সুষমা স্বরাজকে দিয়ে চেষ্টা হয়েছিল। রবিশঙ্কর প্রসাদ নিজেও উদ্যোগী হয়েছেন। কিন্তু তাতেও বিচারবিভাগের সঙ্গে দ্বন্দ্ব মিটছে না দেখে নরেন্দ্র মোদী এ বার অরুণ জেটলিকে বিষয়টি দেখার দায়িত্ব দিয়েছেন। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের সঙ্গে সম্পর্ক ভাল করতে মোদী নিজেও সক্রিয় হতে চান।
সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সরাসরি মোদী সরকারকে তোপ দেগেছেন। তাঁর অভিযোগ, কেন্দ্র বিচারপতিদের নিয়োগ আটকে রাখায় বিচার ব্যবস্থাটাই ভেঙে পড়তে চলেছে। বিচারপতি নিয়োগে শেষ কথা বলার অধিকার কার কাছে থাকবে— তা নিয়েই মোদী সরকার ও সুপ্রিম কোর্টের মধ্যে মূল সংঘাত। এত দিন তা সুপ্রিম কোর্টের কলেজিয়ামের হাতেই ছিল। কিন্তু এ বার এই অধিকার কেন্দ্র নিজের কাছে রাখতে চায়। গত ৩ অগস্ট আইন মন্ত্রকের তরফে কলেজিয়ামের কাছে পাঠানো সর্বশেষ প্রস্তাবে এমন কথাই বলা হয়েছে। এই সপ্তাহেই প্রধান বিচারপতি টি এস ঠাকুর-সহ পাঁচজন প্রবীণতম বিচারপতিকে নিয়ে তৈরি কলেজিয়াম এই বিষয়ে বৈঠকে বসবে। সূত্রের খবর, কেন্দ্রের প্রস্তাব খারিজ করে দিতে পারে কলেজিয়াম। কেন্দ্রের যুক্তি, গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট, রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা করেই সরকার সিদ্ধান্ত নেয়। কাজেই জাতীয় নিরাপত্তা ও জনস্বার্থের কথা মাথায় রেখে কেন্দ্রের কাছে বিচারপতি নিয়োগে শেষ কথা বলার অধিকার থাকা উচিত। কিন্তু একে বিচারবিভাগে সরকারের নাক গলানো মনে করে কলেজিয়াম মে মাসেই এমন প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছিল।
সরকারের তরফে মার্চ মাসে প্রথম প্রস্তাব দেওয়া হয়, কলেজিয়াম কোনও নাম হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগের জন্য পাঠালে কেন্দ্র তা খারিজ করে দিতে পারবে। তার পর কলেজিয়াম আর সেই নামটি পাঠাতে পারবে না। এত দিন যদিও কলেজিয়াম তা পারত। আর কেন্দ্রকেও তা মেনেও নিতে হতো। একই সঙ্গে কেন্দ্রের প্রস্তাব ছিল, কলেজিয়ামের বিবেচনার আগে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিদের একটি কমিটি যাবতীয় আবেদন খতিয়ে দেখবে। তা-ও খারিজ করে দেন প্রধান বিচারপতি। এর পর জুন মাসে সুষমা স্বরাজ, প্রাক্তন আইনমন্ত্রী সদানন্দ গৌড়া প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বৈঠক করলেও লাভ হয়নি। আইনমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে রবিশঙ্কর প্রসাদও বিচারপতি ঠাকুরের বাড়িতে গিয়ে আস্থা অর্জনের চেষ্টা করেছেন।
কিন্তু ৩ অগস্টের প্রস্তাবে কেন্দ্র অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিদের কমিটি গড়ার পক্ষেই সওয়াল করেছে। তবে বলা হয়, কমিটিতে কারা থাকবেন, তা সুপ্রিম কোর্টই ঠিক করুক। কেন্দ্র কিছু ক্ষেত্রে সুর নরম করলেও কলেজিয়ামের তরফে এই নতুন প্রস্তাব খারিজ করে দেওয়ারই সম্ভাবনা। ফলে বিচারপতি নিয়োগের নতুন প্রক্রিয়া বা ‘মেমোরান্ডাম অফ প্রসিডিওর’ চূড়ান্ত হতে দেরি হতে পারে।
প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন তুলেছেন, নতুন প্রক্রিয়া তৈরি হতে দেরি হলেও ফেব্রুয়ারি থেকে কেন্দ্রের কাছে যে ৭৫ জনের নাম হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগের জন্য পাঠানো হয়েছে, তা নিয়ে সিদ্ধান্ত হচ্ছে না কেন! এর ফলে ২৪টি হাইকোর্টে ৪৭৮টি বিচারপতির পদ ফাঁকা পড়ে রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টকে যেন সন্তুষ্ট করতেই আইনমন্ত্রী জানিয়েছেন, ২৫০টি নিয়োগের ফাইল নিয়ে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিচারপতি নিয়োগের প্রক্রিয়া নিয়ে ঐকমত্য তৈরির জন্যও তাঁরা সব রকম চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন রবিশঙ্কর। তবে কংগ্রেস নেতা আহমেদ পটেলের অভিযোগ, ‘‘সুপ্রিম কোর্টে যা হচ্ছে, তা মোদী সরকারের সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠাকে ছোট করারই আর একটি উদাহরণ।’’ রবিশঙ্কর যদিও যুক্তি দিয়েছেন, ‘‘সরকার বিচারবিভাগকে সম্মান করে, তার স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে।’’
এরই মধ্যে সুব্রহ্মণ্যম স্বামী আবার অ্যাটর্নি জেনারেল মুকুল রোহতগিকেই সরানোর দাবি তুলেছেন। তাঁর যুক্তি, মুকুলের জন্যই একের পর এক মামলায় সরকারকে সুপ্রিম কোর্টে হারতে হচ্ছে। মুকুল জেটলির ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। সে জন্যই আক্রমণ কি না, সেই প্রশ্নও উঠেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy