রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ খারিজের সেই ধারা এ বার চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ল সুপ্রিম কোর্টে। জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ৮(৩) ধারার সাংবিধানিক বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সমাজকর্মী আভা মুরলীধরনের তরফে শীর্ষ আদালতে ওই মামলা দায়ের করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পদবি নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যের দায়ে অপরাধমূলক মানহানির মামলায় বৃহস্পতিবার গুজরাতের সুরত জেলা আদালত দু’বছরের সাজা দেওয়ায় পরে ভারতীয় সংবিধানের ১০২(১)-ই অনুচ্ছেদ এবং জনপ্রতিনিধিত্ব আইন (১৯৫১)-র ৮(৩) নম্বর ধারা মেনেই শুক্রবার রাহুলের সাংসদ পদ খারিজ করেছিলেন লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা। কারণ, ৮(৩) ধারার স্পষ্ট বলা হয়েছে, দোষী কোনও সাংসদ-বিধায়কের ২ বছরের বেশি সাজা হলেই পদ খারিজ হয়ে যাবে।
আরও পড়ুন:
জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ৮(৩) ধারায় বলা হয়েছে, ফৌজদারি অপরাধে দু’বছরের বেশি কারাদণ্ডপ্রাপ্ত কোনও ব্যক্তি সাজা ঘোষণার দিন থেকেই জনপ্রতিনিধি হওয়ার অধিকার হারাবেন। এবং মুক্তির পর অন্তত ছ’বছর পর্যন্ত ভোটে দাঁড়াতে পারবেন না। অর্থাৎ, ২ বছরের জেলে সাজা পাওয়া রাহুলের পরবর্তী ৮ বছর ভোটে দাঁড়ানো নিষেধ। যদিও উচ্চতর আদালত রায়ের উপর স্থগিতাদেশ দিলে পদ ফিরে পেতে বাধা নেই।
আরও পড়ুন:
৮(৩) ধারার পাশাপাশি আগে জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ৮(৪) ধারা ছিল। তাতে বলা ছিল, সাংসদ-বিধায়ক দোষী সাব্যস্ত হলে তাতে স্থগিতাদেশ পাওয়ার জন্য তিন মাস সময় পাবেন। ২০১৩-য় সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রীয় সরকার বনাম লিলি টমাস মামলায় আইনের সেই ৮(৪) ধারাটি নাকচ করে রায় দিয়েছিল। জানিয়েছিল দু’বছরের কারাদণ্ডের সাজার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলেই সাংসদ পদ চলে যাবে। পশুখাদ্য কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত লালু প্রসাদের সাংসদ পদ বাঁচাতে মনমোহন সরকার অধ্যাদেশ জারি করে সুপ্রিম কোর্টের রায় উল্টে দিয়ে পুরনো ব্যবস্থা বহাল রাখার চেষ্টা করেছিল। ঘটনাচক্রে, সে সময় রাহুলই তাতে আপত্তি তুলেছিলেন।
সুরত জেলা আদালতের বিচারক এইচএইচ বর্মা রাহুলের জামিনের আবেদন মঞ্জুর করে সাজা কার্যকর ৩০ দিনের জন্য মুলতুবি ঘোষণা করেছেন। ওই সময়সীমার মধ্যে রাহুল উচ্চতর আদালতে আবেদন করতে পারবেন। কিন্তু সাজা স্থগিত রাখেননি তিনি। ফলে আইনের ৮(৩) ধারা মেনেই স্পিকার তাঁর সদস্যপদ খারিজ করেছেন বলে আইন বিশারদদের একাংশ জানাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে ওই ধারার সাংবিধানিক বৈধতা শীর্ষ আদালত খারিজ করলে ফৌজদারি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত একাধিক জনপ্রতিনিধি রক্ষাকবচ পেতে পারেন।