বাস্তবের ‘মাউন্টেন ম্যান’, বিহারের দশরথ মাঁঝির কীর্তির কাহিনি পর্দায় এসেছে সম্প্রতি।। এ বার আরও এক ‘দশরথ’-এর খোঁজ মিলল মহারাষ্ট্রের আহমেদনগরে। রাজারাম ভাপকর। টানা ৫৭টা বছরের চেষ্টায় পাহাড় ভেঙে ৪০ কিলোমিটারের রাস্তা বানিয়ে ফেলেছেন তিনি।
সোজা রাস্তা ছিল না গুন্ডেগাঁওয়ের বাসিন্দাদের। প্রত্যন্ত পাহাড়ি গ্রামটা থেকে দেউলগাঁও সদরে কোনও কাজে যেতে হলে ঘুরতে হতো প্রায় ৩০ কিলোমিটার পথ। অথচ সরলরেখায় সেই দূরত্বই মোটে দশ কিলোমিটারের। মাঝখানে রয়েছে পাহাড়। সেই পাহাড় ভেঙেই ৪০ কিলোমিটারের সহজ রাস্তা তৈরি করলেন মহারাষ্ট্রের আহমেদনগরের বাসিন্দা ভাপকর। গ্রাম থেকে সদরে যেতে এখন পেরোতে হয় মোটে দশ কিলোমিটার পথ।
সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত ‘মাউন্টেন ম্যান মাঁঝি’-র গল্প যেন আরও এক বার সত্যি করেছেন এই মানুষটি। স্থানীয় গ্রামবাসীর কথায়, ‘‘আগে সাইকেল নিয়েও মুশকিল হতো এত লম্বা পথ পেরোনো। এখন বড় গাড়ি চলার পথ বানিয়ে ফেলেছেন ভাপকর গুরুজি।’’
পরনে সাদা জামা-পাজামা। মাথায় টুপি। এই বেশেই তাঁকে দেখে এসেছেন গ্রামবাসীরা। স্বাধীনতার পরেই সরকারের কাছে আবেদন জানানো হয়। রাস্তা বানানোর জন্য। সাড়া মেলেনি। অতএব একলা চলো। গুন্ডেগাঁও থেকে কোলেগাঁও হয়ে দেউলগাঁও পৌঁছনোর ঘুরপথটাকে সরলরেখা করার চেষ্টায় লেগে পড়েন ভাপকর। ১৯৫৭ সালে জেলা পরিষদের স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন তিনি। পরের বছর থেকেই একা হাতে কাজ শুরু। একটা একটা করে পাথর ভেঙেছেন। কিছু শ্রমিক কাজে যোগ দিলে তাঁদের পারিশ্রমিক নিজের পকেট থেকেই দিতেন তিনি। বললেন, ‘‘আমার বেতনের অর্ধেক এই কাজে লাগাতাম আমি।’’ তাঁর আক্ষেপ, সরকার থেকে একটা পয়সাও মেলেনি। ১৯৯১ সালে অবসর নেওয়ার পরেও এককালীন অর্থ পেলে তা দিয়ে কিছু আধুনিক যন্ত্র আনিয়েছেন। পেনশনের টাকাও রাস্তার কাজেই ব্যয় করেন বলে জানালেন ভাপক।
বয়স হয়েছে ৮৪। কাজ প্রায় শেষ। ৫৭ বছর ধরে খেটে ৪০ কিলোমিটার পথ বানিয়ে থেমেছেন ভাপকর। কিন্তু এত কঠিন কাজের স্বীকৃতি কি মিলেছে? ‘‘বহু মানুষ সম্মান করেন। আর আমার গ্রামের মানুষগুলোর সহজ যাতায়াতের সুবিধা হয়েছে। এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কী হতে পারে’’, হেসে বললেন ভাপকর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy