অভিন্ন দেওয়ানি বিধির পক্ষে সওয়াল করল কর্নাটক হাই কোর্ট। তাদের যুক্তি এই বিধি জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে মহিলাদের জন্য সমতা নিশ্চিত করবে। একটি মামলার রায় ঘোষণা করতে গিয়ে কর্নাটক হাই কোর্ট কেন্দ্র ও রাজ্য বিধানসভাগুলিকে প্রস্তাব দিয়েছে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি আইন প্রণয়ন করতে। আদালতের পর্যবেক্ষণ, এই আইনই পারে সংবিধানের ১৪ নম্বর অনুচ্ছেদের মূল উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়িত করতে।
হাই কোর্টের বিচারপতি হানচাতে সঞ্জীবকুমারের এজলাসে একটি মুসলিম পরিবারের সম্পত্তি সংক্রান্ত বিবাদ নিয়ে মামলা হয়েছিল। ভাইয়ের চেয়ে বোন সম্পত্তির কম অংশ পেয়েছিলেন বলে আদালতের দ্বারস্থ হন। গত ৪ এপ্রিল ওই মামলার রায়ে বিচারপতি বলেন, “এই মামলায় মরহুম শাহনাজ বেগমের দুই ভাই ও এক বোন বাদী। বোন হিসেবে বাদী নম্বর-৩ সম্পত্তির একটা অংশ পেতে পারেন, কিন্তু সমান ভাগের দাবিদার নন। এটা ভাই-বোনের মধ্যে বৈষম্যের একটি উদাহরণ, কিন্তু এই রকম হিন্দু আইনে দেখা যায় না। হিন্দু আইনে ভাই ও বোন সমান অধিকার এবং অংশ পান। এ থেকে থেকে স্পষ্ট অভিন্ন দেওয়ানি বিধির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।’’
একই সঙ্গে, কর্নাটক হাই কোর্ট জানিয়েছে, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪৪-এ উল্লিখিত অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে আইন প্রণয়ন হলে, তা সংবিধানের প্রস্তাবনায় যে লক্ষ্য—যেমন একটি সত্যিকার ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র গঠন, জাতীয় ঐক্য ও অখণ্ডতা বজায় রাখা, ন্যায়বিচার, স্বাধীনতা, সাম্য এবং ভ্রাতৃত্ব নিশ্চিত করা—তা অর্জিত হবে। আদালতের মতে, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে আইন প্রণয়ন ও তা প্রয়োগ করা অবশ্যই নারীদের প্রতি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে, সকলের জন্য সমান মর্যাদা ও সুযোগ প্রদান করবে এবং জাতি ও ধর্ম নির্বিশেষে ভারতের সকল নারীর মধ্যে সাম্যের স্বপ্নকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আদালত নির্দেশ দিয়েছে, অভিন্ন দেওয়ানি বিধিই প্রণয়নের অনুরোধ করে আদেশের অনুলিপি রাজ্য এবং কেন্দ্র সরকারের আইন সচিবদের কাছে পাঠানো হোক।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)