(বাঁ দিকে) অখিলেশ যাদব। বিজেপি সাংসদ অনুরাগ ঠাকুর (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
সংসদে বাজেট নিয়ে বিতর্কের মাঝেই অগ্নিপথ প্রকল্প নিয়ে সরব হলেন অখিলেশ যাদব। প্রত্যুত্তর দিতে গিয়ে সমাজবাদী পার্টির প্রধানের সঙ্গে উত্তপ্ত বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়লেন বিজেপি সাংসদ অনুরাগ ঠাকুর। লোকসভায় এমনই দৃশ্য দেখা গেল মঙ্গলবার।
সশস্ত্র বাহিনীতে স্বল্পমেয়াদি নিয়োগ ক্ষেত্রে বয়সের নিম্নসীমা কমাতে ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্প চালু করেছে মোদী সরকার। এই প্রকল্প নিয়ে সংসদে অখিলেশ বলেন, ‘‘সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে আগ্রহী কোনও যুবকই অগ্নিপথ প্রকল্পের পক্ষপাতী নন। অথচ যখন এই প্রকল্প চালু হল, বড় বড় শিল্পপতিদের সমাজমাধ্যমে লিখতে বলা হল যে, এর চেয়ে ভাল চাকরি আর নেই! তাঁরা লিখলেনও। লিখলেন, চার বছরের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে ওই অবসরপ্রাপ্ত ‘অগ্নিবীর’দের আবার চাকরিতে নেবেন তাঁরা।’’ এর পরেই অখিলেশের দাবি, সরকার নিজেও জানে, এই প্রকল্প ভাল নয়। তাই বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিকে অগ্নিবীরদের জন্য চাকরি ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট পরিমাণ সংরক্ষণ বরাদ্দ করতে নির্দেশ দিচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার।
এই সময় সমাজবাদী পার্টির নেতার বক্তব্যের বিরোধিতা করে পাল্টা তোপ দাগেন বিজেপি সাংসদ অনুরাগ ঠাকুর। তিনি বলেন, ‘‘আমি হিমাচল প্রদেশের লোক। দেশকে প্রথম ‘পরম বীর চক্র’ এনে দিয়েছিল হিমাচল। পেয়েছিলেন মেজর সোমনাথ শর্মা। কার্গিল যুদ্ধের বেশির ভাগ শহিদ হিমাচল প্রদেশের বাসিন্দা ছিলেন। বরং ভুলে গেলে চলবে না, নরেন্দ্র মোদীর সরকারই সেনাবাহিনীতে এক পদ এক পেনশনের দীর্ঘ দিনের দাবি পূরণ করেছে। আমি বলছি, ‘অগ্নিবীর’ প্রকল্পে ১০০ শতাংশ কর্মসংস্থানের গ্যারান্টি রয়েছে।’’
এর পর প্রশ্ন ছুড়ে দেন অখিলেশ, তা হলে রাজ্য সরকারগুলির অগ্নিবীরদের জন্য আলাদা কোটা বরাদ্দ করার দরকার কী? কটাক্ষ করে বলেন, ‘‘আমিও তো সামরিক স্কুলে পড়েছি!’’ এতে অনুরাগ ফের উঠে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘‘উনি মিলিটারি স্কুলে গিয়েছেন মাত্র! আর আমি টেরিটোরিয়াল আর্মি ক্যাপ্টেন হিসাবে দায়িত্ব পালন করছি। অখিলেশজি, জ্ঞান দেবেন না!’’
অগ্নিপথ প্রকল্প ছাড়াও মঙ্গলবার বাজেট প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে অখিলেশ বলেন, ‘‘এ এক ‘হতাশার বাজেট’! অথচ সরকারের লোকেরা এর প্রশংসা করছে!’’ বেকারদের জন্য, কিংবা গ্রামাঞ্চলের জন্য কিছুই রাখা হয়নি এই বাজেটে। এর পরেই উত্তরপ্রদেশের প্রসঙ্গ তুলে কনৌজের সাংসদ বলেন, ‘‘আপনি ‘সেক ইন ইন্ডিয়া’র স্বপ্ন দেখিয়েছেন, কিন্তু নতুন প্রধানমন্ত্রী পেলেও উত্তরপ্রদেশে আমরা কোনও বড় প্রকল্প পাইনি। আমরা কি আইআইটি বা আইআইএম পেলাম? কোনও কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠান পেলাম? সমাজবাদী পার্টির সরকার রায়বরেলী এবং গোরক্ষপুরে দু’টি এমসের জন্য জমি দিয়েছে, কিন্তু সেখানে কি মানুষ পর্যাপ্ত চিকিৎসা পাচ্ছেন?’’
প্রসঙ্গত, কার্গিল বিজয় দিবসে বিতর্কিত ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্প নিয়ে মুখ খুলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীকে নিশানা করে বলেছিলেন, ওই প্রকল্প নিয়ে কিছু মানুষ ব্যক্তিগত স্বার্থে রাজনৈতিক প্রচার চালাচ্ছে। মোদী আরও বলেন, ভারতীয় সেনার গড় বয়স কমানোর জন্য ওই প্রকল্প শুরু করা হয়েছে। অন্য দিকে, বিরোধী জোটের পাল্টা বক্তব্য ছিল, ‘অগ্নিবীর’ প্রকল্প অবিলম্বে বাতিল করুক সরকার। তাঁদের মত, সেনায় পাকা চাকরির বেতন এবং পেনশন খাতে খরচ কমাতেই ওই প্রকল্প চালু করেছে সরকার।
তবে জানা গিয়েছে, নতুন ওই প্রকল্প নিয়ে আপত্তি রয়েছে সেনাবাহিনীর একাংশেরই। কারণ, ওই প্রকল্পে সেনার গড় বয়স কমাতে চার বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। চার বছরের শেষে ১০ শতাংশ ‘অগ্নিবীর’ স্থায়ী চাকরি পেলেও, বাকি ৯০ শতাংশ ‘অগ্নিবীর’কে বাধ্যতামূলক ভাবে অবসর নিতে হবে। উত্তর ও পশ্চিম ভারতের যুবকদের বড় অংশ মূলত পাকা চাকরির লক্ষ্যে সেনায় যোগ দেন। কিন্তু চার বছরের ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্পের শেষে তাঁরা বেকার হয়ে যাবেন, সেই আশঙ্কায় সরব যুব সমাজের একাংশ। বিরোধীদের অভিযোগ, যার প্রভাব ভোটে যে পড়েছে, তা বুঝতে পারছেন বিজেপি নেতৃত্ব। তা সত্ত্বেও ওই পরিকল্পনা যে চালু থাকবে তা স্পষ্ট হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy