Advertisement
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Kanwar Yatra

মাংসের দোকান খোলা রাখা হোক, কাঁওয়ার যাত্রা নিয়ে নতুন পিটিশন দাখিল হল হাই কোর্টে

জাতীয় লোকতান্ত্রিক দলের ওই পিটিশনে বলা হয়েছে, এই নির্দেশ মাংস বিক্রেতাদের জীবিকাকে প্রভাবিত করবে। হস্তক্ষেপ করবে ব্যক্তিস্বাধীনতা এবং খাদ্যাভ্যাসের মতো মৌলিক অধিকারেও।

কাঁওয়ার যাত্রার দৃশ্য।

কাঁওয়ার যাত্রার দৃশ্য। — ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০২৪ ১৭:৪৩
Share: Save:

কাঁওয়ার যাত্রার পথে অবস্থিত সমস্ত মাংসের দোকান বন্ধ রাখার নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বুধবার এলাহাবাদ হাই কোর্টে একটি পিটিশন দাখিল করেছে জাতীয় লোকতান্ত্রিক দল।

এতে বলা হয়েছে, কাঁওয়ার যাত্রা সংক্রান্ত নির্দেশ শুধুমাত্র সংবিধানের ১৯(১)(জি) অনুচ্ছেদে বর্ণিত যে কোনও পেশা বা ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার মৌলিক স্বাধীনতাকেই খর্ব করে না, বরং ২১ নম্বর অনুচ্ছেদে উল্লিখিত মর্যাদা ও স্বাধীনতার সঙ্গে বাঁচার মৌলিক অধিকারকেও লঙ্ঘন করে।

আবেদনকারীদের বক্তব্য, পবিত্র কাঁওয়ার যাত্রা বহু প্রাচীন একটি প্রথা। প্রতি বছরই শ্রাবণ মাসের শুরুতে এই যাত্রায় পায়ে হেঁটে জল নিয়ে শৈবতীর্থগুলির উদ্দেশে পাড়ি দেন তীর্থযাত্রীরা। এত কাল কখনোই কাঁওয়ার যাত্রার সময় মাংসের দোকান বন্ধ রাখার চল ছিল না। খাবারের দোকানগুলির বাইরে বাধ্যতামূলক ভাবে দোকানিদের নাম-পরিচয়ও লিখে রাখতে হত না। বিরোধীরা বলছেন, বেছে বেছে সংখ্যালঘুদের চিহ্নিত করতেই এই পন্থা নিয়েছে উত্তরপ্রদেশ ও উত্তরাখণ্ড সরকার।

জাতীয় লোকতান্ত্রিক দলের আবেদনে আরও বলা হয়েছে, ওই নির্দেশ মাংস বিক্রেতাদের জীবিকাকে প্রভাবিত করবে। এ ছাড়া এই ধরণের সিদ্ধান্ত ব্যক্তিস্বাধীনতা এবং খাদ্যাভ্যাসের মৌলিক অধিকারকেও খর্ব করে। এক মাস ধরে সমস্ত মাংসের দোকান বন্ধ থাকলে যাঁদের চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে নিয়মিত আমিষ খাবার খেতে হয়, তাঁরাও পড়বেন বিপাকে।

বিহার, উত্তরপ্রদেশ এবং উত্তরাখণ্ডে গত ২২ জুলাই থেকে শুরু হয়েছে কাঁওয়ার যাত্রা। তার আগে থেকেই পুণ্যার্থীদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারগুলির তরফে নানা পদক্ষেপ করা হয়েছে। কাঁওয়ার যাত্রার পথের দু’পাশে খাবারের দোকান নিয়ে বিধি-নিষেধ জারি করা হয়েছে। সেই বৈষম্যমূলক নির্দেশ নিয়ে বিতর্কের মাঝে জেলা প্রশাসনের যুক্তি, তীর্থযাত্রীদের সুবিধার জন্য এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এলাকার পুলিশ সুপারের দাবি, পুণ্যার্থীদের যাতে সংশ্লিষ্ট হোটেল বা ধাবা নিয়ে কোনও সংশয় না থাকে, সে জন্যই এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সংবাদ সংস্থার একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, সমগ্র কাঁওয়ার যাত্রা পথে মোট ৯৬টি মাংসের দোকান রয়েছে। আর মাংসের দোকানগুলির বেশির ভাগই চালান মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা। তাই বারাণসী পুরসভার ওই নির্দেশ প্রকাশ্যে আসতেই শুরু হয়েছে বিতর্ক। এনডিএ-র অন্দর থেকেও নির্দেশ পুনর্বিবেচনার দাবি উঠেছে। বিরোধিতা করেছেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রও। তাঁদের মতে, এই নির্দেশের ফলে সাম্প্রদায়িক অশান্তির সম্ভাবনা বৃদ্ধি পেতে পারে।

প্রসঙ্গত, সোমবারই কাঁওয়ার যাত্রা নিয়ে উত্তরপ্রদেশ এবং উত্তরাখণ্ড সরকারের নির্দেশিকায় স্থগিতাদেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি হৃষীকেশ রায় এবং এসভিএন ভাট্টির বেঞ্চের অন্তর্বর্তী নির্দেশ অনুযায়ী, কাঁওয়ার যাত্রার পথে খাবার বিক্রেতাদের নাম লিখতে বাধ্য করা যাবে না। কারণ যদি দুই রাজ্যে সরকারি নির্দেশ কার্যকর করার অনুমোদন দেওয়া হয়, তা হলে ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কাঁওয়ার যাত্রায় এই নাম-নির্দেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং নাগরিক সুরক্ষা নিয়ে কাজ করা একটি সংগঠন। বিষয়টি নিয়ে জনস্বার্থ মামলা করেছিলেন কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রও। সেগুলি একত্র করেই শুনানি হয় সোমবার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kanwar Yatra UP Allahabad High Court Petition
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE