যন্তর মন্তরে কাল একজোট হচ্ছেন বিরোধীরা।—ফাইল চিত্র।
শেষ হচ্ছে না ‘লড়াই’, শুরু হচ্ছে তাকে দিল্লি পৌঁছে দেওয়ার প্রস্তুতি— ৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় ধর্মতলার ধর্না মঞ্চ থেকে যৌথ ভাবে ঘোষণা করেছিলেন দুই মুখ্যমন্ত্রী। এক মুখ্যমন্ত্রী ইতিমধ্যেই দিল্লি পৌঁছে গিয়েছেন এবং অন্ধ্র ভবনের সামনে সোমবার দিনভর ধর্না দিয়েছেন। মঙ্গলবার পৌঁছচ্ছেন অন্যজনও। বিরোধী ঐক্যের আরও এক দফা প্রদর্শনীর প্রস্তুতিতে রাত থেকেই সরগরম হয়ে উঠতে চলেছে রাজধানী।
যন্তর-মন্তরে সমাবেশের ডাক দিয়েছে বিরোধী বিরোধী দলগুলি। ১৯ জানুয়ারি কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডের সমাবেশে যে দলগুলির শীর্ষ নেতৃত্ব হাজির হয়েছিলেন, সেই দলগুলির প্রায় সবক’টিই বুধবার নয়াদিল্লির সমাবেশে যোগ দিচ্ছে। কিন্তু কলকাতায় যেমন রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল ছিল সমাবেশের আয়োজন, দিল্লিতে তেমনই আয়োজনের ভার স্থানীয় শাসক দল আম আদমি পার্টির (আপ) উপরে। তাই বুধবারের সমাবেশে কংগ্রেসের যোগদান নিয়ে এখনও কিছুটা ধোঁয়াশা রয়েছে। কেজরীওয়ালের ঘোর বিরোধী হিসেবে পরিচিত অজয় মাকেনকে দিল্লি কংগ্রেসের সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে শীলা দীক্ষিতকে ওই পদে আনা হয়েছে ঠিকই। কিন্তু দিল্লির রাজনীতিতে আপের সঙ্গে কংগ্রেসের দূরত্ব এখনও বিস্তর। তাই কেজরীবালের বাঁধা মঞ্চে হাজির হওয়া কংগ্রেস নেতৃত্বের পক্ষে কিছুটা কঠিন।
সমাবেশে যোগ দেওয়ার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মঙ্গলবার রাতের মধ্যেই দিল্লি পৌঁছচ্ছেন। বুধবার বেলা ৩টে নাগাদ তিনি যন্তর-মন্তরের সমাবেশ মঞ্চে পৌঁছবেন বলে তৃণমূল সূত্রের খবর।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর রাজনৈতিক যাত্রা সম্বন্ধে কতটা জানেন?
আরও পড়ুন: রাফাল চুক্তিতে অম্বানীদের দালালের ভূমিকা পালন করেছেন মোদী, ফের আক্রমণ রাহুলের
দেশের অখণ্ডতা রক্ষা, সংবিধান রক্ষা এবং গণতন্ত্র রক্ষার তাগিদেই মোদীর বিরুদ্ধে একজোট হওয়া দরকার— ‘ইউনাইটেড ইন্ডিয়া’ ব্যানারে সামিল হওয়া রাজনৈতিক দলগুলি এই কথাই বলছে বার বার। কলকাতার পুলিশ কমিশনারের সরকারি বাসভবনে সিবিআই হানার চেষ্টাকে কেন্দ্র করে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে যে সঙ্ঘাত শুরু হয়েছিল কেন্দ্রের, তার প্রেক্ষিতে ধর্নায় বসার কথা ঘোষণা করার সময়েও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন যে, সংবিধান ও গণতন্ত্র রক্ষার তাগিদেই তাঁর এই পদক্ষেপ। এই ধর্না আসলে ‘সত্যাগ্রহ’— দাবি করেছিলেন মমতা। তিনি ধর্নায় বসেছেন খবর পেয়ে ৩ ফেব্রুয়ারি রাত থেকেই গোটা দেশের রাজনৈতিক শিবির থেকে ফোন আসতে শুরু করেছিল তাঁর কাছে। অরবিন্দ কেজরীওয়াল থেকে চন্দ্রবাবু নায়ডু, অখিলেশ যাদব থেকে মায়বতী, তেজস্বী যাদব থেকে এম কে স্ট্যালিন, শরদ পওয়ার থেকে শরদ যাদব— সমর্থন জানাতে শুরু করেছিলেন বিরোধী রাজনীতির মহারথীরা।
তাঁর এই ধর্না যে সর্বভারতীয় স্তরের বিরোধী রজনীতির জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে উঠতে চলেছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তা অভ্রান্ত বুঝেছিলেন। তাই নিজের ধর্না মঞ্চকে বৃহত্তর মঞ্চ হিসেবেই তুলে ধরেছিলেন তিনি। মেট্রো চ্যানেলে নির্মিত মঞ্চটায় তৃণমূলের নাম, প্রতীক বা পতাকা ছিল না কোথাও। শুধু লেখা ছিল ‘সেভ ইন্ডিয়া’।
আরও পড়ুন: রাফাল চুক্তির আগেই ফরাসি প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছিলেন অনিল অম্বানী: রিপোর্ট
সুপ্রিম কোর্টের রায় ঘোষিত হওয়ার পরে ধর্না প্রত্যাহার করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু সে দিনই চন্দ্রবাবু নায়ডু কলকাতার ধর্না মঞ্চে দাঁড়িয়ে জানিয়ে দেন, লড়াই এখানেই শেষ নয়, এই লড়াইকে দিল্লি পৌঁছে দেওয়া হবে। সেই ঘোষণা অনুসারেই বুধবার যন্তর-মন্তরে সমাবেশ হচ্ছে। তৃণমূল চেয়ারপার্সন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অন্যান্য দলের শীর্ষ নেতৃত্ব মঙ্গলবার রাতের মধ্যেই দিল্লি পৌঁছচ্ছেন। তবে বুধবার শুধু সমাবেশ নয়, একটি বড় মিছিলেরও ডাক দেওয়া হয়েছে। আপ-ই আয়োজন করছে সেই মিছিল। রামলীলা ময়দান থেকে শুরু হয়ে যন্তর-মন্তরে গিয়ে সেটি শেষ হবে। বিভিন্ন বিরোধী দল সে মিছিলে যোগ দিতে পারে। তৃণমূলও মিছিলে সামিল হতে পারে। তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মিছিলে থাকছেন না বলে ডেরেক ও’ব্রায়েন মঙ্গলবার জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটি বৈঠক করতে পারেন বিরোধী দলগুলিকে নিয়ে। দিল্লিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেখানে থাকবেন, সেখানেই ওই বৈঠক হতে পারে বলে খবর। বিজেপি বিরোধী সমঝোতাকে আরও কতটা এগিয়ে নিয়ে যায়, বৈঠকে তা নিয়ে তো আলোচনা হবেই। লোকসভা নির্বাচনের আগে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে আরও বড় কোনও যৌথ কর্মসূচি নেওয়া হবে কি না, তা নিয়েও কথা হতে পারে ওই বৈঠকে।
(ভোটের খবর, জোটের খবর, নোটের খবর, লুটের খবর- দেশে যা ঘটছে তার সেরা বাছাই পেতে নজর রাখুন আমাদের দেশ বিভাগে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy