহানগায় করমণ্ডল এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনাস্থলে মোদী এবং মমতা। পি টি আই
ব্যবধান মোটামুটি সাড়ে ৩ ঘণ্টার। ওড়িশার বালেশ্বরে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনাস্থলে শনিবার গেলেন দু’জনেই। দু’জনেই হাসপাতালে গিয়ে দেখা করলেন আহতদের সঙ্গে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সাক্ষাৎ হল না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ দুর্ঘটনাস্থলের অদূরের বাহানগা হাইস্কুল মাঠের অস্থায়ী হেলিপ্যাডে নামে মমতার কপ্টার। সেখান থেকে গাড়িতে তিনি পৌঁছন বাহানগা বাজার স্টেশন থেকে ২০০ মিটার দূরের দুর্ঘটনাস্থলে। রেলমন্ত্রী অশ্বিনীর বৈষ্ণবের সঙ্গে দেখা হয় প্রাক্তন কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী মমতার। অশ্বিনীর পাশে দাঁড়িয়েই মমতা বলেন, ‘‘রেলের মনে হয় সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। আরও যত্নশীল হওয়া প্রয়োজন।’’
মমতার অনেক আগেই শনিবার সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ অশ্বিনী পৌঁছে গিয়েছিলেন বাহানগায়। তার কিছু ক্ষণ পর এসে পৌঁছন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক। দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পরে তাঁরা একসঙ্গেই যান বালেশ্বরে। সেখানকার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহতদের সঙ্গে দেখা করেন। এর পরে রেলমন্ত্রী আবার ফিরে আসেন দুর্ঘটনাস্থলে। কিন্তু নবীন প্রশাসনিক বৈঠকে অংশ নিতে থেকে যান। তার পর বালেশ্বর থেকে সোরো হাসপাতালে আহতদের দেখতে যান ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী।
বাহানগা বাজারের দুর্ঘটনাস্থল থেকে গাড়িতে সোরো হাসপাতালে যান মমতাও। কিন্তু তিনি পৌঁছনোর কিছু ক্ষণ আগেই সেখান থেকে চলে গিয়েছিলেন নবীন। সোরো হাসপাতাল থেকে বাহানগা হাইস্কুল মাঠের অস্থায়ী হেলিপ্যাডে মমতা ফেরেন সওয়া ২টোয়। এর কিছু ক্ষণের মধ্যেই কপ্টারে কলকাতা রওনা হন তিনি। আর তার ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী মোদীর বিমান অবতরণ করে পশ্চিম মেদিনীপুরের কলাইকুন্ডায়। ভারতীয় বায়ুসেনার ঘাঁটিতে।
ঘটনাচক্রে, প্রায় দু’বছর আগে, ২০২১ সালের ২৮ মে এমনই এক বিপর্যয়ের মুহূর্তে কলাইকুন্ডার এই বায়ুসেনা ঘাঁটিতে সাক্ষাৎ হয়েছিল মোদী-মমতার। সে দিন ঘূর্ণিঝড় ইয়াস বিধ্বস্ত দিঘায় যাওয়ার তাড়া থাকায় প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে হাজির থাকেননি মুখ্যমন্ত্রী। বাংলার ক্ষয়ক্ষতির নথিপত্র জমা দিয়ে দ্রুত কলাইকুন্ডা ছেড়েছিলেন। এর পর ইয়াস-এর ক্ষয়ক্ষতি পূরণের ‘দেনাপাওনা’ নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর অভিযোগ ছিল— পূর্ব মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনাকে বঞ্চিত করে বাড়তি কেন্দ্রীয় অনুদান দেওয়া হয়েছে ওড়িশার বালেশ্বরকে।
শনিবার বিকেল ৪টে নাগাদ কলকাতায় ফিরে আসে মমতার কপ্টার। প্রায় সেই সময়ই কলাইকুন্ডা থেকে বায়ুসেনার কপ্টারে বাহানগায় পৌঁছন মোদী। দুর্ঘটনাস্থল ঘুরে দেখার পাশাপাশি পরিদর্শন করেন উদ্ধারের কাজ। সেখান থেকে কপ্টারে বালেশ্বেরেও যান তিনি। সেখানকার হাসপাতালে দেখা করেন আহতদের সঙ্গে। এর পর সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, ‘‘অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। আহতদের চিকিৎসায় কোনও খামতি রাখবে না সরকার। দুর্ঘটনার কারণ জানতে পূর্ণাঙ্গ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি। দোষীদের কঠোর সাজা দেওয়া হবে। কেউ ছাড় পাবে না।’’
২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে জিতে মোদী দ্বিতীয় বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রায় ৪ মাস পরে, সেপ্টেম্বর মাসে দিল্লিতে গিয়ে হলুদ গোলাপের তোড়া নিয়ে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন মমতা। প্রধানমন্ত্রীকে বাংলায় আসার আমন্ত্রণও জানিয়েছিলেন। কিন্তু ওই ঘটনার বছর দুয়েক পর নীলবাড়ির লড়াইয়ের সময় পরস্পরের প্রতি ধারাবাহিক আক্রমণ করতে দেখা গিয়েছিল দুই নেতা-নেত্রীকে। তৃণমূল আবার রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর, গত বছর মে মাসেই বিচারবিভাগ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীদের সম্মেলনের ফাঁকে মোদীর সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন মমতা। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া নৈশভোজে যাননি তিনি। গত সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে আয়োজিত নীতি আয়োগের বৈঠকেও যাননি মমতা।
শনিবার বালেশ্বরে অবশ্য ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েকের সঙ্গেও দেখা হয়নি মোদীর। মমতা-নবীন সাক্ষাৎও হয়নি। একমাত্র রেলমন্ত্রী অশ্বিনীর সঙ্গেই আলাদা আলাদা সময়ে দেখা হয়েছে তিন জনেরই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy