Lalgarh Palace has been a symbol of heritage and pride of royal family of Bikaner in Rajasthan dgtl
Rajasthan Royals
ভোজনকক্ষে বসতে পারেন ৪০০ অতিথি, ১০০ বছরের প্রাচীন কেল্লায় আজ একাকী বন্দুকবাজ রাজকন্যা
১৭০৭ খ্রিস্টাব্দে ঔরঙ্গজেবের মৃ্ত্যুর পরে মুঘলদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে ব্রিটিশদের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে বিকানের।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০২১ ১১:০৭
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
থর মরুভূমির কাছেই। কিন্তু বিকানের আদতে মরুস্থলী। মধ্য এশিয়া থেকে গুজরাতের বন্দর অবধি যাতায়াতের মাঝপথে এখানে দু’দণ্ড বিশ্রাম নিতেন বণিকরা। বাকি সময় এই এলাকা পড়ে থাকত রাজপুতানার পরিত্যক্ত জঙ্গলাদেশ হয়েই। সেখানেই নিজের রাজ্য স্থাপন করলেন রাও বিকা।
০২১৮
যোধপুরের প্রতিষ্ঠাতা রাঠৌর বংশের রাও যোধার ছেলে ছিলেন রাও বিকা। বাবার সঙ্গে মতবিরোধের জেরে তিনি ১৪৮৮ খ্রিস্টাব্দে যোধপুর ছেড়ে এসে আলাদা রাজ্য তৈরি করেছিলেন। সঙ্গে ছিলেন কাকা কন্ধমল। জঙ্গলাদেশের মধ্যে বিকানের ছাড়াও পড়ে চুরু, গঙ্গানগর এবং হনুমানগড়।
০৩১৮
বলা হয়, তাঁর এই নতুন অভিযানে রাও বিকা আশীর্বাদ পেয়েছিলেন কারনি মাতার। দেবী দুর্গার অন্যতম রূপ কারনি মাতার মন্দির পুণ্যার্থীদের কাছে আজও খুবই পবিত্র। রাও বিকা-র তৈরি নতুন জনপদের নাম হল বিকানের। অর্থাৎ বিকার বসবাসের স্থান। তাঁর বংশের কুলদেবী কারনি মাতা।
০৪১৮
রাও যোধার বংশ অর্থাৎ মারওয়াড়ের সঙ্গে বিকার রাজ্যের সম্পর্ক দীর্ঘ যুগ ধরে ছিল শত্রুতার। অন্য দিকে জাঠদের অন্তর্দ্বন্দ্বের সুযোগ নিয়েও ক্ষমতাবৃদ্ধি করেন তিনি। রাও বিকার তৈরি কেল্লার ভগ্নাবশেষ আজও আছে প্রাচীর ঘেরা বিকানেরে। তাঁর শাসন শুরুর পরে একশো বছর ওই কেল্লাতেই থাকত রাজপরিবার।
০৫১৮
পরে ১৫৮৯ থেকে ১৫৯৩ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে রাও বিকার উত্তরাধিকারী রাজা রাই সিংহ নতুন প্রাসাদ তৈরি করেন। তার নাম জুনাগড় কেল্লা। প্রথমে এর নাম ছিল চিন্তামণি।
০৬১৮
শের শাহ সুরী থেকে মুঘল হয়ে পরবর্তী সময়ে ব্রিটিশ। বিভিন্ন সময়ে এই শক্তিদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেছে বিকানেরের রাজবংশ। ১৬৬৯ খ্রিস্টাব্দে এই বংশের অনুপ সিংহ প্রথম ‘মহারাজা’ উপাধি পান মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেবের কাছ থেকে। তার পর থেকে ‘রাও’-এর সঙ্গে বংশের প্রধানপুরুষের নামের আগে বসতে লাগল ‘মহারাজা’ উপাধিও।
০৭১৮
১৭০৭ খ্রিস্টাব্দে ঔরঙ্গজেবের মৃত্যুর পরে মুঘলদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে ব্রিটিশদের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে বিকানের। বিভিন্ন যুদ্ধ উট-সহ বহু সাহায্য বিকানেরের কাছ থেকে পেয়েছিল ব্রিটিশরা। ১৮১৮ থেকে শুরু করে ভারতের স্বাধীনতা পর্যন্ত ব্রিটিশদের অধীনস্থ রাজন্য স্টেট হিসেবে ছিল বিকানের।
০৮১৮
বিকানেরের রাও গঙ্গা সিংহ প্রথম বিশ্বযু্দ্ধে ব্রিটিশদের হয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ব্রিটিশ রাজপরিবারেরও অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন তিনি। তাঁর ছেলে মহারাজা রাও সাদুল সিংহের সম্মতিতে বিকানের যুক্ত হয় স্বাধীন ভারতের রাজপুতানার অংশে। পরে সেই রাজ্যের নাম হয় রাজস্থান।
০৯১৮
রাজতন্ত্র লোপ পাওয়ার আগে বিকানেরের রাঠৌর বংশের শেষ রাজা ছিলেন রাও কারনি সিংহ। অর্থাৎ প্রায় ৫০০ বছর ধরে রাজ্য শাসন করে রাও বিকার বংশ।
১০১৮
খাতায় কলমে রাজতন্ত্র চলে গেলে বিকানের রাজবংশের রাজকীয় রীতিনীতি বজায় আছে পুরোমাত্রায়। বর্তমানে রাজপরিবার থাকেন লালগড় প্রাসাদে। বিকানের শহর থেকে ৩ কিমি দূরে এই প্রাসাদ ১৯০২ থেকে ১৯২৬ অবধি তৈরি করেছিলেন মহারাজা রাও গঙ্গা সিংহ।
১১১৮
বিকানের রাজবংশের প্রধান উত্তরসূরি এখন রাজকুমারি রাজ্যশ্রী কুমারী। মহারাজা কারনি সিংহের মেয়ে রাজ্যশ্রী কুমারী থাকেন লালগড় প্রাসাদেই। পাশাপাশি এই প্রাসাদের বড় অংশ রূপান্তরিত হয়েছে হেরিটেজ হোটেলে।
১২১৮
ভারতীয়, ইউরোপীয় এবং মুঘল স্থাপত্যরীতিতে তৈরি এই প্রাসাদের মূল স্থপতি ছিলেন ব্রিটেনের সুইন্টন জ্যাকব। বহিরঙ্গে লাল পাথর এবং ভিতরে মার্বেলে তৈরি এই প্রাসাদ নির্মাণে খরচ হয়েছিল লক্ষাধিক টাকা। ৪০০ জন অতিথি একসঙ্গে আপ্যায়িত হতে পারেন এর ভোজনশালায়।
১৩১৮
বিশ্বে বৃহৎ ব্যক্তিগত বই সংগ্রহের মধ্যে এই প্রাসাদের পাঠাগার আছে চতুর্থ স্থানে। এখানে সযত্নে রক্ষিত হাতে লেখা বইও। বাহারি বাগান এবং সমৃদ্ধ জাদুঘর এই প্রাসাদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। সোনম কপূরের ‘খুবসুরত’ ছবির কিছু অংশের শ্যুটিং হয়েছিল এখানে।
১৪১৮
রাজ পরিবারের উত্তরাধিকার ছাড়াও রাজ্যশ্রী কুমারীর আরও অনেক পরিচয় আছে। মাত্র ৭ বছর বয়সে তিনি অনূর্ধ্ব ১২ বিভাগে এয়ার রাইফেল চ্যাম্পিয়নশিপে বিজয়ী হয়েছিলেন। এর পরেও শ্যুটিংয়ে দেশ বিদেশ থেকে একাধিক খেতাব পেয়েছেন তিনি।
১৫১৮
১৯৬৮ সালে, ১৬ বছর বয়সে শ্যুটিংয়ে দক্ষতার স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি অর্জুন পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছিলেন। শ্যুটিংয়ের প্রতি রাজ্যশ্রীর আগ্রহ তৈরি করেছিলেন তাঁর বাবা।
১৬১৮
দিল্লিতে পড়াশোনার পরে বিয়ে করে রাজ্যশ্রী চলে গিয়েছিলেন লন্ডন। কিন্তু তাঁর দাম্পত্য শেষ হয় ডিভোর্সে। এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, ডিভোর্সের স্মৃতি এখনও তিক্ততা বয়ে আনে তাঁর কাছে। তবে বিবাহবিচ্ছেদ তাঁকে জীবনসংগ্রামে অনেক বেশি পরিণত করেছে। মনে করেন রাজ্যশ্রী। তাঁর ছেলে সজ্জন কুমার এবং মেয়ে অনুপমা কুমারীও বিকানের রাজবংশের উত্তরাধিকারী হিসেবে গর্বিত।
১৭১৮
শিল্পকলার গুণগ্রাহী এবং প্রকৃতিপ্রেমী রাজকুমারি রাজ্যশ্রী দিনের বেশির ভাগ সময় কাটাতে ভালবাসেন প্রাসাদে বাগানে। সমাজসেবামূলক বিভিন্ন প্রকল্পে যুক্ত এই রাজকুমারি বেশ কয়েকটি বইও লিখেছেন। সেগুলির বিষয় রাজস্থান, বিকানের রাজবংশ এবং তার ইতিহাস।
১৮১৮
রাজপুতানার ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল রাজ্যশ্রী কুমারী চান শিকড়ের কাছাকাছি থাকতে। রাজপ্রাসাদের অলিন্দে প্রতি মুহূর্তে নিজের শিকড় এবং অতীতকে অনুভব করেন একাকি এই রাজকন্যা। (ছবি: শাটারস্টক এবং সোশ্যাল মিডিয়া)