সময়ের দাবি মেনে এ বার রূপান্তরকামীদের অধিকার ও তাদের উন্নয়নে আইন আনার বিষয়ে কাজ শুরু করল কেন্দ্র।
গত বাজেট অধিবেশনে রূপান্তরকামী অধিকার সংক্রান্ত একটি বেসরকারি বিল রাজ্যসভায় এনেছিলেন ডিএমকে সাংসদ তিরুচি শিবা। তারপর গত বাদল অধিবেশনে ফের এই ধাঁচের একটি বেসরকারি বিল লোকসভায় নিয়ে আসেন তৃণমূল সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার। সংসদের উভয় কক্ষেই সাংসদেরা এ ধরনের বিল নিয়ে আসার পরে নড়েচড়ে বসেছে কেন্দ্রও। সূত্রের খবর, রূপান্তরকামীদের জন্য সার্বিক ভাবে একটি নীতি প্রণয়ণ করতে ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করেছে মোদী সরকার।
বহু দেশেই রূপান্তরকামীদের অধিকারে স্বীকৃতি দিয়েছে সরকার। দেরিতে হলেও ভারতেও সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এখন সরকার যে রূপান্তরকামীদের প্রতি সংবদেনশীল, সেই বার্তা দিতেই নির্দিষ্ট আইন আনার বিষয়ে ভাবছে কেন্দ্র। সামাজিক ন্যয় মন্ত্রক সূত্রের খবর, সংসদের উভয় কক্ষে সাংসদেরা বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ জানাচ্ছেন। রূপান্তরকামীদের বিষয়ে সরকারও সংবেদনশীল। তাই ইতিমধ্যেই এ ধাঁচের একটি বিল নিয়ে আসার জন্য কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু বিষয়টির সঙ্গে ১০ থেকে ১২টি মন্ত্রক জড়িয়ে রয়েছে। সব রকমের জট ছাড়িয়ে বিলটির রূপরেখা তৈরির কাজ চলছে। আগামী বাজেট অধিবেশনে বিলটি আনতে চায় সরকার।
সুপ্রিম কোর্ট ইতিমধ্যেই দেশের আর পাঁচ জন নাগরিকের মতোই রূপান্তরকামীদের জন্য শিক্ষা-স্বাস্থ্য বা কাজের অধিকারের আইনি স্বীকৃতি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রকে। সেই নির্দেশ মেনেই কেন্দ্রীয় বিলে রূপান্তরকামীদের জন্য শিক্ষা, কাজের জন্য অধিকার দেওয়ার বিষয়ে নির্দিষ্ট আইন আনা হচ্ছে। এ ছাড়া, রূপান্তরকামীদের বিষয়ে জনমানসে কী ভাবে সচেতনতা বাড়ানো যায়, সে নিয়েও আলোচনা করা হবে। ইচ্ছুক রূপান্তরকামীরা যাতে সন্তান মানুষ করতে পারেন তার জন্য প্রয়োজনীয় শর্ত রাখারও সুপারিশ করেছিলেন কাকলিদেবী। তাঁর মতে, ‘‘দত্তকের পাশাপাশি আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের সাহায্যে কোনও রূপান্তরকামী দম্পত্তি যদি পিতা-মাতা হতে চান, তা হলে সন্তান মানুষ করতে তাদের যাতে কোনও অসুবিধে না হয় সে বিষয়টিও সরকারকে দেখতে অনুরোধ করা হয়েছে।’’ সূত্রের খবর, তৃণমূল সাংসদের ওই পরামর্শ মেনে এ বিষয়ে আইনি জটিলতাগুলি খতিয়ে দেখছে সামাজিক ন্যয় মন্ত্রক।
রূপান্তরকামীদের নিয়ে কাজ করা একাধিক সংগঠনের মতে, সমাজ এখনও তাঁদের স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিতে পারে না। অনেক ক্ষেত্রে যার প্রভাব পড়ে বিচারব্যবস্থাতেও। তাই বিলে এঁদের জন্য আদালতে বিশেষ বেঞ্চ গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া, রূপান্তরকামীদের আর্থিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে তাঁদের জন্য বৃত্তিমূলক শিক্ষা দেওয়ার জন্য নীতি গ্রহণ করবে সরকার। এ বিষয়েও নির্দিষ্ট আইন আনছে কেন্দ্র।
মন্ত্রক সূত্রের খবর, এই কাজে রাজ্যের হাতেও বিশেষ ক্ষমতা দিতে চাইছে কেন্দ্র। তবে এই কাজে রাজ্যকে অন্তর্ভুক্ত করা হলেও, খরচের সিংহভাগ কেন্দ্রের বহন করা উচিত বলেই অনুরোধ করেছিলেন কাকলিদেবী। তাই এ বিষয়ে তাঁর মতামতও চেয়েছে কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রক। সূত্রের খবর, চূড়ান্ত রূপরেখা তৈরির আগে রাজ্য ও কেন্দ্র পরস্পর কী মডেলে অর্থ খরচ করে সুষ্ঠু ভাবে এই নীতি প্রয়োগ করতে পারে, তা জানতেই সংশ্লিষ্ট সাংসদদের কাছ থেকে পরামর্শ চেয়েছে কেন্দ্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy