ছবি পিটিআই।
কাজের জন্য এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে গিয়ে লকডাউনে আটকে পড়েছেন লক্ষ লক্ষ শ্রমিক। আন্তঃরাজ্য সীমানা ‘সিল’ হওয়ার আগে বাড়তি গুণাগার দিয়ে, বেসরকারি ভাবে গাড়ি ভাড়া করে অনেকে মরিয়া চেষ্টা করেছেন ঘরে ফেরার। কেউ কেউ পায়ে হেঁটে নিজের রাজ্যের দিকে রওনা হয়েছেন, রাস্তায় প্রাণও হারাতে হয়েছে কাউকে কাউকে। এই সঙ্কট থেকে পরিযায়ী শ্রমিকদের বাঁচানোর লক্ষ্যে রাজ্য জু়ড়ে শিবির খুলে বাকি দেশের সামনে পথ দেখাচ্ছে কেরল। বাংলা থেকে যাওয়া বিপুল সংখ্যক শ্রমিকের আপাতত ঠিকানা হয়েছে এই রকমই সরকারি শিবির।
ভিন্ রাজ্য থেকে বাংলায় কাজ করতে এসে আটকে পড়া শ্রমিকদের জন্য কমিউনিটি কিচেন থেকে খাবার পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করার নির্দেশ সোমবার দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের মন্ত্রী, বিধায়ক, সাংসদেরাও সাধ্যমতো ভিন্ রাজ্যের শ্রমিকদের সাহায্য করছেন। এই ‘অতিথি শ্রমিক’দের জন্যই রাজ্য জুড়ে ৪,৬০৩টি শিবির খুলেছে কেরল সরকার। চাল, ডাল, আলু-সহ প্রয়োজনীয় সামগ্রীর কিট শিবিরে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। যাঁরা রান্না করতে পারবেন না, তাঁরা কমিউনিটি কিচেন থেকে খাবার পাবেন। মাস্ক, স্যানিটাইজার, সাবানের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকছে শিবিরে। কারও প্রয়োজন পড়লে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব স্বেচ্ছাসেবী বা পুলিশের।
কেরলের বাম সরকারের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন বলছেন, ‘‘লকডাউন শেষ না হওয়া পর্যন্ত অতিথি শ্রমিকদের দায়িত্ব আমাদের। প্রায় এক লক্ষ ৪৪ হাজার অতিথি শ্রমিককে শিবিরে রাখা হয়েছে। আরও শ্রমিকদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে, শিবিরের সংখ্যা পাঁচ হাজার ছাড়িয়ে যাবে। সব শ্রমিকদের আমরা বলছি, এখন নিজের রাজ্যে ফিরতে গেলে সংক্রমণ ছড়ানোর ভয় আছে। এখানেই সকলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিরাপদে থাকুন।’’ ঘরে ফেরার বন্দোবস্ত হচ্ছে, এমন খবর ছড়ানোয় রবিবার রাস্তায় নেমে এসেছিলেন আলপ্পুঝার পাইপ্পাডে থাকা বেশ কিছু বাঙালি শ্রমিক। পুলিশ তাঁদের বুঝিয়ে শিবিরে ফেরত পাঠিয়েছে। ঘটনার তদন্তও শুরু করেছে কেরল পুলিশ।
এই সূত্রেই কেন্দ্রীয় সরকারকে এক হাত নিচ্ছেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। তাঁর বক্তব্য, ‘‘দুর্ভাগ্যজনক হলেও বিপর্যয়ের মধ্যেই এই কথাগুলো বলতে হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীকে আগাম চিঠি পাঠিয়ে সতর্ক করা সত্ত্বেও পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য কোনও পরিকল্পনা ছাড়াই লকডাউন ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। বাংলার শ্রমিকদের কেরল বা বিহারের শ্রমিকদের বাংলা রাখছে— সবই তো রাজ্যগুলো পারস্পরিক যোগাযোগের ভিত্তিতে নিজেদের উদ্যোগে করছে। কেন্দ্রের আর্থিক বা পরিকাঠামোগত কোনও পরিকল্পনাই নেই!’’
শিবিরে থাকা শ্রমিকদের বেশির ভাগের পরিচয় মাথায় রেখে হিন্দি, বাংলা ও ওড়িয়ায় নির্দেশিকা তৈরি করে তাঁদের দিচ্ছে কেরলের সরকার। কলকাতায় মাঝেরহাটে নির্মীয়মাণ সেতুর জন্য কর্মরত ভিন্ রাজ্য ও অন্যান্য জেলার ১৪০ জন শ্রমিককে চাল, ডাল, আলু, ডিমের প্যাকেট দিয়ে সহায়তা করেছেন পূর্তমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, পূর্তসচিব নবীন প্রকাশ-সহ আধিকারিকেরা। নানা রাজ্যে আটকে থাকা শ্রমিকদের জন্য সহায়তার ব্যবস্থা নিজে করার পাশাপাশিই লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরী মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে চিঠি দিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন, বাইরে থেকে অনেক শ্রমিক কোনও স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়াই জেলায় জেলায় ঢুকে পড়েছেন। তাঁদের জন্য শেল্টারে রেখে প্রশাসন যাবতীয় ব্যবস্থা করুক, যা সহায়তা লাগে তিনি তা করতে প্রস্তুত।
ইয়েচুরিরা বলছেন, এত সমস্যা দেখা দিত না কেন্দ্রের পরিকল্পনাটুকু থাকলে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy