Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

সংসদের জমি নিয়েও তো দাবি উঠবে ক্ষতিপূরণের: বিজেপি

জমি বিল সংশোধনের বিষয়টি আপাতত ঠান্ডা ঘরে চলে গেল। সংসদের শীতকালীন অধিবেশনের আগে আর বিলটি নিয়ে আলোচনার সম্ভাবনা নেই। কিন্তু শীতঘুমে যাওয়ার আগেও আজ জমি বিলের সংশোধন প্রস্তাব নিয়ে শাসক-বিরোধী বড় বিতর্ক হয়ে গেল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৫ ০৩:৩৬
Share: Save:

জমি বিল সংশোধনের বিষয়টি আপাতত ঠান্ডা ঘরে চলে গেল। সংসদের শীতকালীন অধিবেশনের আগে আর বিলটি নিয়ে আলোচনার সম্ভাবনা নেই। কিন্তু শীতঘুমে যাওয়ার আগেও আজ জমি বিলের সংশোধন প্রস্তাব নিয়ে শাসক-বিরোধী বড় বিতর্ক হয়ে গেল। জমি বিলে ‘রেট্রোস্পেকটিভ’ ধারা রাখলে সংসদ ভবন, রাষ্ট্রপতি ভবনের জন্য জমিদাতারাও ক্ষতিপূরণ চাইতে পারেন বলে সেই বচসায় দাবি করেছে বিজেপি।

ইউপিএ জমানায় পাশ হওয়া জমি আইনে বলা রয়েছে, জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে কৃষক তথা জমির মালিককে ‘রেট্রোস্পেকটিভ’ হিসেবে সুবিধাও দেওয়া হবে। অর্থাৎ ১৮৯৪ সালের আইন অনুযায়ী যে সব কৃষকের কাছ থেকে সরকার জমি নিয়েছে বা খাতায় কলমে অধিগ্রহণ হলেও বাস্তবে জমির দখল নেওয়া হয়নি বা জমির মালিক অধিগ্রহণে আপত্তি জানিয়ে ক্ষতিপূরণ নেননি, সেখানেও নতুন আইন অনুযায়ী পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ক্ষমতায় এসে মোদী সরকার বর্তমান আইন থেকে ওই ধারাটি রাতারাতি বিলোপ করে দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। বিতর্ক তা নিয়েই। আজ জমি আইন সংশোধন সংক্রান্ত সংসদীয় যৌথ কমিটির বৈঠকে কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ ও দিগ্বিজয় সিংহ দাবি করেন, ‘রেট্রোস্পেকটিভ’ ধারাটি তুলে দিলে চলবে না। কিন্তু কমিটির চেয়ারম্যান তথা বিজেপি নেতা সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া বলেন, ‘‘বাস্তব দিকটি বিবেচনা না করে আপনারা স্রেফ রাজনীতি করছেন! ভেবেও দেখছেন না আইনে এই ধারা থাকলে এর ফল কী হতে পারে?’’ অহলুওয়ালিয়ার দাবি, বিংশ শতকের গোড়ায় রাষ্ট্রপতি ভবন, সংসদ ভবন থেকে শুরু করে অনেক নির্মাণকার্যের জন্যই খাস দিল্লিতে বহু জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। তখনও অনেক জমির মালিক ক্ষতিপূরণ না নিয়ে আদালতে গিয়েছিলেন। এখন তো তাঁরা এসে সরকারকে বলবেন নতুন হারে ক্ষতিপূরণ দিন। এ ভাবে ক্ষতিপূরণ দিতে শুরু করলে সরকার দেউলিয়া হয়ে যাবে। জবাবে জয়রাম বলে, ‘‘হ্যাঁ চাইলে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।’’

কমিটির এক সদস্যের মতে, অহলুওয়ালিয়ার বক্তব্যে যুক্তি রয়েছে। কিন্তু জমি আইন সংশোধন নিয়ে এখন বিষয়টা বিজেপি-কংগ্রেস রাজনৈতিক জেদাজেদির স্তরে পৌঁছে গিয়েছে। তারই নমুনা দেখা গিয়েছে আজকের বৈঠকে।

বর্তমান জমি আইনে মূল ৯টি সংশোধন প্রস্তাব করে অধ্যাদেশ জারি করে মোদী সরকার। কৃষকদের প্রাক-সম্মতির শর্ত তুলে দেওয়া থেকে শুরু করে মূল ৬টি সংশোধন প্রস্তাব বিরোধীদের চাপের মুখে পড়ে সরকার ইতিমধ্যে ফিরিয়ে নিয়েছে। বাকি তিনটি শর্ত নিয়ে বনিবনা বাকি রয়েছে। এর মধ্যে দুটি গুরুত্বপূর্ণ, এক রেট্রোস্পেকটিভ ধারা। দুই জমি অধিগ্রহণের পর সেখানে প্রকল্পের কাজ কত দিনের মধ্যে শুরু না হলে তা মূল জমির মালিককে ফিরিয়ে দিতে হবে?

আজ তা নিয়েই তর্কাতর্কি হয়। রেট্রোস্পেকটিভ ধারা রেখে দেওয়ার দাবি করে কংগ্রেস। আরও বলে, জমি ফেরত দেওয়ার ক্ষেত্রেও যেন চালু আইন বদলানো না হয়। অর্থাৎ অধিগ্রহণের পাঁচ বছরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শুরু না হলে যেন তা মূল জমির মালিককে ফেরত দেওয়া হয়।

কিন্তু সরকার পক্ষ তা না মানায় আজ দুম করে ভোটাভুটি চেয়ে বসেন বিরোধীরা। মুশকিল হল, যে-হেতু শিবসেনার মতো শরিক দল ও সরকারের কিছু বন্ধু দলও কেন্দ্রের জমি আইন সংশোধন বিলে আপত্তি জানাচ্ছে, তাই যৌথ কমিটিতে সরকার সংখ্যালঘু। ভোটাভুটিতে পরাস্ত হওয়ার ভয়ে তাই আজকের বৈঠক মুলতুবি করে দেয় সরকার পক্ষ। জানিয়ে দেয়, কমিটির রিপোর্ট সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে পেশ করা হবে। অর্থাৎ ঢাকঢোল পিটিয়ে আইন সংশোধনের চেষ্টা একেবারে জলে গেল। আপাতত ঠান্ডা ঘরে যাচ্ছে বিলটি।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE