আতঙ্কের প্রহর কাটিয়ে ফের বসেছে বাজার। — নিজস্ব চিত্র।
পেটের টান জঙ্গিদের নাশকতার ভয় থেকেও অনেকটাই বড়। তাই মনে ভয় এবং আতঙ্ক থাকলেও পেটের টানে কোকরাঝাড়ের সাপ্তাহিক বাজারে ফের দোকান খুলে বসেছেন অনিশা বসুমাতারি। অসমের কোকরাঝাড়ের দেবরগাঁও-টিলাপারা গ্রামের বাসিন্দা পেশায় ফল ব্যবসায়ী অনিশা একা নন। ফের প্রাণ ফিরেছে পেয়েছে কোকরাঝাড়ের বালাজান-তিন আলি গ্রামের সপ্তাহিক বাজার।
গত ৫ অগস্ট বেলা পৌনে ১২টা নাগাদ কোকরাঝাড় জেলার এই বাজারেই ঢুকে এনডিএফবি (সংবিজিত) গোষ্ঠির জঙ্গিরা গুলি করে মেরে ফেলে এক মহিলা সহ মোট ১৪ জনকে। গুরুতর আহত হয়েছিলেন আরও ১৮ জন। এক এক করে ৩ সপ্তাহ কেটে যাওয়ার পরে ব্যবসায়ী এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের মনে আতঙ্ক থাকলেও পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে। মঙ্গল এবং শুক্রবার ওই বাজার বসে। মঙ্গলবার সকাল ৬টা বাজতেই ধীরে ধীরে ছোট বড় ব্যবসায়ীরা ফলমূল, শাকশব্জি, মাছ-মাংস, এবং অন্যান্য জিনিস পত্র নিয়ে আসতে শুরু করেন। বেলা গড়াতেই গ্রাহকেদেরও ভিড়ও দেখা গেল। ৩ জন সিআরপিএফ ও ২ জন অসম রাইফেলস-এর জওয়ান ওই বাজারের নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন বলে জানান পুলিশ সুপার শ্যামল শইকিয়া। তিনি বলেন, ‘‘স্থায়ী পুলিশ পিকেট বসানোর ব্যবস্থা হচ্ছে।’’ পুলিশের তরফ থেকে কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
বাজারের পশ্চিম দিকের এক কোণে দোকান অনিশার। ৫ অগস্ট অভিশপ্ত শুক্রবারের কথা তাঁর স্পষ্ট মনে রয়েছে। এনডিএফবি (সংবিজিত) গোষ্ঠীর এ কে ৫৬ রাইফেলধারী এক জঙ্গিকে গুলি চালাতে চালাতে অনিশার দোকানের পিছনে ফলের বাক্সের আড়ালে বেশ কিছু ক্ষণ বসেও ছিল। ততক্ষণে গুলি খেয়ে মাটিতে ঢলে পরেছিলেন বেশ কয়েক জন গ্রাহক এবং ব্যবসায়ী। অনিশা হাত জোড় করে বড়ো ভাষায় ওই জঙ্গিকে গুলি চালানো বন্ধ করতে অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু ওই জঙ্গি তাঁকে বলেছিল, সেখান থেকে চলে যেতে। এর পরেই ওই জঙ্গি গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সেখান থেকে পালাতে গিয়ে নিরাপত্তারক্ষীদের গুলিতে মারা যায়।
অনিশা এখনও সে কথা ভুলতে পারেন না। অনিশা জানালেন, “কিছুই ভুলিনি। কিন্তু পেটের জ্বালা সব চেয়ে বড় জ্বালা। তাই পেটের টানে সপ্তাহিক বাজারে ফের দোকান খুলে বসেছি এ ছাড়া আমার কোনও উপায় নেই।”
সেই দিন গুলি এবং গ্রেনেডে আগুন লেগে ছাই হয়ে গিয়েছিল বাজারের ৩টি স্থায়ী দোকান। আর ওই ঘটনাটি ঘটেছিল ধনঞ্জয় নাথ নামের এক ব্যবসায়ীর চোখের সামনে। ধনঞ্জয়বাবুর ছোটখাট একটি হার্ডওয়ারের দোকান রয়েছে ওই বাজারে। তখন ধনঞ্জয়বাবু দোকানেই ছিলেন। প্রথমে গুলির শব্দ, তারপর গ্রেনেড বিস্ফোরণের প্রচণ্ড শব্দে তাঁর কানে তালা লেগে যায়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই দেখেন দোকানের পাশের তিনটি দোকান দাউ দাউ করে জ্বলছে। চারিদিকে রক্তাক্ত দেহ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। আতঙ্কে প্রাণ নিয়ে কোনও মতে দোকান ছেড়ে পালান ধনঞ্জয়বাবু।
ধনঞ্জয়বাবু বললেন, “ওই দিনটার কথা আর মনে করাবেন না। আমি ওই দিনের কথা ভুলে থাকতে চাই।’’ ওই একই অভিজ্ঞতার কথা জানালেন, কাপড় ব্যবসায়ী লালচান্দ আলি। ওই দিন ওই ঘটনায় জঙ্গির ছোড়া গুলি পায়ে লেগে আহত হয়ে ছিলেন তিনি। মঙ্গলবার তাঁকেও ওই বাজরে কাপড় দোকান নিয়ে বসতে দেখা গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy