বুলেটবিদ্ধ: হামলার পরে গাড়িতে পড়ে রয়েছেন শুজাত বুখারি। বৃহস্পতিবার শ্রীনগরে। —নিজস্ব চিত্র।
তিন মাস আগেই রাইজিং কাশ্মীরের দশ বছর পূর্তি সংস্করণে তিনি লিখেছিলেন, ‘‘কাশ্মীরের যে কোনও সাংবাদিকের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে
বেঁচে থাকা!’’
তিন মাসের মধ্যে কথাটা নিদারুণ সত্য হয়ে দেখা দিল শুজাত বুখারির জন্য। এর আগেও তিন তিন বার হামলা হয়েছে তাঁর উপরে, প্রাণে বেঁচেছেন প্রত্যেক বার। কিন্তু বৃহস্পতিবার সন্ধেয় অজ্ঞাতপরিচয় তিন আততায়ীর বুলেট তাঁর মাথা আর তলপেট ঝাঁঝরা করে দিল। ইদের ঠিক আগে বুখারি হত্যার ঘটনায় সেনা অভিযান বন্ধ রাখার যৌক্তিকতা নিয়েই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় সরকার।
অথচ বুখারি নিজে সারা জীবন শান্তি আলোচনার পক্ষে কথা বলেছেন। পাশাপাশি কাশ্মীরের মনকেও তুলে ধরেছেন। আফজল গুরুর ফাঁসি যে উপত্যকার ক্রোধ বহু গুণে বাড়িয়েছে, সে কথা বলেছেন স্পষ্ট ভাষায়। আফস্পা তুলে নেওয়ার দাবিতে সরব হয়েছেন বারবার। মোদী সরকারের কাশ্মীর-নীতির অন্যতম সমালোচক বুখারি এ বার রমজানের সময়ে সংঘর্ষবিরতিকে স্বাগত জানিয়েই কলম ধরেছিলেন।
যদিও সংঘর্ষবিরতির সময়ও ও-পার থেকে হামলা বন্ধ হয়নি বলেই অভিযোগ ভারতের। কালও বিএসএফ-এর এক অফিসার সহ চার জন খুন হন। আজ এক জওয়ানকে অপহরণ করে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ। সেই সঙ্গে শ্রীনগরের কেন্দ্রস্থলে যে ভাবে বুখারিকে খুন হতে হল, তাতে অনেক অঙ্কই পাল্টে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
তিন সন্দেহভাজন আততায়ীর এই ছবি প্রকাশ করেছে পুলিশ।
শ্রীনগরের সংবাদমাধ্যমের উপরে আক্রমণ অনেক দিন পরে হল। ২০০৩ সালে একটি স্থানীয় সংবাদ এজেন্সির কর্মী খুন হয়েছিলেন। ২০০০ সালে খুন হন একটি জাতীয় দৈনিকের চিত্রগ্রাহক। সে বার অবশ্য তাঁকে ব্যক্তিগত ভাবে নিশানা করে খুন করা হয়নি। সাংবাদিকদের যাতায়াতের পথে বোমা রাখা ছিল। হিজবুল মুজাহিদিন ওই বিস্ফোরণের দায় স্বীকার করে এবং তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী তাদের সঙ্গে যে সংঘর্ষবিরতি ঘোষণা করেছিলেন, তা প্রত্যাহার করে নেন।
এ বারও সেই রকম কোনও কৌশল কাজ করছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কারণ সম্প্রতি পাকিস্তানের তরফে আলোচনার প্রস্তাব এসেছিল ভারতের কাছে। রমজান মাসের পরেও কাশ্মীরে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সেনা অভিযান বন্ধ রাখা হবে কি না, তা নিয়ে এ দিনই বৈঠক করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতির মতোই নীতিগত ভাবে সেনা অভিযান আরও কিছু দিন বন্ধ রাখার পক্ষে ছিলেন রাজনাথ। কারণ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের একাংশ মনে করছ়িল, সেনা অভিযান বন্ধ থাকায় সামান্য হলেও উপত্যকার মানুষের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছে শাসক শিবির।
অভিযান বন্ধে সেনা কিন্তু প্রথম থেকেই অখুশি। কারণ বাহিনীর মতে, এ বছরের অমরনাথ যাত্রা শুরু হওয়ার আগে নিরাপত্তা নিয়ে কোনও রকম ঝুঁকি নিতে রাজি নয় তারা। বাহিনীর মতে, ২৮ জুন যাত্রা শুরুর আগে যদি অভিযান বন্ধের নামে সেনার হাত বেঁধে দেওয়া হয় তাহলে জঙ্গি হামলার সম্ভাবনা কয়েক গুণ বেড়ে যাবে।
সামনের বছরই লোকসভা ভোট। তার আগে অমরনাথ যাত্রায় হামলা হলে তার বিরূপ প্রভাব যে ভোটব্যাঙ্কের উপর পড়বে তা বুঝতে পারছেন বিজেপি নেতৃত্ব। শুরু থেকেই সেনা অভিযান বন্ধের বিপক্ষে ছিল সঙ্ঘ পরিবারও। এখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তারাও বলছেন, বুখারির হত্যা থেকেই প্রমাণ হয় পাকিস্তানের মদতে পুষ্ট জঙ্গিরা সন্ত্রাস থামাতে রাজি নয়। প্রয়োজনে তারা বুখারির মতো ব্যক্তিত্বকে সরিয়ে দিতেও পিছপা হবে না। তাই তাদের বিরুদ্ধে অভিযান প্রয়োজন। এই পরিস্থিতিতে বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসতে চলেছেন রাজনাথ। তারপরেই এ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy