স্ত্রীকে পড়াশোনা বন্ধ করতে বাধ্য করা এক ধরনের মানসিক নিষ্ঠুরতা। হিন্দু বিবাহ আইন অনুসারে এর জন্য বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন জানানো যেতে পারে। সম্প্রতি এক মামলায় এমনটাই জানিয়েছে মধ্যপ্রদেশ হাই কোর্ট।
মধ্যপ্রদেশের ওই দম্পতির বিয়ে হয়েছিল ২০১৫ সালে। ওই সময়ে দ্বাদশ শ্রেণি উত্তীর্ণ হন স্ত্রী। তিনি আরও পড়াশোনা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির লোকেরা তাঁকে আর পড়াশোনা করতে দেননি বলে অভিযোগ মহিলার। মধ্যপ্রদেশ হাই কোর্টের বিচারপতি বিবেক রুসিয়া এবং বিচারপতি গজেন্দ্র সিংহের ডিভিশন বেঞ্চ মহিলাকে বিবাহবিচ্ছেদের অনুমতি দিয়েছে।
হাই কোর্টের দুই বিচারপতির বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, শিক্ষাকে জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে শীর্ষ আদালত। দেশের সংবিধানের ২১ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুসারে, বেঁচে থাকার অধিকারের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হল শিক্ষা। এর অর্থ, কোনও মানুষের সম্মানের সঙ্গে বেঁচে থাকার জন্য শিক্ষা অত্যন্ত জরুরি।
দুই বিচারপতির বেঞ্চ জানিয়েছে, স্ত্রীকে প়ড়াশোনা বন্ধ করতে বাধ্য করা বা তাঁর পড়াশোনার প্রতিকূল কোনও পরিবেশ তৈরি করার মানে বৈবাহিক জীবনের শুরুতেই তাঁর স্বপ্নকে ধ্বংস করে দেওয়া। ওই মহিলাকে এমন এক জনের সঙ্গে সংসার করতে বাধ্য করা হচ্ছে যিনি শিক্ষিত নন বা নিজের উন্নতিতেও আগ্রহী নন। এটি মানসিক নিষ্ঠুরতার শামিল। তাই আদালত মনে করছে হিন্দু বিবাহ আইন অনুসারে এটি বিবাহবিচ্ছেদের কারণ হতে পারে।
আরও পড়ুন:
মধ্যপ্রদেশ হাই কোর্টের আগে মামলাটি এক পারিবারিক আদালতে বিচারাধীন ছিল। সেই সময়ে মহিলার স্বামী আদালতে জানান, স্ত্রীর পড়াশোনায় তাঁর কোনও আপত্তি নেই। এমনকি তাঁর বিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক স্তরের পড়াশোনার জন্য প্রয়োজনীয় খরচও দেওয়া হয়েছে বলে আদালতে দাবি করেন স্বামী। পারিবারিক আদালতে স্ত্রীর অভিযোগগুলি সম্পূর্ণ মিথ্যা বলেও দাবি করেন তিনি। সেখানে স্বামীর পক্ষেই রায় যায় পারিবারিক আদালতের। পরে সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন মহিলা। আইনি খবর পরিবেশনকারী ওয়েবসাইট ‘বার অ্যান্ড বে়ঞ্চ’ অনুসারে, হাই কোর্ট মামলা সংক্রান্ত নথিপত্র খতিয়ে দেখে জানতে পারে, মহিলার স্বামী অশিক্ষিত। স্ত্রীর পড়াশোনার জন্য কোনও খরচই স্বামী দেননি বলেও জানতে পারে হাই কোর্ট।