Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Telangana Assembly Election 2023

মুখ্যমন্ত্রীর দফতর চালাতেন বাড়ি থেকেই, নাম বদলে দিয়েছিলেন দলের, তবে গদি টিকল না কেসিআরের

কেসিআরের প্রথম সরকারের সময়ে পৃথক তেলঙ্গানা রাজ্যের অস্মিতা ছিল তরতাজা। কিন্তু গত পাঁচ বছরে ক্রমশ প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা তৈরি হতে থাকে। তদুপরি, দুর্নীতির অভিযোগে বিদ্ধ হতে থাকে কেসিআরের দল।

KCR

তেলঙ্গানার বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও। —গ্রাফিক শৌভিক দেবনাথ।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৪:৪৭
Share: Save:

তেলঙ্গানা হারালেন কে চন্দ্রশেখর রাও। সারা দেশ যাঁকে ‘কেসিআর’ বলেই চেনে। জানে। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দ্বিতীয় বিধানসভা ভোটেই গদি গেল তাঁর।

কেসিআর ছিলেন সেই বিরল মুখ্যমন্ত্রী, যিনি ২০১৪ সালে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর ২০২৩ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে যাননি। রাজ্য চালাতেন তাঁর বাড়ি থেকেই। কেসিআর হলেন সেই বিরল রাজনীতিক, যিনি তাঁর নিখোঁজ পোষ্যকে খুঁজতে রাজ্য পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেলকে ময়দানে নামিয়ে দিয়েছিলেন!

গত বছর তিনি দলের নাম বদল করেছিলেন। তেলঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতি (টিআরএস) থেকে তাঁর দলের নাম হয়েছিল ভারত রাষ্ট্র সমিতি (বিআরএস)। কিন্তু দেখা গেল, দলের নাম বদল করলেও তেলঙ্গানায় বদলের হাওয়া ঠেকাতে পারলেন না মুখ্যমন্ত্রী তথা দলের সর্বময় নেতা কেসিআর। তেলঙ্গানা পৃথক রাজ্য তৈরি হওয়ার পর কেসিআরই ছিলেন দু’বারের মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু শনিবার ভোটের ফলঘোষণার পর দেখা গেল, তামাম বুথ ফেরত সমীক্ষার আভাসকে সত্যি করে টলে গিয়েছে কেসিআরের গদি। প্রথম বার তেলঙ্গানার ক্ষমতা দখল করেছে কংগ্রেস।

২০১৪ সালের জুন মাসে মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছিলেন কেসিআর। তখন থেকে তিনি সচিবালয় থেকে সরকার চালাননি। তাঁর বাড়িতেই ছিল মুখ্যমন্ত্রীর দফতর। চলতি বছরের এপ্রিলে নবনির্মিত সচিবালয়ে প্রথম বার বসেছিলেন কেসিআর। সেই সচিবালয় নির্মাণে খরচ হয়েছিল বিপুল টাকা। কিন্তু কয়েক মাসের মধ্যেই সেই ঝাঁ-চকচকে সচিবালয়ের মায়া কাটাতে হচ্ছে ৬৯ বছর বয়সি এই নেতাকে।

প্রসঙ্গত, রাজনৈতিক জীবনের একেবারে গোড়ায় অবিভক্ত অন্ধ্রপ্রদেশে যুব কংগ্রেস করতেন কেসিআর। কিন্তু তার পরে তিনি যোগ দেন তেলুগু দেশম পার্টিতে। এনটি রামরাও থেকে চন্দ্রবাবু নায়ডু— দীর্ঘ দিন টিডিপি মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন কেসিআর। কিন্তু ২০০১ সালে আচমকাই তিনি টিডিপি ছাড়েন। কারণ, তাঁর মনে হয়েছিল পৃথক তেলঙ্গানা রাজ্য গড়া ছাড়া কোনও উপায় নেই। সমস্যা সমাধানের এক এবং একমাত্র উপায় আলাদা রাজ্য। তার পরেই তিনি তৈরি করেন টিআরএস। পৃথক তেলঙ্গানার দাবিতে কেসিআরের আন্দোলন দফায় দফায় আন্দোলিত করেছিল জাতীয় রাজনীতিকেও। এ সবের মধ্যেই টিআরএসের সাংসদও হন তিনি। পৃথক তেলঙ্গানা রাজ্য তৈরি হওয়ার পর প্রত্যাশিত ভাবেই নতুন রাজ্যের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী হন কেসিআর।

২০১৪ সালের লোকসভা ভোটের সঙ্গেই তেলঙ্গানায় প্রথম বিধানসভা ভোট হয়েছিল। কিন্তু তার পরের ভোট এক বছর এগিয়ে ২০১৮ সালে করেছিলেন কেসিআর। তিনি জিতেছিলেন এবং মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন। প্রসঙ্গত, প্রথম কেসিআর সরকারের সময়ে পৃথক তেলঙ্গানা রাজ্যের অস্মিতা ছিল তরতাজা। কিন্তু গত পাঁচ বছরে ক্রমশ প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা তৈরি হতে থাকে তেলঙ্গানায়। তদুপরি, দুর্নীতির অভিযোগে বিদ্ধ হতে থাকে কেসিআরের দল ও তাঁর পরিবার। তাঁর মেয়ে কে কবিতা রাও তেলঙ্গানা বিধান পরিষদের সদস্য। ইতিমধ্যেই দিল্লির মদ দুর্নীতিকাণ্ডে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ইডি (এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট)। যে মামলায় দিল্লির প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসোদিয়া এখনও জেলে রয়েছেন। গ্রেফতারের ‘শঙ্কা’ রয়েছে মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়ালেরও। কেসিআরের ছেলে কেটি রামরাও বাবার মন্ত্রিসভার সদস্য। তাঁর বিরুদ্ধেও নানাবিধ অভিযোগ রয়েছে। তিনি আবার বছরের বেশির ভাগ সময়টাই মার্কিন মুলুকে থাকেন বলে বিরোধীরা অভিযোগ করেন।

কী ভাবে সরকার চালিয়েছেন কেসিআর? তার উদাহরণ দিতে গিয়ে এ বারের ভোটের প্রচারে কংগ্রেস ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরের একটি ঘটনা তুলে এনেছিল। বলা হয়েছিল, কেসিআরের খামারবাড়িতে একটি সাইবেরিয়ান হাস্কি প্রজাতির কুকুর ছিল। কুকুরটি কোনও ভাবে খামারবাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ হয়ে গিয়েছিল। তাকে খোঁজার জন্য তেলঙ্গানা পুলিশের ডিজিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন কেসিআর। কংগ্রেস বলেছিল, তেলঙ্গানায় মুখ্যমন্ত্রী কুকুরের জন্য রাজকীয় ব্যবস্থা রেখেছিলেন। কিন্তু মানুষকে কুকুরের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। দলের নাম বদল করে ভারত-দর্শন তুলে ধরেছিলেন কেসিআর। কিন্তু তেলঙ্গানা বদলে দিল জমানা। গদি হারাতে হল কেসিআরকে।

অন্য বিষয়গুলি:

Telangana KCR Congress Telangana Assembly Election 2023
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy