Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
National news

ইনিই ঝাড়খণ্ডের ওয়াটারম্যান, কেন জানেন?

নিজের স্ত্রীর মৃত্যু প্রচণ্ড নাড়িয়ে দিয়েছিল বিহারের দশরথ মাঝিকে। ২১ বছর ধরে একটা হাতুড়ি আর ছেনির সাহায্যে আস্ত দুর্গম পাহাড় কেটে রাস্তা বানিয়ে ফেলেছিলেন তিনি। আজ সারা বিশ্ব তাঁকে মাউন্টেন ম্যান বলেই চেনে।

সংবাদ সংস্থা
রাঁচি শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৯ ১০:২৪
Share: Save:
০১ ১৫
নিজের স্ত্রীর মৃত্যু প্রচণ্ড নাড়িয়ে দিয়েছিল বিহারের দশরথ মাঝিকে। ২১ বছর ধরে একটা হাতুড়ি আর ছেনির সাহায্যে আস্ত দুর্গম পাহাড় কেটে রাস্তা বানিয়ে ফেলেছিলেন তিনি। আজ সারা বিশ্ব তাঁকে মাউন্টেন ম্যান বলেই চেনে।

নিজের স্ত্রীর মৃত্যু প্রচণ্ড নাড়িয়ে দিয়েছিল বিহারের দশরথ মাঝিকে। ২১ বছর ধরে একটা হাতুড়ি আর ছেনির সাহায্যে আস্ত দুর্গম পাহাড় কেটে রাস্তা বানিয়ে ফেলেছিলেন তিনি। আজ সারা বিশ্ব তাঁকে মাউন্টেন ম্যান বলেই চেনে।

০২ ১৫
কিন্তু জানেন কি ঠিক তার পাশের রাজ্য ঝাড়খণ্ডেও এমন ব্যক্তি রয়েছেন, যিনি নিজের কথা না ভেবে ৫১ গ্রামের বাসিন্দাদের মুক্তি দিয়েছেন জলসঙ্কট থেকে। আজ যাঁকে সারা দেশ ওয়াটারম্যান বলে জানে।

কিন্তু জানেন কি ঠিক তার পাশের রাজ্য ঝাড়খণ্ডেও এমন ব্যক্তি রয়েছেন, যিনি নিজের কথা না ভেবে ৫১ গ্রামের বাসিন্দাদের মুক্তি দিয়েছেন জলসঙ্কট থেকে। আজ যাঁকে সারা দেশ ওয়াটারম্যান বলে জানে।

০৩ ১৫
রাঁচি থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে বেরো ব্লকের ছোট গ্রাম খাকসিটোলির কৃষক পরিবারে জন্ম সিমন ওঁরাও-এর। মাত্র চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন। তার বাবা-ঠাকুরদার সঙ্গে তিনিও মাঠের কাজে হাত লাগান।

রাঁচি থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে বেরো ব্লকের ছোট গ্রাম খাকসিটোলির কৃষক পরিবারে জন্ম সিমন ওঁরাও-এর। মাত্র চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন। তার বাবা-ঠাকুরদার সঙ্গে তিনিও মাঠের কাজে হাত লাগান।

০৪ ১৫
তাঁর গ্রাম চাষবাসের জন্য মূলত বৃষ্টির জলের উপরই নির্ভরশীল। জলের সঙ্কট থাকায় বছরের একটা নির্দিষ্ট সময়েই চাষাবাদ করতে পারতেন গ্রামবাসীরা। তারপরই গ্রামে নেমে আসত তীব্র জলসঙ্কট এবং অভাব।

তাঁর গ্রাম চাষবাসের জন্য মূলত বৃষ্টির জলের উপরই নির্ভরশীল। জলের সঙ্কট থাকায় বছরের একটা নির্দিষ্ট সময়েই চাষাবাদ করতে পারতেন গ্রামবাসীরা। তারপরই গ্রামে নেমে আসত তীব্র জলসঙ্কট এবং অভাব।

০৫ ১৫
গ্রামবাসীদের এই সমস্যা দেখেই সিমন উপলব্ধি করেন তাঁর গ্রামে জল সঞ্চয়ের প্রয়োজনীয়তা কতটা। ১৯৬১ সাল থেকে সমস্ত গ্রামবাসীদের এক করে তিনি পাহাড়ের পাদদেশে একটি বাঁধ দিয়ে জলাশয় গড়ে তোলেন।

গ্রামবাসীদের এই সমস্যা দেখেই সিমন উপলব্ধি করেন তাঁর গ্রামে জল সঞ্চয়ের প্রয়োজনীয়তা কতটা। ১৯৬১ সাল থেকে সমস্ত গ্রামবাসীদের এক করে তিনি পাহাড়ের পাদদেশে একটি বাঁধ দিয়ে জলাশয় গড়ে তোলেন।

০৬ ১৫
সেটা অবশ্য টেকেনি। বর্ষা আসতেই জলের ভারে বাঁধ ভেঙে যায়। এর পরের বছর সিমনের তত্ত্বাবধানে আরও একটি জলাশয় বানান গ্রামবাসীরা। তাতেও ফাটল ধরে যায়।

সেটা অবশ্য টেকেনি। বর্ষা আসতেই জলের ভারে বাঁধ ভেঙে যায়। এর পরের বছর সিমনের তত্ত্বাবধানে আরও একটি জলাশয় বানান গ্রামবাসীরা। তাতেও ফাটল ধরে যায়।

০৭ ১৫
তৃতীয় বার স্থানীয় প্রশাসনের সাহায্য নিয়ে তিনি আরও শক্তিশালী বাঁধ দিয়ে একটা জলাশয় গড়ে তোলেন। সেই জলাশয় আজও চাষাবাদে সাহায্য করে চলেছে গ্রামবাসীদের।

তৃতীয় বার স্থানীয় প্রশাসনের সাহায্য নিয়ে তিনি আরও শক্তিশালী বাঁধ দিয়ে একটা জলাশয় গড়ে তোলেন। সেই জলাশয় আজও চাষাবাদে সাহায্য করে চলেছে গ্রামবাসীদের।

০৮ ১৫
এর পর তিনি দেশবলী এবং ঝারিয়ার আরও দুটো বাঁধ বানান। সব মিলিয়ে মোট ৫টা বাঁধ গড়েছিলেন। এর পাশাপাশি হরিহরপুর, জামতোলি, বেইতোলি, ভাসনন্দা গ্রামে অনেকগুলো পুকুর করেন।

এর পর তিনি দেশবলী এবং ঝারিয়ার আরও দুটো বাঁধ বানান। সব মিলিয়ে মোট ৫টা বাঁধ গড়েছিলেন। এর পাশাপাশি হরিহরপুর, জামতোলি, বেইতোলি, ভাসনন্দা গ্রামে অনেকগুলো পুকুর করেন।

০৯ ১৫
পুকুর, কুয়োর পাশাপাশি গ্রামে আজও প্রচুর বৃক্ষরোপণ করে চলেছেন তিনি। ১৯৬৪ সালে আশপাশের ৫১ গ্রামের বাসিন্দারা তাঁকে আদিবাসীদের রাজা মনোনীত করেন- পারহা রাজা। রাজা হয়েই তিনি গ্রামের চারপাশে জমিতে বৃক্ষরোপণ উৎসব চালু করেন। প্রতি বছর ওই জমিতে ১০০০ গাছ লাগানো হয়।

পুকুর, কুয়োর পাশাপাশি গ্রামে আজও প্রচুর বৃক্ষরোপণ করে চলেছেন তিনি। ১৯৬৪ সালে আশপাশের ৫১ গ্রামের বাসিন্দারা তাঁকে আদিবাসীদের রাজা মনোনীত করেন- পারহা রাজা। রাজা হয়েই তিনি গ্রামের চারপাশে জমিতে বৃক্ষরোপণ উৎসব চালু করেন। প্রতি বছর ওই জমিতে ১০০০ গাছ লাগানো হয়।

১০ ১৫
কী ফল পেলেন এই প্রচেষ্টার? রুক্ষ-শুষ্ক ভূমির ২০০০ একর জুড়ে এখন চাষাবাদ হচ্ছে। ২০ হাজার মেট্রিক টন সব্জি উৎপন্ন হচ্ছে। যে সব্জি রাঁচি, জামশেদপুরে চলে যায়।

কী ফল পেলেন এই প্রচেষ্টার? রুক্ষ-শুষ্ক ভূমির ২০০০ একর জুড়ে এখন চাষাবাদ হচ্ছে। ২০ হাজার মেট্রিক টন সব্জি উৎপন্ন হচ্ছে। যে সব্জি রাঁচি, জামশেদপুরে চলে যায়।

১১ ১৫
যাঁর প্রচেষ্টায় প্রাণ ফিরে পেল ঝাড়খণ্ডের বেরো। যাঁর জন্য অর্থনীতির সবল হয়ে উঠল বেরোর, সেই ওয়াটারম্যান কী করছেন?

যাঁর প্রচেষ্টায় প্রাণ ফিরে পেল ঝাড়খণ্ডের বেরো। যাঁর জন্য অর্থনীতির সবল হয়ে উঠল বেরোর, সেই ওয়াটারম্যান কী করছেন?

১২ ১৫
২০১৬ সালে তাঁকে পদ্মশ্রী সম্মান দেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়।

২০১৬ সালে তাঁকে পদ্মশ্রী সম্মান দেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়।

১৩ ১৫
গ্রামবাসীদের জন্য জলাশয় বানাতে নিজেও ঋণ নিয়েছিলেন অনেকটা। সেই ঋণের ভার নিয়েই এখন দিন গুজরান ওয়াটারম্যানের। তাঁর বাড়ির প্রতিটা কোণে দারিদ্রের ছাপ স্পষ্ট। খড়ের ছাউনি দেওয়া ঘরের চাল। বর্ষা এলেই জল পড়ে ঘরে।

গ্রামবাসীদের জন্য জলাশয় বানাতে নিজেও ঋণ নিয়েছিলেন অনেকটা। সেই ঋণের ভার নিয়েই এখন দিন গুজরান ওয়াটারম্যানের। তাঁর বাড়ির প্রতিটা কোণে দারিদ্রের ছাপ স্পষ্ট। খড়ের ছাউনি দেওয়া ঘরের চাল। বর্ষা এলেই জল পড়ে ঘরে।

১৪ ১৫
ঘরে দারিদ্রের ছাপ পড়লেও চোখে-মুখে কিন্তু কোনও কষ্ট বা আক্ষেপ নেই তাঁর। ঋণের ভার নিয়েও মাথা উঁচু করে চলেন ৮৪ বছরের ঝাড়খণ্ডের ওয়াটারম্যান।

ঘরে দারিদ্রের ছাপ পড়লেও চোখে-মুখে কিন্তু কোনও কষ্ট বা আক্ষেপ নেই তাঁর। ঋণের ভার নিয়েও মাথা উঁচু করে চলেন ৮৪ বছরের ঝাড়খণ্ডের ওয়াটারম্যান।

১৫ ১৫
গত ৬০ বছর ধরে তাঁর একটাই রুটিন। ভোর সাড়ে ৪টেয় ওঠা। তারপর মাঠে গিয়ে গাছের চারাগুলোর দেখভাল করা, গ্রামের চারপাশে তাঁর তৈরি করা জঙ্গলের ভিতরে গিয়ে গাছের উপর নজর দেওয়া এবং তারপর ফের দুপুরে বাড়ি ফিরে আসা।

গত ৬০ বছর ধরে তাঁর একটাই রুটিন। ভোর সাড়ে ৪টেয় ওঠা। তারপর মাঠে গিয়ে গাছের চারাগুলোর দেখভাল করা, গ্রামের চারপাশে তাঁর তৈরি করা জঙ্গলের ভিতরে গিয়ে গাছের উপর নজর দেওয়া এবং তারপর ফের দুপুরে বাড়ি ফিরে আসা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy