সর্বদল বৈঠক সেরে বেরোচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। রয়েছেন তৃণমূলের লোকসভার দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও স্পিকার ওম বিড়লা। পিটিআই
কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ এখনও সামলে ওঠা যায়নি। তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কায় কাঁপছে দেশ। পেট্রোপণ্যের দাম রেকর্ড গড়েছে, যার জেরে বাজারে আগুন। সূত্রের খবর, এই পরিস্থিতিতে সংসদ শুরুর আগের দিন, দু’ঘণ্টা চল্লিশ মিনিটের সর্বদলীয় বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী হাজির থাকলেন সামান্য কিছু সময়। তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও ব্রায়েনের টুইট দাবি করছে, মাত্র ৯ মিনিট প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তার মধ্যে ৩ মিনিট অন্যদের কথা শুনেছেন, ৪ মিনিট বক্তৃতা দিয়েছেন, ২ মিনিট ছবি তোলার সুযোগ দিয়েছেন!
রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খড়্গে আজ বৈঠকের ভিতরেই বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েন বলে সূত্রের খবর। তাঁর প্রশ্ন, প্রত্যেক বার বিরোধী দলনেতাদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী কেন একেবারে শেষে প্রবেশ করেন? বিরোধীদের বক্তব্য শোনার কি তাঁর কোনও প্রয়োজন নেই?
কেবল সর্বদল বৈঠকই নয়, লোকসভা ও রাজ্যসভায় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনার সময়েও মোদী উপস্থিত থাকেন না বলে বারবার অভিযোগ করেছেন বিরোধী দলনেতারা। আজ প্রধানমন্ত্রীর বিলম্বে আসা নিয়ে খড়্গের সমালোচনার পর বিষয়টি নিয়ে বৈঠক শেষে টুইট করেন তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও ব্রায়েন। লেখেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এটা ঠিকই আপনি বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন। সংসদীয় বৈঠক চলেছে ২ ঘণ্টা ৪০ মিনিট। আমরা আপনার সঙ্গ পেয়েছি ৯ মিনিট। ৩ মিনিট আপনি শুনেছেন। ২ মিনিট আলোকচিত্রীরা ছবি তুলেছেন। ৪ মিনিট আপনি বলেছেন।’ এর পর রাতে সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী পাল্টা টুইট করে বলেন, ‘‘স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে, সর্বদলীয় বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর সভপতিত্ব নিয়ে ডেরেক ও ব্রায়েনজি-র কিছু সমস্যা হয়েছে। তাঁর উত্তর দেওয়া উচিত, কেন ২০১৪ সালের আগে কোনও প্রধানমন্ত্রী এই বৈঠকে উপস্থিত থাকতেন না? মোদীজি-ই প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসাবে এই বৈঠকে উপস্থিত থাকতে
শুরু করেন।’
সকালে সর্বদলীয় বৈঠকের পর বিকেলে ছিল লোকসভার স্পিকারের ডাকা সংসদীয় দলের নেতাদের বৈঠক। দু’দফা বৈঠকেই বিরোধীরা সরব হন
বিভিন্ন বিষয়ে। যে কয়েকটি বিষয়ে কংগ্রেস, তৃণমূল, ডিএমকে, অকালি, শিবসেনা, এসপি-সহ বিভিন্ন বিরোধী দল মোটের উপর একমত, সেগুলি হল, পেট্রোপণ্যের আকাশছোঁয়া দাম, নতুন কৃষি বিল প্রত্যাহার, দু’বছর বন্ধ করে রাখা সাংসদ উন্নয়ন তহবিল ফের চালু করা ইত্যাদি।
স্পিকারের সঙ্গে বৈঠকে আবার পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের নাম না করে রাজ্যপালের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করেন তৃণমূলের লোকসভার নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। সূত্রের খবর, তিনি আজ বলেছেন রাজ্যপালের ভূমিকা এবং তাঁর কাজকর্ম অনেক সময়েই দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পক্ষে সমস্যাজনক হয়ে দাঁড়াচ্ছে। অথচ তাঁর নাম করে লোকসভা অধিবেশনে কিছু বলা যাবে না। এই রক্ষাকবচের আড়ালে রাজ্যপাল যা-ইচ্ছে-তাই করতে পারেন কিনা, ভেবে দেখতে হবে। রাজনৈতিক সূত্রের খবর, বিষয়টি নিয়ে সুদীপবাবু সত্যিই সংসদে আলোচনা চাইছেন কিনা তা পরে চায়ের আসরে তাঁর কাছে জানতে চান স্পিকার। সুদীপবাবু তাঁকে জানিয়েছেন, লোকসভা শুরুর প্রথম কয়েকটা দিন যাক। তার পরে আলোচনা করে দেখতে হবে কী ভাবে বিষয়টিকে তোলা যায়।
বিজেপি সূত্রের খবর, সরকার সব প্রশ্নের জবাব দিতেই তৈরি। প্রধানমন্ত্রী নিজে আজ সর্বদলীয় বৈঠকে বলেছেন, সংসদীয় নিয়মনীতি মেনে মানুষের স্বার্থের সঙ্গে যুক্ত বিষয়গুলি তুললে, তা নিয়ে আলোচনা করা যাবে। তাঁর মতে, অধিবেশনে সুস্থ আলোচনার পরিবেশ তৈরি করার দায়িত্ব সরকারের পাশাপাশি বিরোধীদেরও। সরকারের পক্ষ থেকে আজকের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রাজনাথ সিংহ. পীযূষ গয়াল, প্রহ্লাদ জোশী প্রমুখ।
প্রধানমন্ত্রী সংসদে আলোচনার পরিবেশ গড়ার কথা বললেও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ সংসদের বাইরেই বিভিন্ন দলের সংসদীয় নেতার সঙ্গে কোভিড নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের প্রস্তাব দেন। বিষয়টির তীব্র প্রতিবাদ করে কংগ্রেস, তৃণমূল-সহ অন্য বিরোধী দল। বিজেপি সূত্রে খবর, সংসদে টিকাকরণের গতি নিয়ে প্রশ্ন উঠলে রাজ্যগুলির উপরে দায় চাপানো হবে। কৃষি বিল নিয়ে প্রশ্ন উঠলে মনে করিয়ে দেওয়া হবে মনমোহন সরকারও কৃষি বিল আনার চেষ্টা করেছিল। পেট্রোপণ্যের দাম বৃদ্ধির ক্ষেত্রে জানানো হবে, রাজ্যগুলিও বিপুল পরিমাণ কর বসায়।
অন্য দিকে ৫৯ হাজার কোটি টাকার রাফাল যুদ্ধবিমান চুক্তি নিয়ে ফ্রান্সে বিচারবিভাগীয় তদন্ত হবে, এই খবর সামনে আসতেই মোদী সরকারকে ফের আক্রমণ করা শুরু করেছিল কংগ্রেস। আজ সনিয়া গাঁধীর দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সংসদের দু’টি কক্ষেই এই বিষয়টি নিয়ে সরব হবেন কংগ্রেস সাংসদেরা। তৃণমূল বাড়তি যে বিষয়গুলি আসন্ন অধিবেশনে আলোচনায় আনার জন্য নোটিস দেবে, সেগুলি জানিয়েছেন ডেরেক ও’ব্রায়েন। তার মধ্যে আছে, কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ব্যবহার, মহিলা সংরক্ষণ বিল লোকসভায় পাশ করানো, রাজ্যপালের এক্তিয়ার ইত্যাদি।
সেই সঙ্গে সুদীপবাবু আজ বৈঠকে বলেছেন, সাংসদ তহবিল ফের চালু করলে ওই অর্থ সাংসদেরা নিজেদের নির্বাচনী এলাকায় কোভিড মোকাবিলার কাজে ব্যবহার করতে পারবেন। ওয়াইএসআর কংগ্রেস, বিএসপি-র পক্ষ থেকে দলত্যাগ-বিরোধী আইনের অধীনে পড়া দলবদলু নেতাদের সাংসদ পদ খারিজের দাবি করা হয়েছে। সম্প্রতি তৃণমূলত্যাগী দুই সাংসদ এবং ওয়াইএসআর-এর এক সাংসদকে এই কারণে নোটিস দিয়েছে লোকসভার সচিবালয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy