Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

বন্ধ হল বাজনা, উধাও লাড্ডুও

টেলিভিশনের পর্দায় আটকে ছিল দলের হাজার হাজার কর্মীর চোখ। সংখ্যা যত বাড়ছিল, উত্তেজনার পারদও চড়ছিল। উত্তেজনা মিলিয়ে গেল সংখ্যা কমার সঙ্গে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৮ ০৩:৫৩
Share: Save:

পর্দায় বিজেপি একশো। লাড্ডু এল।

পর্দায় বিজেপির ১০৫। ব্যান্ড পার্টি এল।

পর্দায় বিজেপির ১১০। চেয়ার বসল সার দিয়ে।

পর্দায় বিজেপির ১১৫। হুল্লোড়, উড়ছে আবির।

পর্দায় ১১০, হুল্লোড় বন্ধ। ১০৮। ব্যান্ড থামল। ১০৪। উধাও মিষ্টিও।

দিল্লিতে বিজেপির নতুন ঝা চকচকে দফতর। সকাল থেকে যে ছবিটা ছিল, দুপুর গড়াতেই দফায় দফায় বদলে গেল। সকাল থেকে মনে হচ্ছিল, কর্নাটকে একার জোরেই সরকার গড়ছে বিজেপি। টেলিভিশনের পর্দায় আটকে ছিল দলের হাজার হাজার কর্মীর চোখ। সংখ্যা যত বাড়ছিল, উত্তেজনার পারদও চড়ছিল। উত্তেজনা মিলিয়ে গেল সংখ্যা কমার সঙ্গে।

সকালেই ঠিক হয়ে গেল দুপুর তিনটেয় বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ দফতরে আসবেন। বিকালে আসবেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শত শত পুলিশ, এসপিজি, পুলিশ কুকুরের তল্লাশিও শুরু হয়ে গেল দফতর জুড়ে। কিন্তু কোথায় অমিত? কোথায় মোদী?

তাঁরা অবশেষে এলেন বটে। কিন্তু তখন রাত গড়িয়েছে। দলের কর্মীদের অনেকেই হতাশ হয়ে ফিরে গিয়েছিলেন। ফুটপাতে বসে পড়েন সেজেগুজে আসা ব্যান্ড পার্টির লোকজন। কখন আবার ডাক পড়ে। সন্ধ্যায় সত্যিই তাঁদের ডাক পড়ে। দলের কর্মীদের ফের বাড়ি থেকে নিয়ে আসা হয়। যাতে প্রধানমন্ত্রীর সামনে ‘মোদী-মোদী’ ধ্বনি তোলা যায়।

কর্নাটকে আজই সরকার গড়তে না পারুক বিজেপি, কিন্তু মোদী-শাহ-সহ সকলেই ঘোষণা করলেন কর্নাটকে তাঁদেরই জয় হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ভূয়সী প্রশংসা করলেন অমিত। আর মোদী করলেন অমিতের। যাদুসংখ্যা দল ছুঁতে পারেনি দল— এ কথা কবুল করেও অমিতের বক্তব্য, কংগ্রেসের উল্লসিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। জনতা তাদের প্রত্যাখ্যানই করেছে। একক গরিষ্ঠতা না পেয়েও মোদীও কংগ্রেসকে আক্রমণ করলেন ঠারেঠোরে। ঘরমুখো বিজেপি কর্মীদের কেউ কেউ মনে করালেন। বিকেল পর্যন্ত অমাবস্যা ছিল আজ। এই দিনে ফল বেরনোটা মোটেই শুভ হল না।

বেঙ্গালুরুতে টগবগ করে ফুটছিল ইয়েদুরাপ্পা শিবির। শপথের জন্য স্টেডিয়াম ভাড়া করা হয়ে গিয়েছে। সরকার গড়ার আগে মোদী-অমিতের সঙ্গে দেখা করতে দুপুর তিনেটেয় দিল্লি রওনা দেবেন ইয়েড্ডি। বেলা গড়াতে স্বপ্নভঙ্গ। দিল্লি থেকে বার্তা এল, এসে কাজ নেই। সন্ধেয় সাংবাদিক বৈঠক করে ইয়েদুরাপ্পা কন্নড়ে রাজ্যবাসীকে বোঝালেন কংগ্রেসকে প্রত্যাখ্যান করেছেন তাঁরা।

কংগ্রেস বুঝতে পারছে, মোদী-শাহের যা ক্ষমতার খিদে, তাতে সহজে জমি ছাড়তে চাইবে না বিজেপি। কিন্তু গুজরাতে ধাক্কা দেওয়ার পরে কর্নাটকেও যে ভাবে আটকে রাখা গিয়েছে বিজেপিকে, তাতে অনেকটাই স্বস্তিতে কংগ্রেস। ঠিক ছিল, কংগ্রেস যদি জেতে তা হলে রাহুল নিজে সামনে আসবেন। মুখোমুখি হবেন সাংবাদিকদের। কিন্তু সংখ্যা অনুকূলে না আসায় সে-মুখো হননি কংগ্রেস সভাপতি। তবে সনিয়া গাঁধী-প্রিয়ঙ্কা ও দলের অন্য নেতাদের সঙ্গে নিরন্তর যোগাযোগ রেখে গিয়েছেন। প্রতিকূল পরিস্থিতির মোড় ঘোরানোর কৌশল রচনা করেছেন।

দুপুর পর্যন্তও যে কুমারস্বামীকে কেউ ধর্তব্যেই আনছিলেন না, হঠাৎই তাঁকে ‘কিং’ বানিয়ে দিলেন রাহুল। তাঁর হাতেই রাজ্য সঁপে দিতে রাজি হল দল। তার পরেই ‘সরকার’ ছবির মতো বাড়ির ব্যালকনি থেকে হাত নাড়ালেন হঠাৎ গুরুত্ব বেড়ে যাওয়া কুমারস্বামী। কংগ্রেসের নেতারা ছুটলেন বেঙ্গালুরুর রাজভবনে। কিন্তু রাজ্যপাল সময়ই দিচ্ছিলেন না। কিন্তু নাছোড় কংগ্রেস নেতারা প্রায় প্রদক্ষিণ করে বেড়াচ্ছিলেন রাজভবনের। অবশেষে ইয়েদুরাপ্পার পর ডাক পেলেন সিদ্দারামাইয়া-কুমারস্বামীরা।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE