সমাপয়েৎ: বিজেপি নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়ের হাত থেকে মিষ্টি খেয়ে দু’দিনের অনশন ভাঙলেন মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান। রবিবার ভোপালে। ছবি: পিটিআই।
চাপের মুখে অবশেষে কৃষিঋণ মকুব নিয়ে পিছু হটল মহারাষ্ট্র এবং মধ্যপ্রদেশের বিজেপি সরকার। রবিবার আন্দোলনকারী কৃষকদের সঙ্গে কথা বলার পরে কৃষিঋণ মকুবের আশ্বাস দিয়েছে মহারাষ্ট্র। আর ভোপালে অনির্দিষ্ট কালের অনশন শুরু করার দু’দিনের মাথায় তা প্রত্যাহার করে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান জানিয়েছেন, রাজ্যের ছ’লক্ষ কৃষকের ঋণ মকুবের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। দুই বিজেপি শাসিত রাজ্যের এই সিদ্ধান্তের পরেই একই দাবি নিয়ে সুর চড়াতে শুরু করেছেন হরিয়ানা এবং তামিলনাড়ুর কৃষকেরা। অন্য রাজ্যগুলিতেও জোট বাঁধছেন কৃষকেরা। সব মিলিয়ে কৃষিঋণ মকুব নিয়ে দেশজোড়া কৃষক অসন্তোষের মুখে রীতিমতো জেরবার মোদী।
অথচ এই কৃষিঋণ মকুব নিয়ে গত তিন বছর ধরেই আপত্তি মোদী সরকারের। আপত্তি ফসলের বর্ধিত দাম দেওয়া নিয়েও। গত বছর বিপুল ফলনের পরেও লোকসানের বোঝা নিয়ে নাজেহাল কৃষকেরা নেমেছিলেন পথে। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের দেখানো পথে হেঁটে কৃষকদের দাবিকে গোড়ার দিকে গুরুত্বই দেয়নি বিজেপি শাসিত একের পর এক রাজ্য। মধ্যপ্রদেশের মন্দসৌরে পুলিশের গুলিতে ৯ কৃষকের মৃত্যুতে মোদী সরকারের তিন বছর পূর্তি উৎসব ফিকে হয়ে যাওয়ার পরেই ছবিটা দ্রুত বদলায়। যার জেরে রবিবার দুই রাজ্যের বিজেপি সরকারের পিছু হটার সিদ্ধান্ত।
টানা এগারো দিন ধরে মহারাষ্ট্রের কৃষকরা রাস্তায় দুধ-আনাজ ছড়িয়ে বিক্ষোভ দেখালেও কৃষি ঋণ মকুব নিয়ে সুর নরম করছিল না দেবেন্দ্র ফডণবীশের সরকার। মন্দসৌর কাণ্ডের পরে রবিবার সরকার ও চাষিদের মধ্যে দ্বিতীয় বৈঠকের পরে ঋণ মকুবের কথা ঘোষণা করেন রাজস্বমন্ত্রী চন্দ্রকান্ত পাটিল। এর পরেই আন্দোলন প্রত্যাহার করে কৃষকেরা জানিয়েছেন, ২৫ জুলাইয়ের মধ্যে সরকারকে ওই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত করতে হবে।
পিছু হটে সাময়িক ভাবে স্বস্তি পেল মধ্যপ্রদেশের শিবরাজ সিংহ চৌহানের সরকারও। আগামী বছর রাজ্যে বিধানসভা ভোট। তার আগে পুলিশের গুলিতে ৯ কৃষকের মৃত্যু ঘোর সঙ্কটের মুখে ঠেলে দিয়েছে শিবরাজের সরকারকে। এ নিয়ে খোদ প্রধানমন্ত্রীর কড়া বার্তার পরে বিষয়টি থেকে নজর ঘোরাতে অনশনেও বসেছিলেন। কিন্তু তাতে বিশেষ লাভ হয়নি। উল্টে নানা মহলের বিদ্রুপ হজম করতে হচ্ছিল।
আরও পড়ুন: মহারাষ্ট্রে কৃষিঋণ মকুব, চাপে মধ্যপ্রদেশ, হরিয়ানা, তামিলনাড়ুর সরকার
এই পরিস্থিতিতে আগের অবস্থান বজায় রাখার সাহস আর দেখাতে পারেননি শিবরাজ। কৃষক প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বসে লাভজনক দামে ফসল কেনা এবং ঋণ মকুবের বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেন তিনি। কৃষক বিক্ষোভের মুখ হয়ে ওঠা মন্দসৌরে অবশ্য আজও ১৪৪ ধারা জারি রেখেছে তাঁর সরকার। রবিবার কার্ফু উপেক্ষা করে সেখানে যেতে গিয়ে গ্রেফতার হন সমাজকর্মী যোগেন্দ্র যাদব, মেধা পাটকর, স্বামী অগ্নিবেশ-সহ ৩০ জন।
মোদী সরকারের দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে এ দিনই কেন্দ্রের ফসল নীতির সমালোচনায় সরব হয়েছে আরএসএস-ঘনিষ্ঠ ‘ভারতীয় কিষাণ সঙ্ঘ’। গোটা দেশে কৃষক বিক্ষোভের জন্য সরকারের ভুল কৃষি নীতিকেই দায়ী করে সংগঠনের সর্বভারতীয় সম্পাদক মোহিনী মোহন মিশ্র বলেন, ‘‘প্রথমে ডাল চাষে উৎসাহ দিয়ে তার পর বিদেশ থেকে ডাল আমদানি করা হয়! গমের ক্ষেত্রে বিপুল ফলন সত্ত্বেও বিদেশ থেকে আসা গমে আমদানি শুল্ক কমিয়ে দেওয়া হয়! ফলে মার খাচ্ছেন কৃষকেরা।’’ তিনি জানিয়েছেন, কেন্দ্রের ভুল কৃষি নীতির বিরুদ্ধে ১৫ জুন থেকে রাজ্যে রাজ্যে আন্দোলনে নামবেন তাঁরা।
সব মিলিয়ে তিন বছর পূর্তির উৎসব শেষ হতে না হতেই কৃষি সঙ্কটে মুখ পুড়ল মোদী সরকারের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy