Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪
Unemployment

পেটের দায়ে যা হোক! গুনতিতে কম বেকার

উপদেষ্টা সংস্থা সিএমআইই-র হিসেব অনুযায়ী, দেশে এখন কর্মহীনের অনুপাত লকডাউন শুরুর আগের থেকেও কম!

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

ইন্দ্রজিৎ অধিকারী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০২০ ০৩:৩৩
Share: Save:

কোভিডের কামড় আর দীর্ঘ লকডাউনে কাজ খুইয়েছেন অসংখ্য মানুষ। হালে কল-কারখানা, অফিস-কাছারির ঝাঁপ উঠতে শুরু করলেও চলতি বছরে চাকরি-হারাদের তুলনায় চাকরি-পাওয়াদের সংখ্যা নগণ্য। অথচ বছরের গোড়াতেও বেকারত্বের হার যা ছিল, গত দু’মাসে তা নেমে এসেছে! অন্তত পরিসংখ্যান তা-ই বলছে। উপদেষ্টা সংস্থা সিএমআইই-র হিসেব অনুযায়ী, দেশে এখন কর্মহীনের অনুপাত লকডাউন শুরুর আগের থেকেও কম! বিশেষজ্ঞদের মতে, পেটের দায়ে যোগ্যতা এবং মজুরির সঙ্গে আপস করে কাজ করতে বাধ্য হওয়া এবং হতাশ হয়ে অনেকের কাজের বাজার থেকেই সরে দাঁড়ানো এর মূল কারণ।

উন্নত দুনিয়ায় বেকারত্বের পরিসংখ্যান বেশি নির্ভরযোগ্য মূলত তিনটি কারণে। এক, সেখানে কর্মীদের বড় অংশ কাজ করেন সংগঠিত ক্ষেত্রে। ফলে তথ্য সংগ্রহ সুবিধাজনক। দুই, বেকারত্ব ভাতার জন্য আবেদনকারীর সংখ্যা থেকে আঁচ মেলে যে, চাকরি গিয়েছে কত জনের। আর তিন, ওই ভাতা থাকার কারণে একটি ন্যূনতম বেতন কিংবা মজুরি না-পাওয়া পর্যন্ত কাজের বাজারের দিকে পা-ই বাড়ান না অনেকে। এ কথা মনে করিয়ে দিল্লি স্কুল অব ইকনমিক্সের অধ্যাপক দিব্যেন্দু মাইতি বলেন, “শুধু করোনা-কালে নয়, এ দেশে কাজের বাজারের আসল ছবি কখনওই বেকারত্বের হারে প্রতিফলিত হয় না। সেই সমস্যা আরও বেড়েছে কোভিডের সময়ে। কারণ, অনেকে স্রেফ সংসার চালানোর তাগিদে যোগ দিতে বাধ্য হয়েছেন এমন কাজে, যেখানে বেতন কিংবা মজুরি আগের তুলনায় কম। অনেকে আবার সংগঠিত ক্ষেত্রের বাঁধা বেতনের চাকরি হারিয়ে যোগ দিয়েছেন অসংগঠিত ক্ষেত্রের ঠিকা কাজ বা দিন-মজুরিতে।’’ অর্থাৎ, খাতায়-কলমে বেকারি কমলেও তা কিন্তু কাজের বাজারের হাল ফেরার প্রমাণ নয়।

সরকারি দাবি অনুযায়ী, লকডাউনে কাজ খুইয়ে গ্রামে ফেরা পরিযায়ী শ্রমিকদের অনেকে যোগ দিয়েছেন একশো দিনের কাজে। অনেকের ভরসা সম্প্রতি চালু হওয়া প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ রোজগার অভিযান। শ্রমিক সংগঠনগুলির প্রশ্ন, শহরে যে মজুরির কাজ ওই শ্রমিকরা করতেন, গ্রামে তাঁরা তার ছিটেফোঁটাও পাচ্ছেন কি? অর্থাৎ, সমীক্ষার সময়ে জিজ্ঞাসা করলে, নিজেদের কর্মহীন হয়তো তাঁরা বলছেন না, কিন্তু রোজগার ঠেকেছে তলানিতে।

আরও পড়ুন: দেশে কমেছে অ্যাক্টিভ রোগী, দাবি কেন্দ্রের

এই একই প্রশ্ন তুলছেন দিল্লি স্কুল অব ইকনমিক্সের অধ্যাপক আদিত্য ভট্টাচার্য। তাঁর কথায়, “কোভিডের এই সময়ে কারখানায় মাস গেলে বাঁধা বেতনের চাকরি খুইয়ে যদি এখন কেউ পেট চালাতে দিন-মজুরের কাজ করেন, তা হলে তাকে গুণগত বা অর্থকরী দিক থেকে একই রকম ভাবা যায় কি? কিন্তু খাতায়-কলমে ওই ব্যক্তি আগেও কর্মহীন ছিলেন না, এখনও নন!” বাড়ির কর্তা মাসে ২০ হাজার টাকা বেতনের কাজ খোয়ানোর পরে সংসারের জোয়াল টানতে যদি এখন তাঁর পরিবারের তিন জন মাটি কেটে মাসে ৫-৬ হাজার টাকা করে আয় করেন, তা হলে কাজ করা লোকের মাথার সংখ্যা এক থেকে বেড়ে তিন হবে। কিন্তু আদতে আয় কমবে ওই পরিবারের।

লকডাউন ও তার পরবর্তী সময়ে অনেকে হতাশ হয়ে নিজেকে সরিয়েই নিচ্ছেন কাজের বাজার থেকে। সিএমআইই-র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শুধু অক্টোবরেই এই সংখ্যা প্রায় ২ কোটি। আইডিএসকে-র অধ্যাপক শুভনীল চৌধুরী বলেন, “মোট কর্মক্ষম জনসংখ্যার অনুপাতে কাজ খোঁজা লোকের সংখ্যাই যদি বাজারে কমে যায়, তা উদ্বেগের। গত কয়েক মাস তা-ই ঘটছে। কিন্তু বেকারত্বের হিসেব কষার সময়ে তাঁদের ধরা
হয় না।”

অন্য বিষয়গুলি:

Unemployment Government
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy