Advertisement
E-Paper

কোটা সংস্কার কার্যকর করতে বাংলাদেশে বিজ্ঞপ্তি জারি হাসিনা সরকারের, মঙ্গলে কার্ফুর মেয়াদ বৃদ্ধি দু’দিন

মঙ্গলবারও কার্ফু বজায় রইল। ঢাকার রাস্তায় টহল দিল সেনা, সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া গাড়ি দাপিয়ে বেড়াল রাজপথ। পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনতে মঙ্গলবার কার্ফুর মেয়াদ আরও দু’দিন বাড়ানো হয়েছে।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। — ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০২৪ ১৯:১০
Share
Save

সুপ্রিম কোর্টের রায় মেনে বাংলাদেশে সমস্ত চাকরিতে মেধার ভিত্তিতে ৯৩ শতাংশ নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করল বাংলাদেশ সরকার। সোমবার রাতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই বিজ্ঞপ্তির অনুমোদন দিয়েছিলেন। মঙ্গলবার দুপুরে আনুষ্ঠানিক ভাবে বিজ্ঞপ্তিটি জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টা (সে দেশের স্থানীয় সময়)-র সময় চালু হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবা। বুধবার থেকে খুলে যাবে অফিস।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক মঙ্গলবার এক সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, ‘‘সরকার সর্বোচ্চ আদালতের রায় মেনে নিয়েছে। রায়ের কিছুই পরিবর্তনের ক্ষমতা আমাদের হাতে নেই। রায় অমান্য করারও কোনও অভিপ্রায় নেই সরকারের।’’

বৈঠকে আনিসুল ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফারহাদ হোসেন, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এবং তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফত। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জারি করা বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, দেশের সব সরকারি, আধা-সরকারি এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে নবম থেকে বিংশতম গ্রেড পর্যন্ত সমস্ত পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে এই নতুন সংরক্ষণ ব্যবস্থা সরাসরি কার্যকর হবে।

আইনমন্ত্রী আরও বলেছেন, ‘‘আশা করি এখন আর নতুন করে কোনও সমস্যা তৈরি হবে না। তবু এর পরেও যদি কোনও অপশক্তি ঝঞ্ঝাট বাধায়, তা হলে কঠোর ব্যবস্থা নেবে সরকার।’’

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে সংরক্ষণ নিয়ে হাসিনার সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তা গত ৫ জুন অবৈধ ঘোষণা করেছিল হাই কোর্ট। এর পরই ২০১৮র কোটা সংস্কার আন্দোলন নতুন করে মাথাচাড়া দেয় দেশ জুড়ে। জুলাইয়ে এসে সেই আন্দোলন ভিন্ন মাত্রা নেয়। দলে দলে ছাত্র-ছাত্রীরা রাস্তায় নামেন। পুলিশ এবং আওয়ামী লিগের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন আন্দোলনকারীরা। এখনও পর্যন্ত এই আন্দোলনে শতাধিক নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে।

ঢাকার রাস্তায় সেনার টহল।

ঢাকার রাস্তায় সেনার টহল। ছবি: রয়টার্স।

কেন আন্দোলন?

১৯৭২ সালে তৎকালীন বাংলাদেশ সরকার সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা চালু করেছিল। সেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের জন্য ৩০ শতাংশ সংরক্ষণ করা হয়েছিল। অন্যান্য ক্ষেত্রে সব মিলিয়ে আরও ২৬ শতাংশ কোটা ছিল। সেই কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবি নিয়ে আন্দোলন অনেক দিনের। ২০১৮ সালে হাসিনার সরকার সরকারি চাকরিতে সব ধরনের কোটা তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সে সিদ্ধান্তে আপত্তি জানিয়ে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সাত জন হাই কোর্টে মামলা করলে হাসিনা সরকারের সিদ্ধান্ত খারিজ করে দেয় হাই কোর্ট। হাই কোর্টের এই রায়ের পর নতুন করে শুরু হয় আন্দোলন। সরকার হাই কোর্টের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টে মামলা করে। গত রবিবার সেই মামলাতেই রায় দিয়েছে আদালত। রায় অনুযায়ী, সরকারি চাকরিতে কোটা থাকবে মাত্র সাত শতাংশ। তার মধ্যে পাঁচ শতাংশ সংরক্ষণ থাকবে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য। বাকি দুই শতাংশের মধ্যে ১ শতাংশ অন্য অনগ্রসর শ্রেণির জন্য, আর ১ শতাংশ প্রতিবন্ধী এবং তৃতীয় লিঙ্গের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। বাকি ৯৩ শতাংশ নিয়োগই হবে মেধার ভিত্তিতে। আদালতের রায়কে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। এমনকি, আন্দোলনকারীরাও আদালতের রায় নিয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখাচ্ছেন। তবে তাঁরা আন্দোলন থেকে এখনই যে সরে আসবেন না, তা-ও স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন। তাঁরা এখন দাবি করছেন, আন্দোলনে পড়ুয়াদের মৃত্যুর নেপথ্যে দায়ী যাঁরা, তাঁদের বিচার চাই।

সেনার সাঁজোয়া গাড়ি। গাড়ি থামিয়ে চলছে জিজ্ঞাসাবাদ।

সেনার সাঁজোয়া গাড়ি। গাড়ি থামিয়ে চলছে জিজ্ঞাসাবাদ। ছবি: রয়টার্স।

কার্ফুর মধ্যে অতন্দ্র প্রহরা।

কার্ফুর মধ্যে অতন্দ্র প্রহরা। ছবি: পিটিআই।

কেমন আছে বাংলাদেশ?

সুপ্রিম কোর্ট রবিবারের রায়ের পর থেকেই খানিক হলেও বদলেছে বাংলাদেশের পরিস্থিতি। সংরক্ষণ-বিরোধী আন্দোলনের যৌথ মঞ্চ ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর মুখ্য সমন্বায়ক নাহিদ ইসলাম মঙ্গলবার পর্যন্ত ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত রাখার ঘোষণা করেছেন। মঙ্গলবারের নতুন বিজ্ঞপ্তিটি খতিয়ে দেখার পরেই তাঁরা আন্দোলন প্রত্যাহারের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। রবিবার সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ়-জ়ামান জানিয়েছেন, “দু’এক দিনেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে মনে করা হচ্ছে।” মঙ্গলবারও কার্ফু বজায় রইল। ঢাকার রাস্তায় টহল দিল সেনা, সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া গাড়ি দাপিয়ে বেড়াল রাজপথ। পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনতে মঙ্গলবার কার্ফুর মেয়াদ আরও দু’দিন বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে মঙ্গলবার রাতে চালু হল ইন্টারনেট পরিষেবা। বুধবার থেকে খুলবে অফিসও।

Bangladesh quota Bangladesh Protest Seikh Hasina

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}