নেহরু-গাঁধীদের সরিয়ে ইতিহাসের পাতা থেকে কংগ্রেস-বিরোধী চরিত্ররা ঢুকে পড়লেন নরেন্দ্র মোদীর বাজেটে।
মোদীর অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি আজ যখন বাজেট পেশ করলেন, সেখানে দেখা গেল প্রায় আধ ডজন এমন চরিত্রের নামেই ঘোষণা হয়েছে বিভিন্ন প্রকল্প। গত এক দশকে ইউপিএ জমানায় নেহরু-গাঁধী পরিবারের ছাপ থাকত সরকারি প্রকল্পে। এ বার সেই সব স্থান কেড়ে নিলেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, দীনদয়াল উপাধ্যায়, জয়প্রকাশ নারায়ণ, পণ্ডিত মদনমোহন মালবীয়রা।
ভোটের আগেই গুজরাতে সর্দার বল্লভভাই পটেলের ৫৯৭ ফুট উঁচু একটি মূর্তি তৈরির কথা ঘোষণা করেছিলেন মোদী। পটেলের রাজনীতিও গাঁধী-নেহরু ঘরানার মধ্যে পড়ে না। ভোট প্রচারে দেশের প্রথম উপ-প্রধানমন্ত্রীকেই হাতিয়ার করেছিলেন মোদী। আজ বাজেটে সেই মূর্তি স্থাপনের জন্যও ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। বাজেট পেশের পর জেটলি জানান, এর পরেও বাদ থেকে গেল কিছু নাম। যেমন, রামমনোহর লোহিয়া, এন টি রাম রাও। ভবিষ্যতে তাঁদের নামেও কোনও প্রকল্প ঘোষণা হতে পারে।
বিজেপির এক শীর্ষ নেতার ব্যাখ্যা ইউপিএ জমানায় নেহরু-গাঁধী পরিবারের বাইরে কাউকে স্বীকৃতিই দেয়নি কংগ্রেস। কিন্তু গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রচারের ভিতটাই ছিল কংগ্রেস-মুক্ত ভারত গড়া। দেশের মানুষও কংগ্রেসের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে।
তাই সরকার শুধু বিজেপি বা জনসঙ্ঘের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদেরই স্বীকৃতি দিচ্ছে না। বরং ইতিহাসের পাতা থেকে সেই সব ব্যক্তিকেও তুলে আনছে, যাঁদের অনেকে এক সময় কংগ্রেসে থাকলেও পরে কংগ্রেস-মুক্ত ভারত গড়ার স্বপ্ন দেখেছেন।
সেই সূত্র ধরেই আজ বাজেটে গ্রামীণ এলাকায় শহরের পরিকাঠামো পৌঁছে দিতে ‘শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় রুরবান মিশন’ ঘোষণা করা হয়েছে। সমস্ত ঘরে ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ দেওয়ার লক্ষ্যে ঘোষণা হয়েছে ‘দীনদয়াল উপাধ্যায় গ্রাম জ্যোতি যোজনা’। এর পাশাপাশিই মধ্যপ্রদেশে একটি জাতীয় কলা উৎকর্ষ কেন্দ্রের নামকরণ করা হয়েছে জয়প্রকাশ নারায়ণের নামে ইন্দিরা গাঁধীর বিরুদ্ধে যিনি আন্দোলন গড়েছিলেন। এক সময়ে কংগ্রেসের সভাপতি হয়েও পরে হিন্দু জাতীয়তাবাদকে সমর্থন করেছিলেন পণ্ডিত মদনমোহন মালবীয়। হিন্দু মহাসভার নেতা ছিলেন তিনি। বারাণসী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ও তাঁর হাতে গড়া। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জন্য তাঁর নামে একটি প্রকল্পও ঘোষণা হয়েছে আজকের বাজেটে।
এ ছাড়া, প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী কেন্দ্র বারাণসীর জন্যও একগুচ্ছ প্রকল্প ঘোষণা করেছেন জেটলি। ঘাটের সংস্কার, মেগা-ক্লাস্টার, বৌদ্ধ সার্কিটের মতো ঘোষণা রয়েছে বাজেটে। অর্থ মন্ত্রক সূত্রের মতে, ইউপিএ জমানার বেশ কয়েকটি প্রকল্পের নামও বদলে ফেলা হয়েছে, যেগুলি আগে নেহরু-গাঁধী পরিবারের নামে ছিল। ‘ইন্দিরা গাঁধী বয়স্ক পেনশন প্রকল্প’-র নাম বদলে ‘বরিষ্ঠ পেনশন বিমা যোজনা’ করা হয়েছে। দীনদয়ালের নামে যে প্রকল্প ঘোষণা করা হয়েছে, সেটি রাজীব গাঁধীর নামে ছিল বলে সূত্রের খবর।
কংগ্রেসের নেতা রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা বলেন, “বিজেপির আসল চরিত্রটি ধীরে ধীরে প্রকাশ পাচ্ছে। এই বাজেটে অভিনবত্ব কিছু নেই। কংগ্রেস আমলের প্রকল্পগুলিই নতুন নাম দিয়ে চালানোর চেষ্টা হচ্ছে। নেহরু-গাঁধী পরিবারের নাম বদলে দিয়ে এখানে যে রাজনীতিই হচ্ছে, সেটা স্পষ্ট।” সুর আরও চড়িয়ে এক কংগ্রেস নেতার কটাক্ষ, মোদীকে খুশি করতে পটেলের মূর্তিতে ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করলেন জেটলি, অথচ নারীকল্যাণ বা যুদ্ধ-স্মারকের মতো ২৯টি প্রকল্পে মাত্র ১০০ কোটি করে বরাদ্দ করলেন! আবার তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়ের মতে, গঙ্গা নিয়ে প্রকল্প ঘোষণা, যুদ্ধ-স্মারক ও পুরনো প্রকল্পগুলির নাম বদলের মধ্যেই বিজেপির হিন্দুত্ব-কর্মসূচিটি প্রকাশ পাচ্ছে। তাঁর কথায়, “ওরা সব সময়েই নিরাপত্তার সঙ্গে হিন্দুত্বকে যোগ করে দেখে। বাজেটেও সেই হিন্দুত্বের জয়গান হল।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy