সংসদের চলতি অধিবেশনের মেয়াদ যত শেষের দিকে গড়াচ্ছে, জমি বিল নিয়ে ঘরে-বাইরে তত কোণঠাসা অবস্থায় পড়ছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার। এক দিকে সঙ্ঘ পরিবারের একাংশ সরকারের উপর চাপ বাড়াচ্ছে। তার উপর সঙ্কটকালে বন্ধুরাও সঙ্গ দিতে নারাজ। আগের অবস্থান থেকে রাতারাতি একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে গিয়ে এ বার বিজু জনতা দল জানিয়ে দিল, সংসদে মোদী সরকারের জমি অধ্যাদেশের বিরোধিতা করবেন তাঁরা। নবীন পট্টনায়ক একা নন, জমি অধ্যাদেশ নিয়ে তাদের অবস্থান পুনবির্বেচনার ইঙ্গিত দিতে শুরু করেছে জয়ললিতার এডিএমকে-ও। ফলে সংসদে জমি বিল পাশ করানোর ব্যাপারে অনিশ্চয়তা আরও তীব্র হল। কারণ, কংগ্রেস, তৃণমূল বা জনতা পরিবারের মতো বিজেডি এবং এডিএমকে-ও যদি বিরোধিতা করে, তা হলে রাজ্যসভা তো বটেই, সংসদের যৌথ অধিবেশন ডেকেও জমি বিল পাশ করানো মোদীর পক্ষে কঠিন।
সঙ্ঘের একটি অংশ গোড়া থেকেই জমি বিলের কিছু জায়গা নিয়ে সরকারের উপর চাপ দিচ্ছে। লোকসভার বর্তমান স্পিকার সুমিত্রা মহাজন ইউপিএ আমলে ছিলেন গ্রামোন্নয়ন সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির প্রধান। সে সময় জমি বিল নিয়ে আলোচনায় সুমিত্রা সঙ্ঘ পরিবারের ছ’দফা প্রস্তাব নিয়ে সওয়ালও করেন। কিন্তু প্রস্তাবিত নয়া বিলে সেই ছ’দফা প্রস্তাব ঠাঁই পায়নি। ফলে সুমিত্রার পক্ষেও বিষয়টি অস্বস্তির হয়ে উঠেছে। প্রধানমন্ত্রীকে সে কথা জানিয়েওছেন তিনি। অন্য দিকে রাজ্যসভায় বিলটি পেশ করার দিনক্ষণ স্থির করার জন্য বেঙ্কাইয়া নায়ডু রাজ্যসভার চেয়ারম্যান হামিদ আনসারিকে অনুরোধ করলে তিনি জানিয়েছেন, বিলটি পেশ করার সময় বিরোধীরা যে গোলমাল করবেন না, সেটা আগে সরকার নিশ্চিত করুক। আর ঠিক সেখানেই হোঁচট খাচ্ছে সরকার। রাজ্যসভায় এ যাত্রায় বিলটি যদি সরকার পেশ করতে না পারে, তা হলে পুনরায় অধ্যাদেশ জারি করতে হবে কেন্দ্রকে। বিরোধীরাও তক্কে তক্কে আছে। তারা চাইছে, হয় বিলটি একেবারেই না আসুক। অথবা সেটিকে সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানো হোক। সংসদীয় সিলেক্ট কমিটি-র রিপোর্ট সংসদের চলতি অধিবেশনে পেশ হওয়ার সম্ভাবনাও ক্ষীণ। নিদেনপক্ষে তা বাদল অধিবেশন পর্যন্ত গড়াবেই।
কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, ‘‘সিলেক্ট কমিটিতেও বিলটি নিয়ে সরকার বনাম বিরোধী তর্কাতর্কি অবধারিত ভাবেই হবে। তা ছাড়া যে ভাবে বিজেডি-ও এখন বিলের বিরোধিতা করছে, তাতে সবক’টি বিরোধী দল নতুন করে শক্তি পাচ্ছে।’’ তিনি জানান, বিজেডি বা এডিএমকে কেন্দ্রে এনডিএ সরকারের শরিক নয় ঠিকই। কিন্তু বিজেপির বন্ধু দল হিসেবে গত দশ মাসে কেন্দ্রের বিভিন্ন বিল ও প্রস্তাবে তারা সায় দিয়েছে। এমনকী বাজেট অধিবেশনের প্রথমার্ধে সরকার যখন প্রথম জমি অধ্যাদেশটি পেশ করে, তখন সমর্থন জানিয়েছিল এই দুই দল।
লোকসভায় বিজেডি নেতা ভ্রাত্রুহরি মহতাব বলেন, ‘‘সরকারের জমি অধ্যাদেশ নিয়ে আমাদের কিছু আপত্তি রয়েছে। তাই বিরোধিতার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অর্থনৈতিক কারণে সরকার কোনও জমি অধিগ্রহণ করলে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পে যদি জমিহারাদের অংশীদার করতে সরকার রাজি হয়, তবেই অধ্যাদেশে সমর্থন জানাবে বিজু জনতা।’’ আর এডিএমকে-র এক সাংসদ বলেন, ‘‘সরকারের জমি বিল কৃষক বিরোধী বলে একটা ধারণা তৈরি হয়েছে। এই অবস্থায় বিলটিতে সায় দেওয়া রাজনৈতিক ভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। যদিও এ বিষয়ে আম্মা (জয়ললিতা) এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি।’’
প্রশ্ন হল, রাতারাতি কেন উল্টোরথে চেপে বসল বিজেডি, এডিএমকে?
রাজনৈতিক সূত্রের মতে, দেশ জুড়ে কৃষক আত্মহত্যার ঘটনার প্রেক্ষিতে মোদী সরকারের জমি নীতি নিয়ে সমালোচনা ক্রমশ তীব্র হচ্ছে। সরকার কৃষকদের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ করতে চাইছে, এই বার্তা কৃষকদের একাংশের কাছে পৌঁছে দিতে সফল হয়েছে কংগ্রেস-সহ বিরোধীরা। তাই রাজনৈতিক কারণেই উল্টো সুর গাইছে বিজেপি-এডিএমকে। তার মধ্যেই আজ ফের রাজ্যসভায় বিরোধীরা সরকারকে চেপে ধরেন। গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী চৌধুরী বীরেন্দ্র সিংহ বিরোধীদের প্রশ্নের জবাব দিলেও তাতে সন্তুষ্ট হননি তাঁরা। এই অবস্থায় বাইরেও মোদীর জমির নীতির বিরোধিতায় প্রচার বাড়াতে সক্রিয় হচ্ছে কংগ্রেস। বিষয়টি নিয়ে বৃহস্পতিবার থেকে রাজ্য সফরে বেরোবেন রাহুল গাঁধী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy