বিহারের নাম বাবাজি!
এত দিন বিদেশ সফর নিয়ে বিরোধীদের সমালোচনাকে পাত্তা দেননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আগামী বছর থেকে সেই মোদীই বিদেশ সফর কমিয়ে দিতে চলেছেন। সরকারের শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন দেশে গিয়ে ভারতীয় বংশোদ্ভূত ও অনাবাসী ভারতীয়দের নিয়ে মোদীর মেগাসম্মেলনও বন্ধ করার কথা
ভাবা হচ্ছে।
কেন? রাজনৈতিক সূত্রের খবর, দিল্লি এবং সর্বোপরি বিহার ভোটে হারই এর কারণ। সম্প্রতি বিহার বিধানসভা ভোটে ভরাডুবি এবং তার ফলে দলের প্রবীণ নেতাদের বিদ্রোহে বেশ অস্বস্তিতে বিজেপি। তার উপর রয়েছে অসহিষ্ণুতা নিয়ে বিতর্ক। সব মিলিয়ে প্রশ্নের মুখে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ জুটির নেতৃত্ব। এই সব ঘটনাপ্রবাহই মোদীকে
বাধ্য করেছে ঘরোয়া রাজনীতিতে বেশি মন দিতে।
গত ১৮ মাসে ৩০টি দেশে সফর করেছেন মোদী। বিষয়টি নিয়ে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস থেকে শুরু করে বিভিন্ন মহলে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। কখনও সোশ্যাল মিডিয়ায় কটাক্ষ করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর ‘ঘর ওয়াপসি’-র প্রয়োজন! কোথাও বা বলা হয়েছে তিনি ‘অনুপস্থিত’ প্রধানমন্ত্রী! তাঁর এই বিশ্বসফরে কত টাকা খরচ হয়েছে তার পরিসংখ্যান তুলে ধরে সংসদের ভিতরে-বাইরে প্রধানমন্ত্রীকে বিঁধতে ছাড়েনি কংগ্রেস। কংগ্রেস মুখপাত্র অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেছেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী ৩০টি দেশ সফর করে এসেছেন। এ বার প্রশ্ন করার সময় এসেছে যে এতে দেশের প্রাপ্তি কী হল? গত দেড় বছরে দেশের রফতানি কমে গিয়েছে ৪৫ শতাংশ। অর্থনীতির ক্ষেত্রেও আমরা বিশেষ কিছু এগোতে পারিনি।’’
বিতর্ক তুঙ্গে ওঠে যখন বছরের গোড়ায় বিদেশ মন্ত্রকের বাজেট থেকে ১৫ শতাংশ ছাঁটাই করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সূত্রের খবর, এর ফলে বহু কূটনৈতিক প্রতিশ্রুতিতেও টান পড়েছে। মলদ্বীপকে যে ১৫৮ কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার কথা ছিল, তা দেওয়া যায়নি। নেপাল, ভুটান এবং ইয়াঙ্গনের জন্য প্রতিশ্রুত অনুদানেও টান পড়েছে। অথচ মোদী সরকারের প্রথম আর্থিক বাজেটে প্রধানমন্ত্রীর বিদেশযাত্রার জন্য খরচের পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ৩১৭ কোটি টাকা, যা ইউপিএ সরকারের শেষ আর্থিক বছরের (২০১৩-১৪) থেকে ৫৯ কোটি টাকা বেশি। বিরোধীদের অভিযোগ, বিনিয়োগ টানার প্রশ্নেও এমন কিছু আহামরি সাফল্য দেখা যায়নি। আমেরিকার ম্যাডিসন স্কোয়ারে ধুমধাম করে মোদীর জনসভা হল ঠিকই, কিন্তু এখনও পর্যন্ত সে দেশের সঙ্গে কোনও উল্লেখযোগ্য চুক্তিপত্র সই হল না। চিনের পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল ১০ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা এসে দাঁড়িয়েছে দু’হাজার কোটি মার্কিন ডলারে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে যদিও জানানো হচ্ছে যে, বিরোধীদের এই ধরনের আক্রমণ ঠিক নয়। কারণ, প্রধানমন্ত্রিত্বের মেয়াদের প্রথম দু’বছর বিদেশ সফরের জন্য বরাদ্দ করেছেন মোদী। এমন একটা সময়ে তিনি দায়িত্ব নিয়েছিলেন, যখন রাজকোষের হাল খুব খারাপ। তাই তাঁকে গোটা বিশ্ব ঘুরে বিদেশি বিনিয়োগ টানার চ্যালেঞ্জ নিতে হয়েছিল। সেই কাজটি সারার পরে এ বার তাঁর চলতি ইনিংসের বাকি মেয়াদটুকুতে ঘরোয়া নীতিকেই অগ্রাধিকার দেওয়া সঙ্গত মনে করছেন তিনি।
সরকারের শীর্ষ সূত্রের দাবি, গত ১৮ মাসে গোটা বিশ্বের অনাবাসী ভারতীয়দের বড় অংশের সামনে পৌঁছনোর কাজটি সেরে
ফেলেছেন মোদী। ভারতের ভাবমূর্তি তাঁদের সামনে তুলে ধরা,
বিদেশি বিনিয়োগ টানা, ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’-র বার্তা পৌঁছনোর কাজও প্রথম দফার মতো হয়ে গিয়েছে। এখন সময় এসেছে দেশের
অভ্যন্তরীণ সংস্কার এবং অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার দিকে মন দেওয়ার। যদিও সামনেই রয়েছে মোদীর ফ্রান্স ও রাশিয়া সফর। তার পরেই মোদীর বিদেশ সফর ধীরে ধীরে কমে আসবে বলে সূত্রের খবর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy