প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর রাজ্যের আদালত বৃহস্পতিবার তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করার পরে জল্পনা দানা বেঁধেছিল। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই মোদী-মন্তব্যের জেরে ২ বছর জেলের সাজাপ্রাপ্ত কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধীকে বরখাস্ত করে সেই জল্পনা সত্য প্রমাণ করলেন লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা।
সুরাত জেলা আদালতের বিচারক এইচএইচ বর্মা অবশ্য ২ বছরের জেলের সাজা ঘোষণার পাশাপাশি রাহুলকে ১০ হাজার টাকার জামিনে মুক্তি দিয়ে ৩০ দিনের মধ্যে উচ্চতর আদালতে আপিল করার অনুমতি দিয়েছেন। কিন্তু দোষী সাব্যস্ত করার উপর কোনও স্থগিতাদেশ দেননি তিনি। ফলে আইন মেনেই ‘দোষী’ রাহুলকে বরখাস্ত করেছেন স্পিকার। ঠিক যে ভাবে দু’মাস আগে খুনের চেষ্টার অপরাধে ১০ বছর জেলের সাজাপ্রাপ্ত লক্ষদ্বীপের এনসিপি সাংসদ মহম্মদ ফয়জলকে লোকসভা থেকে বরখাস্ত করেছিলেন তিনি।

ছবি: টুইটার থেকে নেওয়া।
আরও পড়ুন:
কিন্তু ইতিমধ্যেই লক্ষদ্বীপের নিম্ন আদালতের সেই রায়ের উপর স্থগিতাদেশ দিয়েছে কেরল হাই কোর্ট। শুধু জেলযাত্রা আটকানো নয়, দোষী ঘোষণার উপরেও ছিল সেই স্থগিতাদেশ। পাশাপাশি, তাঁর সদস্যপদ ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য লোকসভা সচিবালয়কে নির্দেশ দেয় কেরল হাই কোর্ট। ফলে সাংসদ পদ ফিরে পেতে চলেছেন ফয়জল (যদিও ‘তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে’ কেরল হাই কোর্টের ওই নির্দেশের পরেও এখনও পর্যন্ত ফরজলকে সাংসদ পদে ফেরানো হয়নি)।
আরও পড়ুন:
উচ্চতর আদালত যদি সুরাত জেলা আদালতের সামগ্রিক রায়ের (দোষী ঘোষণা এবং ২ বছরের জেলের সাজা) উপর স্থগিতাদেশ দেয় এবং কেরল হাই কোর্টের মতো নির্দেশিকা জারি করে, তবে রাহুলের পক্ষেও সাংসদ পদ ফিরে পাওয়া সম্ভব হতে পারে। যদিও শুক্রবার সরকার পক্ষের নজিরবিহীন তৎপরতা দেখে বিরোধী নেতারা মনে করছেন, দ্রুত ওয়েনাড়ে উপনির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু করা হতে পারে। যদিও উচ্চ আদালত মনে করলে সেই প্রক্রিয়ার উপরেও স্থগিতাদেশ দিতে পারে।
আরও পড়ুন:
ফয়জল সোমবার বলেন, ‘‘আমার ক্ষেত্রে কেরল হাই কোর্ট সদস্যপদ ফেরানোর নির্দেশ দিয়েছেন। রাহুলের ক্ষেত্রেও তেমন হতেই পারে।’’ অতীতে স্পিকারের সিদ্ধান্ত খারিজ করে বিধায়কের সদস্যপদ ফেরানোর নজির রেখেছে সুপ্রিম কোর্ট। দেড় দশক আগে কর্নাটক বিধানসভার স্পিকার তথা বিজেপি নেতা কেজি বোপাইয়া দলত্যাগ বিরোধী আইনের অপপ্রয়োগ করে একাধিক বিরোধী বিধায়কের পদ খারিজ করেছিলেন। কিন্তু শীর্ষ আদালতের নির্দেশে তাঁরা পদ ফিরে পান।
আইন বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার গুজরাত আদালত দু’বছরের সাজা দেওয়ায় আইনি দৃষ্টিতে ভারতীয় সংবিধানের ১০২(১)-ই অনুচ্ছেদ এবং জনপ্রতিনিধিত্ব আইন (১৯৫১)-র ৮ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাহুলের সাংসদ পদ খারিজ হওয়ার কথা ছিল। ফলে স্পিকারের সিদ্ধান্ত আইন-বহির্ভূত পদক্ষেপ নয়। জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ৮(৩) ধারায় বলা হয়েছে, ফৌজদারি অপরাধে দু’বছরের বেশি কারাদণ্ডপ্রাপ্ত কোনও ব্যক্তি সাজা ঘোষণার দিন থেকেই জনপ্রতিনিধি হওয়ার অধিকার হারাবেন। এবং মুক্তির পর অন্তত ছ’বছর পর্যন্ত ভোটে দাঁড়াতে পারবেন না। কিন্তু উচ্চতর আদালত রায়ের উপর স্থগিতাদেশ দিলে পদ ফিরে পেতে বাধা নেই।