নির্মলা সীতারামন। — ফাইল চিত্র।
‘অগ্নিপথ’ প্রকল্প নিয়ে চাপানউতর থামার নাম নেই বিগত কয়েক মাস ধরেই। এর মধ্যেই ‘অগ্নিবীর’দের হয়ে এ বার মাঠে নামলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন।
বুধবার এই প্রকল্প নিয়ে যাবতীয় সমালোচনা উড়িয়ে দিয়ে রাজ্যসভায় নির্মলা বলেছেন, ১৭ থেকে ২১ বছর বয়সী ছেলেমেয়েদের সেনাবাহিনীতে নিয়োগ করলে সশস্ত্র বাহিনীর নেতৃত্ব দেবে এক ঝাঁক তরুণ মুখ। তাঁরা শারীরিক ভাবে আরও সক্ষম, চনমনে। তাতে ভারতীয় সেনা সব সময় যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকবে। এ ছাড়া, কমবে সেনাবাহিনীর গড় বয়সও, প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে যা ভারতকে বাড়তি সুবিধা দেবে।
সরাসরি বিরোধীদের নিশানা করে নির্মলা বলেন, ‘‘আমি মনে করি না এই প্রকল্প নিয়ে এত রাজনীতি করার কোনও দরকার আছে। বরং আমাদের এ সব ভেবে অহেতুক উদ্বিগ্ন হওয়ারও প্রয়োজন নেই। সেনাবাহিনীর মতামত নিয়েই এই প্রকল্প চালু করা হয়েছে।’’
বুধবার সংসদে ওয়েনাড়-ভূমিধসের ঘটনায় রাহুল গান্ধীকে নিশানা করে বিজেপি সাংসদ তেজস্বী সূর্যের মন্তব্যের পর কংগ্রেসের প্রতিবাদে কিছুক্ষণের জন্য মুলতুবি রাখা হয় লোকসভা। ৪টের পর ফের অধিবেশন শুরু হয়। বাজেট, ওয়েনাড় প্রসঙ্গের পর অগ্নিপথ প্রকল্পের কথা উঠতেই স্পষ্ট কথায় নিজের বক্তব্য জানিয়ে দেন নির্মলা।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবারও সংসদে অগ্নিপথ প্রকল্পের বিরোধিতায় সরব হয়েছিলেন অখিলেশ যাদব। অখিলেশ বলেন, ‘‘সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে আগ্রহী কোনও যুবকই অগ্নিপথ প্রকল্পের পক্ষপাতী নন। অথচ যখন এই প্রকল্প চালু হল, বড় বড় শিল্পপতিদের সমাজমাধ্যমে লিখতে বলা হল যে, এর চেয়ে ভাল চাকরি আর নেই! তাঁরা লিখলেনও। লিখলেন, চার বছরের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে ওই অবসরপ্রাপ্ত ‘অগ্নিবীর’দের আবার চাকরিতে নেবেন তাঁরা।’’ অখিলেশের দাবি ছিল, সরকার আসলে নিজেও জানে, এই প্রকল্প ভাল নয়। তাই বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিকে অগ্নিবীরদের জন্য চাকরি ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট পরিমাণ সংরক্ষণ বরাদ্দ করতে নির্দেশ দিচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার। অখিলেশকে উত্তর দিতে গিয়ে তাঁর সঙ্গে একপ্রস্ত বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন বিজেপি সাংসদ অনুরাগ ঠাকুর।
প্রসঙ্গত, কার্গিল বিজয় দিবসে বিতর্কিত ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্প নিয়ে মুখ খুলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীকে নিশানা করে বলেছিলেন, ওই প্রকল্প নিয়ে কিছু মানুষ ব্যক্তিগত স্বার্থে রাজনৈতিক প্রচার চালাচ্ছে। অন্য দিকে, বিরোধী জোটের পাল্টা বক্তব্য ছিল, ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্প অবিলম্বে বাতিল করুক সরকার। তাঁদের মত, সেনায় পাকা চাকরির বেতন এবং পেনশন খাতে খরচ কমাতেই ওই প্রকল্প চালু করেছে সরকার।
তবে জানা গিয়েছে, নতুন ওই প্রকল্প নিয়ে আপত্তি রয়েছে সেনাবাহিনীর একাংশেরই। কারণ, ওই প্রকল্পে সেনার গড় বয়স কমাতে চার বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। চার বছরের শেষে ১০ শতাংশ ‘অগ্নিবীর’ স্থায়ী চাকরি পেলেও, বাকি ৯০ শতাংশ ‘অগ্নিবীর’কে বাধ্যতামূলক ভাবে অবসর নিতে হবে। উত্তর ও পশ্চিম ভারতের যুবকদের বড় অংশ মূলত পাকা চাকরির লক্ষ্যে সেনায় যোগ দেন। কিন্তু চার বছরের ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্পের শেষে তাঁরা বেকার হয়ে যাবেন, সেই আশঙ্কায় সরব যুব সমাজের একাংশ। বিরোধীদের অভিযোগ, যার প্রভাব ভোটে যে পড়েছে, তা বুঝতে পারছেন বিজেপি নেতৃত্ব। তা সত্ত্বেও ওই পরিকল্পনা যে চালু থাকবে তা স্পষ্ট হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে।
কার্গিল বিজয় দিবসে নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, ‘‘দুর্ভাগ্যবশত, জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে সম্পর্কিত এমন একটি স্পর্শকাতর বিষয়কে কিছু মানুষ রাজনীতির বিষয় বানিয়েছেন। সেনাবাহিনীর এই সংস্কার নিয়েও কেউ কেউ তাঁদের ব্যক্তিগত স্বার্থে মিথ্যার রাজনীতি করছেন।’’ ভারতীয় সেনার গড় বয়স কমানোর লক্ষ্যেই তাঁর সরকারের এই পদক্ষেপ বলে দাবি করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। এ বার নির্মলার গলাতেও শোনা গেল একই সুর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy