More than 100 times taller than Mount Everest, two peaks lie deep beneath the Earth's surface have been discovered dgtl
Mount Everest
এভারেস্টের চেয়ে ১০০ গুণ উঁচু! খোঁজ মিলল পৃথিবীর পেটে লুকিয়ে থাকা দুই দানব পর্বতের
ভূগর্ভের কেন্দ্রমণ্ডল ও গুরুমণ্ডলের সীমানায় ভূত্বকের নীচে অর্ধ-কঠিন অঞ্চলে খোঁজ পাওয়া গিয়েছে দু’টি দানবীয় আকৃতির পাহাড়ের। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এগুলি প্রায় ৮.৮ কিলোমিটার উঁচু।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০২৫ ১৩:০৩
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু পর্বতও এদের কাছে বামন! উচ্চতায় এভারেস্টের থেকে ১০০ গুণ উঁচু। এই পৃথিবীর বুকেই রয়েছে তাদের অস্তিত্ব। যদিও তা ভূপৃষ্ঠের উপরে নয়। মাটির গভীরে, আফ্রিকা এবং প্রশান্ত মহাসাগরের সীমানায় অবস্থিত এই জোড়া পর্বত।
০২১৮
৮,৮৪৮ মিটার। পৃথিবীর স্থলভাগে সবচেয়ে উঁচু স্থানের উচ্চতা আপাতত এটাই। মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ার চেয়ে উঁচু কোনও অংশ এখনও আবিষ্কৃত হয়নি পৃথিবীতে। সেই তকমা কি তবে হারাতে চলেছে এভারেস্ট? মাউন্ট এভারেস্টের দুই ‘দাদা’র খোঁজ মিলেছে পৃথিবীতেই।
০৩১৮
পৃথিবীর কেন্দ্রমণ্ডল ও গুরুমণ্ডলের সীমানায় ভূত্বকের নীচে অর্ধ-কঠিন অঞ্চলে খোঁজ পাওয়া গিয়েছে দু’টি দানবীয় আকৃতির পাহাড়ের। এই জোড়া পাহাড় প্রায় ১ হাজার কিলোমিটার উঁচু এবং পৃথিবীর গভীরে রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
০৪১৮
সম্প্রতি এই আবিষ্কারের কথা নেচার পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। সুবিশাল দুই পর্বতমালার হদিসও পেয়েছেন ভূবিজ্ঞানীরা। এই আবিষ্কার নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন তাঁরা।
০৫১৮
বিজ্ঞানীদের ধারণা, এই পর্বতগুলো অন্তত ৫০ কোটি বছর পুরনো। বিজ্ঞানীরা এ-ও অনুমান করছেন, সম্ভবত ৪০০ কোটি বছর আগে পৃথিবী গঠনের সময় থেকেই এগুলি এখানে অবস্থান করছে। সেগুলির অবস্থান সাময়িক হতে পারে, এমন ধারণাও উড়িয়ে দেননি গবেষকেরা।
০৬১৮
গবেষণাদলের প্রধান নেদারল্যান্ডসের ইউট্রেখট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক আরওয়েন ডিউস। ভূতত্ত্ব এবং পৃথিবীর গঠন সংক্রান্ত বিষয়ের এই অধ্যাপক জানিয়েছেন, কী ভাবে এই পর্বতগুলির জন্ম হয়েছে সে সম্পর্কে এখনও সঠিক কারণ খুঁজে বার করা সম্ভব হয়নি।
০৭১৮
গবেষণায় প্রাথমিক ভাবে যা উঠে এসেছে তাতে বলা হয়েছে, টেকটনিক প্লেটের একটি সুবিশাল ক্ষেত্র দিয়ে বেষ্টিত আফ্রিকা এবং প্রশান্ত মহাসাগরের নীচে অবস্থিত এই স্থানগুলি। পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে প্লেটগুলি ‘সাবডাকশন’ নামক একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ম্যান্টল বা গুরুমণ্ডলের গভীরে ডুবে যায়।
০৮১৮
এই প্রক্রিয়ায় টেকটনিক প্লেটগুলো পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে প্রায় তিন হাজার কিলোমিটার গভীরে পৌঁছে যায়।
০৯১৮
এই এলাকাগুলিকে ‘লার্জ লো সেসমিক ভেলোসিটি’ অঞ্চল নামে অভিহিত করেছেন বিজ্ঞানীরা। কারণ এই অঞ্চলে এলেই পৃথিবীতে ভূমিকম্পের ফলে তৈরি হওয়া তরঙ্গগুলি ধীর গতিপ্রাপ্ত হয়। কম্পনের গতি দেখেই বিজ্ঞানীরা অনুমান করেন এই অঞ্চলে এমন কিছু বাধা রয়েছে যার ফলে গতি বাধা পাচ্ছে।
১০১৮
চিকিৎসকেরা আল্ট্রাসাউন্ড ব্যবহার করে যে ভাবে মানুষের শরীরের ভিতরের অংশ নিরীক্ষণ করেন, ঠিক একই ভাবে পৃথিবীর অভ্যন্তরে থাকা যে কোনও বস্তুর উপস্থিতি ধরা পড়ে এই ভূকম্পনের মাধ্যমে।
১১১৮
যখন এই তরঙ্গগুলি বিভিন্ন পদার্থের মধ্যে দিয়ে ভ্রমণ করে, তখন তারা গতি পরিবর্তন করে। এই অসঙ্গতি ধরা পড়লেই বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হন সেখানে অজানা কিছু উপস্থিতি রয়েছে। এই ক্ষেত্রে, এই পর্বতগুলির অঞ্চলে তরঙ্গগুলি উল্লেখযোগ্য ভাবে ধীর হয়ে যায়, যা অস্বাভাবিক কিছু নির্দেশ করে।
১২১৮
ভূমিকম্পের সময় সৃষ্ট তরঙ্গগুলোর মাধ্যমে গবেষকেরা ভূগর্ভস্থ এই পর্বতের অস্তিত্ব শনাক্ত করেন। ডিউস বলেন, ‘‘আমরা লক্ষ্য করেছি, এই জায়গায় ভূকম্পন তরঙ্গের গতি ধীর হয়ে যায়। এ থেকেই এই পর্বতগুলোর সন্ধান পাওয়া গিয়েছে।’’
১৩১৮
ডিউসের সহ-গবেষক সুজ়ানিয়া তালাভেরা-সোজ়া জানান, ভূকম্পনের তরঙ্গ যখন পৃথিবীর গভীরে প্রবেশ করে তখন তাদের শক্তিক্ষয় হয়। এ ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে ‘লার্জ লো সেসমিক ভেলোসিটি’ অঞ্চলে প্রবেশ করার পর কম্পনের তরঙ্গগুলি শক্তি হারানোর পরিমাণ অনেক কম । বরং সেখানকার শব্দ ছিল বেশ তীক্ষ্ণ।
১৪১৮
পর্বতগুলিকে বেষ্টন করে থাকা আশপাশের টেকটনিক প্লেটের তাপমাত্রা অন্যান্য অংশের তুলনায় বেশি গরম বলে দাবি করেছেন গবেষকেরা।
১৫১৮
সুজ়ানিয়া জানিয়েছেন, গবেষকদের ধারণা ছিল গরম এলাকার টেকটনিক প্লেটে তরঙ্গ বেশি দুর্বল হবে। তবে এখানে তাঁরা তেমন কিছু দেখেননি। বরং তুলনামূলক ভাবে ঠান্ডা অঞ্চলে টেকটনিক প্লেটের তরঙ্গের অনেক বেশি শক্তিক্ষয় হয়েছে। এই আচরণটি গবেষকদের কাছে খানিকটা অপ্রত্যাশিত ছিল।
১৬১৮
গবেষকদের ধারণা, পৃথিবীর গভীরে নিমজ্জিত দানবাকৃতির পর্বতগুলি আশপাশের প্লেটের চেয়ে অনেক বেশি প্রাচীন। বিশাল আকার এবং খনিজের দানা অনেক বড় হওয়ার কারণে তরঙ্গের শক্তি শোষণ করতে এরা কম সক্ষম।
১৭১৮
সুজ়ানিয়া বলেন, ‘‘খনিজগুলির দানা বড় হওয়ার অর্থ হল এই পাহাড়ের জন্ম এক দিনে হয়নি। এটি প্রমাণ করে যে ‘লার্জ লো সেসমিক ভেলোসিটি’ অঞ্চলের এলাকা আশপাশের টেকটনিক প্লেটের চেয়ে অনেক পুরনো।’’
১৮১৮
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পর্বতগুলোর গঠন এবং বয়স সম্পর্কে আরও গবেষণা প্রয়োজন। আরও ভাল ভাবে নিরীক্ষণ করলে পৃথিবীর গভীরের অনেক অজানা রহস্য উন্মোচিত হবে। পৃথিবীর ইতিহাস এবং ভূতাত্ত্বিক গঠনের এই বিশাল অংশ সম্পর্কে নতুন ধারণা পাওয়ার আশা করছেন বিজ্ঞানীরা।