সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিল হয়েছে। এর প্রভাব পড়ল শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বদলি প্রক্রিয়াতেও! ‘সারপ্লাস ট্রান্সফার’-এর আওতাধীন বদলি প্রক্রিয়া সংক্রান্ত নির্দেশিকা প্রত্যাহার করল রাজ্য সরকার।
ছাত্র-শিক্ষকের সংখ্যার অনুপাত সঠিক রাখতে ২০২৩ সালে রাজ্য সরকারের তরফে এই বিশেষ ‘সারপ্লাস ট্রান্সফার’-এর প্রক্রিয়া চালু করা হয়। সেই প্রক্রিয়ার নির্দেশিকাই প্রত্যাহার করে নিয়েছে স্কুল শিক্ষা দফতর। এই প্রক্রিয়ায় যাঁদের বদলি করা হয়েছিল, তাঁদের পুরনো কর্মস্থলেই ফেরানো হবে। শিক্ষামহলের একাংশের দাবি, প্রশাসনিক বদলির নামে দূরবর্তী স্থানে বদলি এবং চিকিৎসাজনিত কারণে বদলির আবেদনও খারিজ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:
মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক অনিমেষ হালদারের অভিযোগ, রাজ্যের প্রচুর শূন্যপদে নিয়োগের ব্যবস্থা না করে কিছু শিক্ষক-শিক্ষিকাকে বাড়ি থেকে প্রায় ১৫০ থেকে ২০০ কিমি এমনকি ৩০০ কিমি দূরত্ব পর্যন্ত ‘সারপ্লাস ট্রান্সফার’-এর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। অথচ নিয়ম অনুযায়ী, বদলির ক্ষেত্রে সর্বাধিক দুরত্ব ৫০ কিমি পর্যন্ত হতে পারে। তিনি আরও বলেন, “বহু বছর দূরে চাকরি করে উৎসশ্রী পোর্টালের মাধ্যমে বাড়ির কাছাকাছি স্কুলে বদলি নিয়ে আসা শিক্ষকদের উপরও এই নির্দেশ বলবৎ করা হয়েছিল।”
উল্লেখ্য, উচ্চপ্রাথমিকে ৪৮৯ জন এবং মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক মিলিয়ে ৪৯০ জনের সারপ্লাস বদলির নির্দেশ জারি করা হয়েছিল। ইতিমধ্যেই এদের মধ্যে ৬০৫ জনের বদলি প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়েছে। আবার এদের মধ্যে ‘মেডিক্যালি আনফিট’ বিভাগে বদলি করা হয় ১২০ জনকে। অভিযোগ, এই ১২০ জন বদলির বিষয়ে কিছুই জানতেন না। পরবর্তীকালে তাই এই বিভাগের বদলি বাতিল করা হয়। এর পরও বদলি নিয়ে বিভ্রান্তি এবং হয়রানির অভিযোগ বারবার উঠেছে। বিকাশ ভবন সূত্রে খবর, প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক এবং অশিক্ষক কর্মীর চাকরি বাতিলের পর শিক্ষকদের নিয়ে নতুন করে কোনও আইনি জটিলতা চাইছে না সরকার।
আরও পড়ুন:
কলেজিয়াম অফ অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টার্স অ্যান্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমিস্ট্রেসেস-এর সম্পাদক সৌদীপ্ত দাস বলেন,“সারপ্লাস খুব আপেক্ষিক শব্দ। বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেক স্কুলেই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের আসন শূন্য। হয়তো পরিস্থিতি সামলাতেই সরকারের এই সিদ্ধান্ত। কিন্তু এর জন্য আগের বদলি বাতিল হলে তাতে স্কুলগুলির সমস্যা বাড়বে বই কমবে না।”
তবে এই বদলিকে শিক্ষামহলের আর এক অংশ নিজেদের জয় বলেও ধরে নিচ্ছেন। বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডলের দাবি, ‘‘বহু দিন ধরে এই বদলির বিরুদ্ধে লড়াই চলছিল, কারণ শিক্ষক-শিক্ষিকদের অনেক দূরে ট্রান্সফার করে দেওয়ায় অসুবিধা হচ্ছিল। যদিও তিনি এ-ও অভিযোগ করেছেন, এরই মাঝে কিছু ব্যক্তি শিক্ষক- শিক্ষিকাদের অসহায় অবস্থার সুযোগকে হাতিয়ার করে টাকা আদায় করেছেন।’’