বাস্তবের সেই সৎ এবং নির্ভীক নায়কই হলেন লোকেশ কুমার জাঙ্গির। সততার ফলও ভুগতে হয়েছে তাঁকে।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০২১ ১২:৪৫
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
দুর্নীতিগ্রস্তদের ভিড়ে সততার সঙ্গে কাজ করতে পারছেন না নায়ক। রাজনৈতিক চাপে বারবারই তাঁকে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। পর্দায় এ রকম চরিত্র দেখে আমরা অভ্যস্ত। কিন্তু বাস্তবের ‘নায়ক’কে চোখে দেখার সৌভাগ্য খুব কমই হয়।
০২২০
বাস্তবের সেই সৎ এবং নির্ভীক নায়কই হলেন লোকেশ কুমার জাঙ্গির। সততার ফলও ভুগতে হয়েছে তাঁকে। পাঁচ বছরেরও কম সময়ে ন’বার বদলি করা হয়েছে তাঁকে! খুনের হুমকিও পেয়েছেন।
০৩২০
এই নির্ভীক আইএএস অফিসারের জন্ম মধ্যপ্রদেশের ভোপালে। মেধাবী হওয়ায় স্কুলেও তাঁর খুব নামডাক ছিল।
০৪২০
ছোট থেকেই তিনি স্বপ্ন দেখতেন সৎপথে এমন কিছু করবেন যা তাঁকে অনেক খ্যাতি এবং প্রচুর টাকা এনে দেবে।
০৫২০
তবে প্রথম থেকে সিভিল সার্ভিসের প্রতি আগ্রহ জন্মায়নি তাঁর। বরং নিজের মেধা কাজে লাগিয়েছিলেন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে।
০৬২০
কম্পিউটার সায়েন্সে বিটেক পাশ করার পর তিনি ২০০৮ সালে টিসিএস-এ কাজে যোগ দেন। খুব মন দিয়ে সেই কাজই করছিলেন তিনি।
০৭২০
চার-পাঁচ বছর সেখানে কাজ করার পর তিনি সিভিল সার্ভিসের জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। দিল্লি চলে আসেন।
০৮২০
২০১৪ সালে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তিনি। শুধু উত্তীর্ণই হননি একেবারে প্রথম সারিতেই নাম ছিল তাঁর।
০৯২০
২০১৬ সালে মধ্যপ্রদেশের সুপুর জেলার এসডিএম হয়ে প্রথম কাজে যোগ দেন তিনি। সমাজের নীচের স্তরের মানুষদের উপরে তুলে আনার জন্য ভাল কাজ করছিলেন তিনি। কিন্তু বাধ সাধে তাঁর অত্যন্ত সৎ এবং নির্ভীক মনোভাব।
১০২০
দুর্নীতি একেবারেই মানতে পারেন না। দুর্নীতি দেখলে অন্য অনেকের মতো মুখ বুজে থাকতে পারেন না। প্রতিবাদ করেন।
১১২০
এই কারণে চাকরি জীবনের প্রথম ৫৪ মাসেই ন’বার বদলি হয়ে গিয়েছেন তিনি।
১২২০
কখনও এসডিএম, কখনও কোনও দফতরের চিফ এগজিকিউটিভ অফিসার, কখনও নগরোন্নয়ন দফতরের মুখ্য সচিব, গুণার অতিরিক্ত কালেক্টর, রাজ্য শিক্ষা কেন্দ্রের অতিরিক্ত ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসাবে বদলি করা হয়েছে তাঁকে।
১৩২০
তাঁকে বর্তমানে ফের রাজ্য শিক্ষা কেন্দ্রের অতিরিক্ত ম্যানেজিং ডিরেক্টর পদে বদলি করা হয়েছে। নিপুণতার সঙ্গে এই পদের দায়িত্বই সামলাচ্ছেন তিনি।
১৪২০
সম্প্রতি এই আইএএস অফিসারকে নিয়ে বিস্তর চর্চা শুরু হয়েছে নেটমাধ্যমে। তাঁর জীবনের সঙ্গে হিন্দি ছবির তুলনা করা হচ্ছে। ছবিতে যেমন সৎ অফিসারদের বারবার বদলি করা হয়, তাঁকে নিয়েও এই মন্তব্যগুলিই ভেসে আসছে।
১৫২০
তাঁকে নিয়ে চর্চা শুরু হওয়ার কারণই হল সাম্প্রতিক কিছু ঘটনাবলী। সম্প্রতি মধ্যপ্রদেশের আইএএস অফিসারদের একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
১৬২০
৩৫ বছরের এই আইএএস অফিসারের ‘অপরাধ’ ছিল তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন। তিনি ওই আইএএস-দের গ্রুপে প্রশাসনিক ব্যবস্থার অপারগতা সম্পর্কে একটি পোস্ট দেন। ইউপিএসসি পরীক্ষাকে হাস্যকর হিসাবে উল্লেখ করেন।
১৭২০
তাঁকে ওই গ্রুপ থেকে শুধু সরিয়েই দেওয়া হয়নি, তাঁকে শো-কজও করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়, তিনি নাকি উচ্চপদস্থ এক অফিসারের ফোনে আড়ি পেতেছিলেন। যদিও শো-কজের জবাবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি।
১৮২০
উল্টে তাঁর অভিযোগ, ওই ঘটনার পর থেকেই প্রাণ সংশয়ে ভুগছেন তিনি এবং তাঁর পরিবার। দাবি, উড়ো ফোনে তাঁকে এবং তাঁর সন্তানকে খুনের হুমকিও দেওয়া হয়েছে।
১৯২০
নির্ভীক এই আইএএস নিজের পরিবারের সুরক্ষা বাড়ানোর জন্য আবেদন করেছেন ঠিকই, তা বলে ভয় পেয়ে সত্যের পথ ছাড়তে চান না।
২০২০
তাঁর স্পষ্ট জবাব, “আইনের বেড়াজালে এখন আমার দু’হাতই বাঁধা। তাই ইচ্ছা থাকলেও অনেক কিছুই সামনে আনতে পারছি না। অনেক ক্ষেত্রে প্রতিবাদটুকুও করতে পারছি না।” তবে অবসরের পরে তিনি সব জানাবেন। দুর্নীতি নিয়ে একটা বইও লিখবেন বলে জানিয়েছেন লোকেশ।