স্ট্রং রুমে কড়া নজরদারি। — ছবি পিটিআই।
রাত পোহালেই শুরু ভোট গণনা। কিন্তু শেষ বেলাতেও আগে ভিভিপ্যাট গোনার দাবি খারিজ হওয়ায় আজ ফের কমিশনের কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন বিরোধীরা। সেই সঙ্গে ইভিএম-এর স্ট্রং রুমে সতর্ক নজর রাখার জন্য কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন বিরোধী দলগুলির নেতা-নেত্রীরা।
গত কাল বিজেপি-বিরোধী ২২টি দলের নেতারা কমিশনের কাছে দাবি জানিয়েছিলেন, এ বার বিধানসভা কেন্দ্রপিছু যে পাঁচটি ভিভিপ্যাট গোনার সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেগুলি ইভিএম গোনার আগেই গুনে ফেলা হোক। যদি দেখা যায় সংশ্লিষ্ট ইভিএমের সঙ্গে ভিভিপ্যাটের ফল মিলছে না, তা হলে ওই কেন্দ্রের সব ক’টি ভিভিপ্যাটের স্লিপ গোনা হোক।
আজ সকালে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরোরার নেতৃত্বে কমিশন কর্তারা বৈঠকে বসে দু’টি দাবিই খারিজ করে দেন। এর পরেই কংগ্রেস মুখপাত্র অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন, ‘‘কমিশন দু’টি দাবিই খারিজ করলেও কারণ কী তা বলা হয়নি। কমিশন এ বার শুরু থেকেই শাসক দলকে সাহায্য করে এসেছে। শেষ বেলায়ও ব্যতিক্রম হল না।’’
দু’দিন আগেই কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী কমিশনের ভূমিকা নিয়ে সরব হয়েছিলেন। রাহুল বলেন, মোদী ও তাঁর দলবলের কাছে কমিশন যে আত্মসমর্পণ করেছেন তা দেশবাসীর কাছে স্পষ্ট। কমিশনকে আগে লোক ভয় করত, সম্মান করত। এখন আর করে না। এ দিনও টুইট করে দলীয় কর্মীদের তিনি বলেছেন, ‘‘আগামী ২৪ ঘণ্টা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। সতর্ক থাকুন। ভয় পাবেন না। আপনি সত্যের জন্য লড়ছেন। ভুয়ো বুথ-ফেরত সমীক্ষা দেখে নিরাশ হবেন না। নিজের ও কংগ্রেসের উপরে বিশ্বাস রাখুন। আপনার পরিশ্রম বিফলে যাবে না।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
এই পরিস্থিতিতে ‘ইভিএম বদল’ ঠেকাতে স্ট্রং রুম পাহারার উপরে জোর দিচ্ছে বিরোধীরা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেমন স্ট্রং রুমে কর্মীদের রাতপাহারার নির্দেশ দিয়েছেন, অখিলেশ যাদব ও মায়াবতীও সকলকে বাড়তি সতর্ক থাকতে বলেছেন। বিহারে আরজেডি নেতা তেজপ্রতাপও সকালে টুইট করে অভিযোগ করেন, ইভিএম সরানোর চক্রান্ত চলছে। চন্দ্রবাবু নায়ডু বলেন, ‘‘৯০০০ কোটি টাকা খরচ করে ভোট হল। সব ভিভিপ্যাটের স্লিপের সঙ্গে ইভিএম মিলিয়ে দেখতে অসুবিধাটা কোথায়? প্রধানমন্ত্রী কেন স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতার প্রমাণ দিতে চাইছেন না?’’ কমিশন সূত্রের অবশ্য বক্তব্য, তা হলে তো ব্যালটে ভোট করালেই হত!
তবে ইভিএম নিয়ে বিরোধীদের আশঙ্কা জোরদার হয়েছে ইভিএম রাখার কেন্দ্রে খালি সিন্দুক বোঝাই ট্রাক নিয়ে যাওয়া এবং ব্যক্তিগত গাড়িতে বা মাথায় করে কিশোরদের ইভিএমের বাক্স নিয়ে যাওয়ার ছবি ও ভিডিয়ো ভাইরাল হওয়ায়। প্রতি ক্ষেত্রেই কমিশনের তরফে এগুলির সত্যতা অস্বীকার করা হয়েছে।
কিন্তু বিরোধী দলগুলি কোনও ধুঁকি নিতে নারাজ। তারা শেষ ভোটটি গোনা পর্যন্ত কর্মীদের সতর্ক থাকতে বলেছে। ডিএমকে নেত্রী কানিমোঝির কথায়, ‘‘ইভিএম আনা-নেওয়ার ঘটনায় দলের কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে আশঙ্কা ও ভয়ের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। সেই কারণে স্ট্রংরুমের সামনে দলীয় কর্মীরা রয়েছেন। তাঁরা সিসিটিভির মাধ্যমে নজর রাখছেন।’’ একই ভাবে মুম্বইয়ের গোরেগাঁওয়ে স্ট্রং রুমের সামনে কর্মী-সমথর্কদের নিয়ে থানা গেড়েছেন মুম্বই উত্তর-পশ্চিম কেন্দ্রের প্রার্থী সঞ্জয় নিরুপম।
কমিশন অবশ্য আজ ফের জানিয়েছে, যে ইভিএমগুলিতে ভোট হয়েছে, সেগুলি স্ট্রং রুমে আধা সেনার পাহারায় রয়েছে। কারচুপি হওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই।
ইভিএম নিয়ে বিরোধীরা প্রশ্ন তোলায় আজ পাল্টা সরব হয়েছেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। বিরোধীদের আক্রমণ শানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘ইভিএম নিয়ে প্রশ্ন তোলার অর্থ মানুষের রায়কে অপমান করা। ভোট গণনার দু’দিন আগে পদ্ধতি পরিবর্তনের যে দাবি বিরোধীরা তুলেছেন, তাও অগণতান্ত্রিক। এঁরা গোটা বিশ্বের কাছে ভারতের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ করে দিচ্ছেন।’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy