ধ্বংসাবশেষ: মাওবাদী বিস্ফোরণে গুঁড়িয়ে গিয়েছে বিজেপি বিধায়ক ভীমা মাণ্ডবীর গাড়ি। ইনসেটে ভীমা মাণ্ডবী। পিটিআই
ছত্তীসগঢ়ে বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংহের জমানায় মাওবাদীরা কার্যত কোণঠাসা হয়ে গিয়েছে বলে দাবি করেছিলেন অমিত শাহ। লোকসভা ভোটের দু’দিন আগে সেই ছত্তীসগঢ়েরই বস্তারে বিজেপি বিধায়ক ভীমা মাণ্ডবী ও চার জওয়ানকে খুন করল মাওবাদীরা।
গত বিধানসভা ভোটে পালাবদলের পরে রায়পুরের মসনদে এখন কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেল। নির্বাচনের দু’দিন আগেই এই ঘটনা উদ্বেগ বাড়িয়েছে প্রশাসনের। ১১ এপ্রিল, প্রথম দফাতেই ভোট হওয়ার কথা বস্তারে। ২০১৩ সালে ছত্তীসগঢ়ের সুকমায় কংগ্রেস নেতাদের উপরে হামলার স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছে এ দিনের ঘটনা। কংগ্রেসের বিরুদ্ধে মাওবাদীদের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ এনেছে বিজেপি।
পুলিশ জানিয়েছে, আজ নির্বাচনী প্রচারে বেরিয়েছিলেন দন্তেওয়াড়ার বিজেপি বিধায়ক মাণ্ডবী। বিকেল পাঁচটা নাগাদ বাছেলি এলাকার কুয়াকোন্ডার দিকে এগোচ্ছিল তাঁর কনভয়। হঠাৎ আইইডি বিস্ফোরণ হয়। পুরোপুরি দুমড়েমুচড়ে যায় বিধায়কের গাড়িটি। মাণ্ডবী, তাঁর গাড়ির চালক ও তিন জন নিরাপত্তারক্ষী নিহত হন। সঙ্গে ছিল রাজ্য পুলিশের এসকর্ট ভেহিকল। বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেটিও। রাজ্য পাঁচ পুলিশকর্মী আহত হন। আহতেরা গাড়ি থেকে বেরোনোর চেষ্টা করতেই আশপাশে লুকিয়ে থাকা মাওবাদীরা গুলিবৃষ্টি শুরু করে। বেশ কিছু ক্ষণ গুলির লড়াই চলে। ঘটনার খবর পেয়ে অতিরিক্ত বাহিনী পাঠায় সিআরপিএফ। গোয়েন্দাদের মতে, প্রায় ৫০-৬০ কেজি বিস্ফোরক ব্যবহার করেছে মাওবাদীরা। ফলে বিস্ফোরণস্থলে রাস্তায় বড় গহ্বর তৈরি হয়েছে।
দন্তেওয়াড়া সংরক্ষিত আসনটি গত বছর পর্যন্ত দখলে ছিল কংগ্রেসের। মাওবাদী হানায় নিহত কংগ্রেস নেতা মহেন্দ্র কর্মার স্ত্রী দেবতী কর্মাকে গত বছরের বিধানসভা ভোটে হারিয়ে আসনটি দখল করেন বছর চল্লিশের মাণ্ডবী। তৃণমূল স্তরে সক্রিয় নেতা ও কট্টর মাওবাদী-বিরোধী হিসেবে পরিচিত ছিলেন তিনি। গত বছর দন্তেওয়াড়ায় মাওবাদী হামলায় দূরদর্শনের এক সাংবাদিক নিহত হওয়ার পরে মাওবাদীদের কড়া সমালোচনা করেছিলেন মাণ্ডবী। তার পর থেকেই তিনি জঙ্গিদের খতম তালিকায় ছিলেন বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা। সম্প্রতি রাহুল গাঁধী সম্পর্কে এক বিতর্কিত পোস্টের জেরে বিপাকে পড়েন এই বিধায়ক। মাণ্ডবী অবশ্য ক্ষমা চেয়ে নিয়ে দাবি করেন, তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া টিমের একাংশ ওই পোস্ট করেছে। পোস্টটি সরিয়েও নেওয়া হয়।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
বিধায়ক ও নিরাপত্তারক্ষীদের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ঘটনার পরেই উচ্চস্তরের বৈঠক ডাকেন মুখ্যমন্ত্রী বাঘেল। বাঘেলের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। ঘটনার পরেই মাওবাদী-উপদ্রুত জেলাগুলির পুলিশ সুপার ও জেলাশাসকের সঙ্গে কথা বলেন ছত্তীসগঢ়ের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক সুব্রত সাহু। পরে তিনি বলেন, ‘‘যথা সময়ে ভোট হবে।’’
২০১৩ সালে ছত্তীসগঢ়ের জিরামঘাটিতে কংগ্রেস নেতাদের কনভয়ে হামলা চালিয়েছিল মাওবাদীরা। ওই হামলায় ২৭ জন নিহত হন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বিদ্যাচরণ শুক্ল, প্রবীণ কংগ্রেস নেতা মহেন্দ্র কর্মা-সহ কংগ্রেসের ১২ জন নেতা-কর্মী। কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের মতে, ওই হামলায় কংগ্রেসের তৎকালীন রাজ্য নেতাদের বড় অংশই নিহত হয়েছিলেন। ঘটনার পরে উপযুক্ত সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হয়নি বলে বিজেপি সরকারের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছিল কংগ্রেস। এমনকি বিজেপির একাংশের সঙ্গে মাওবাদীদের যোগাযোগেরও অভিযোগ ওঠে। এ বার কংগ্রেসের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলেছে রাজ্যে বিরোধী আসনে থাকা বিজেপি। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংহ বলেন, ‘‘আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। দন্তেওয়াড়ায় গিয়ে নিহতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করব। কংগ্রেসের কথা আর গুলির (বোলি অউর গোলি) প্রভাব দেখা দিতে শুরু করেছে।’’ পরে মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের সঙ্গে দেখা করে একটি চিঠি পেশ করেন রাজ্য বিজেপি নেতারা। চিঠিতে তাঁরা জানান,
রাজ্যের কংগ্রেস সরকারের সঙ্গে মাওবাদীদের যোগ রয়েছে। ঘটনার সিবিআই তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। সেইসঙ্গে কমিশনকে সুরক্ষার কড়া ব্যবস্থা করতে হবে। কিন্তু দন্তেওয়াড়ার পুলিশ সুপার অভিষেক পল্লবের দাবি, ‘‘নিরাপত্তা নিয়ে অবহেলার জন্যই মাণ্ডবী নিহত হয়েছেন। কুয়াকোন্ডার পথ দিয়ে যাতায়াত করতে তাঁকে বারবার নিষেধ করা হয়েছিল। এলাকাটি মাওবাদীদের শক্ত ঘাঁটি। সম্প্রতি সেখান থেকে মাইন সরানো হয়েছে। ভোটের বুথও নিরাপদ জায়গায় সরিয়েছে প্রশাসন।’’ পুলিশ সুপারের দাবি, ‘‘কিরণডুল এলাকায় যাতায়াতের সময়ে প্রতিদিন ওই পথই ব্যবহার করতেন মাণ্ডবী।
খুব সহজেই তাঁর গতিবিধির খবর পেয়েছে জঙ্গিরা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy