কাঠফাটা রোদ মাথায় নিয়ে গুয়াহাটির ভেটেরনারি কলেজের মাঠ তখন ভিড় ঠাসা।
ঘড়ির কাঁটা সাড়ে ৪টেয় পৌঁছতেই অসমে প্রথম বিজেপি সরকারের শপথগ্রহণের মঞ্চের পাশে এসে দাঁড়াল দু’টি কনভয়। একটি গাড়ি থেকে নামলেন রাজ্যপাল পদ্মনাভ বালকৃষ্ণ আচার্য। আর অন্য গাড়ির সওয়ারি মাটিতে পা রাখতেই উল্লাসে ফেটে পড়ল জনতা। সর্বানন্দ সোনোয়াল মন্ত্রিসভার শপথের দিন সবার নজর কেড়ে নিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীই।
মঞ্চে সেই সময় হাজির ‘মিনি ভারত’। কে ছিলেন না সেখানে! বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ, লালকৃষ্ণ আডবাণী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজনাথ সিংহ, নিতিন গডকড়ি, মহেশ শর্মা, রাজীবপ্রতাপ রুডি, রামবিলাস পাসোয়ান, সুরেশ প্রভু, বাবুল সুপ্রিয়, বেঙ্কাইয়া নাইডু, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ, অনন্ত কুমার, জিতেন্দ্র সিংহ, বিজেপির সাংগঠনিক সম্পাদক রাম লাল, অর্থ প্রতিমন্ত্রী জয়ন্ত সিংহ, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেণ রিজিজু, বিদেশ প্রতিমন্ত্রী ভি কে সিংহ, মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান, রাজস্থানের বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়া, ছত্তীসগঢ়ের রমন সিংহ, গুজরাতের আনন্দীবেন পটেল, ঝাড়খণ্ডের রঘুবর দাস, সিকিমের পবন চামলিং, অরুণাচলপ্রদেশের কালিখো পুল, পঞ্জাবের প্রকাশ সিংহ বাদল, অন্ধ্রপ্রদেশের চন্দ্রবাবু নাইডু, গোয়ার লক্ষ্মীকান্ত পারেক্কর, নাগাল্যান্ডের টি আর জেলিয়াং। হাজির ছিলেন বিজেপি নেতা অর্জুন মুণ্ডা, সুশীলকুমার মোদী। ছিলেন সদ্য-প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈও।
কিন্তু মোদী-ম্যাজিকের সামনে সব কিছুই ম্লান হল।
দুপুর ২টো থেকে রোদের তীব্র তাপে দগ্ধ জনসমুদ্র মুহূর্তে ভুললেন ক্ষোভ, তেষ্টা। মাঠের প্যান্ডেল থেকে শুরু করে লাগোয়া গাছের উপরেও তখন তিলধারণের জায়গা নেই। মোদীর নামে জয়ধ্বনি কিছুটা থামলে রাজ্যের মুখ্যসচিব ভি কে পিপারসেনিয়া রাজ্যপাল ও সর্বানন্দ সোনোয়ালকে মূল শপথমঞ্চে আসতে অনুরোধ করেন।
অসমীয়ায় শপথবাক্য পাঠ করেন সর্বা। ৪টে ৩৬ মিনিটেই শেষ হয় তাঁর শপথগ্রহণ। প্রত্যাশা মতোই সর্বার পরেই ডাকা হয় হিমন্তবিশ্ব শর্মাকে। তুমুল জয়ধ্বনির মধ্যে শপথ নেন তিনি। ঠিক তাঁর পাশে বসেছিলেন গগৈ। তার পর একে একে মন্ত্রগুপ্তির পাঠ নিলেন অগপ সভাপতি অতুল বরা, বিপিএফ বিধায়ক প্রমীলারানি ব্রহ্ম, বরাকের প্রতিনিধি পরিমল শুক্ল বৈদ্য। পরিমলবাবু শপথ নেন বাংলায়। তালিকায় নাম ছিল প্রাক্তন অগপ সভাপতি তথা বর্তমানে বিজেপি বিধায়ক চন্দ্রমোহন পাটোয়ারি, অগপ বিধায়ক কেশব মহন্ত, প্রাক্তন প্রদেশ বিজেপি সভাপতি রঞ্জিৎ দত্ত, বিপিএফ বিধায়ক রিহণ দৈমারির। স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন বিজেপি বিধায়ক নবকুমার দোলে, হিমন্তের সঙ্গে কংগ্রেস ত্যাগ করা বিধায়ক তথা চা গোষ্ঠীর নেতা পল্লবলোচন দাস। সম্ভাব্য মন্ত্রী-তালিকায় নাম থাকা প্রফুল্ল মহন্ত, চন্দন ব্রহ্ম, রঞ্জিৎ দাস, ফণীভূষণ চৌধুরি, সুমন হরিপ্রিয়া বা আঙুরলতারা আপাতত থাকলেন ‘রিজার্ভ বেঞ্চে’।
এর পর হিমন্ত মঞ্চে আসীন তরুণ গগৈয়ের নাম নিতেই মাঠজুড়ে বিদ্রুপের রব ওঠে। অন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সংবর্ধনা দেওয়া হলেও, গগৈকে এ দিন সামনে নিয়ে আসেননি বিজেপি নেতৃত্ব।
প্রকাশ সিংহ বাদল, চন্দ্রবাবু নাইডু, শিবরাজ সিংহ চৌহানরা অসমে জোট সরকারের সাফল্যে শুভেচ্ছা জানান। তাঁরা আশাপ্রকাশ করে বলেন, ‘‘সদাহাস্য সর্বানন্দের শাসনে অসম ভারতের অন্যতম সমৃদ্ধ রাষ্ট্র হয়ে উঠবে।’’
নিজের খুশি লুকিয়ে রাখেননি অমিত শাহ। তিনি বলেন, ‘‘অন্য রাজ্যের ১৪ জন মুখ্যমন্ত্রীর সামনেই বলছি, আমরা সব চেয়ে বেশি খুশি তারিখ ঘোষণা হয়েছিল ১৯ এপ্রিল। সেই দিন থেকেই মুখ্যমন্ত্রী রাজধানী ছাড়া। ফলে বিভিন্ন প্রশাসনিক কাজে বিস্তর সমস্যা দেখা দিয়েছে। গত এক মাস স্ত্রীর জন্য গারো হিলে প্রচার চালিয়েছেন মুকুল। তারপরেও স্ত্রীকে জেতাতে না পেরে আর শিলং না ফিরে সোজা দিল্লি চলে যান। তাঁর ঘনিষ্ঠ মন্ত্রীরাও শিলং ছাড়া। রাহুল গাঁধীর সঙ্গে দেখা করার পরে মুকুল জানান, দলের নেতাদের একাংশ কী ভাবে তাঁর ক্ষতি করতে চাইছেন, তুরার উপ-নির্বাচনে কেমন করে অন্তর্ঘাত করা হয়েছে তা তিনি এআইসিসি সহ-সভাপতিকে বুঝিয়ে বলেছেন।
ফের বৃহস্পতিবার তিনি দিল্লি যেতে পারেন। কারণ দলীয় সূত্রে খবর, লাপাং বিদ্রোহী বিধায়কদের লেখা চিঠি-সহ হাইকম্যান্ডের কাছে হাজির হয়েছেন। নারায়নস্বামী তাঁর ও দলের দুই সাংসদ ভিনসেন্ট পালা ও ওয়ানসুক সিয়েমের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেন। পালাও মুকুল-বিরোধী এবং লাপাং ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। নারায়ণস্বামী দলের বিধায়কদের দিল্লি এসে সরাসরি তাঁদের অভিযোগ জানাতে বলেছেন। এআইসিসি বিলক্ষণ বুঝতে পারছে অসম-অরুণাচলের মতো মেঘালয়েও দলের ভিতরে ক্ষোভ এখনই কমাতে না পারলে বিজেপি তার সুযোগ নিতে ঝাঁপিয়ে পড়বে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy