কানহাইয়ার চিকিৎসা চলছে । ছবি: ফেসবুকের সৌজন্যে
অনশনে বসার আগে ক্যাম্পাসের ‘আজাদি চকে’ দেখা করেছিলেন সতীর্থদের সঙ্গে। লম্বা বক্তৃতায় কথা দিয়েছিলেন, শেষ দেখে ছাড়বেন! ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া দেশদ্রোহের অভিযোগে উত্তাল নয়াদিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে (জেএনইউ) ছাত্রদের উপর জরিমানা আর বহিষ্কারের বিরোধিতাই শুধু নয়, বুঝে নেবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলোও! সেই মতো আট দিন ধরে ক্যাম্পাসে অনশনরত পড়ুয়াদের সঙ্গে সামিল হন জেএনইউয়ের ছাত্র সংসদ সভাপতি কানহাইয়া কুমার।
তবে আজ, বৃহস্পতিবার অসুস্থ হয়ে পড়েন কানহাইয়া। কাল থেকেই রক্তচাপ কমতে শুরু করে তাঁর। আজ অচৈতন্য হয়ে পড়েন। তড়িঘড়ি তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কানহাইয়ার বন্ধু তথা ফেব্রুয়ারির মিছিল-বিতর্কে অন্যতম আর এক অভিযুক্ত উমর খালিদের কথায়, ‘‘কানহাইয়া গুরুতর অসুস্থ। বমি করছে এবং আধা-অচেতন অবস্থায় রয়েছে।’’ তবে এতে লড়াই থামবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। কানহাইয়ার আর এক সতীর্থের কথায়, ‘‘চিকিৎসকরা আমাদের সতর্ক করেছেন। এই অবস্থা চলতে থাকলে ওর অভ্যন্তরীণ রক্তপাতের আশঙ্কা বাড়বে।’’
দিল্লির প্রচণ্ড গরমেও আন্দোলনকারীরা হাল না ছাড়ায় অনশন নিয়ে গত কালই একটি বিবৃতি প্রকাশ করেন জেএনইউয়ের উপাচার্য জগদীশ কুমার। আন্দোলন বন্ধ করে আলোচনায় বসার আবেদন জানিয়ে তাঁর দাবি, ছাত্রদের শরীর এবং ভবিষ্যৎ— দু’টোরই ক্ষতি হচ্ছে। অনশন একটি বেআইনি পদ্ধতি। তবে তাতে কর্ণপাত করেননি ছাত্ররা।
শুধু কানহাইয়াই নন, শরীর ভেঙেছে অনশনরত বাকি পড়ুয়াদেরও। ক্রমাগত বমি করছেন উমর। ওজন কমেছে, পড়েছে রক্তচাপ। তবে আন্দোলনকারীরা স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, পিছু হটার পাত্র নন তাঁরা। কানহাইয়ার সুরেই বলেছেন, শেষ দেখে ছাড়বেন!
গত ৯ ফেব্রুয়ারি জেএনইউ ক্যাম্পাসে আফজল গুরুর সমর্থনে স্লোগান তোলার অভিযোগে গ্রেফতার হন বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন ছাত্র কানহাইয়া, উমর এবং অনির্বাণ ভট্টাচার্য। তবে জুতসই প্রমাণ না মেলায় দেশদ্রোহে অভিযুক্ত ওই তিন ছাত্র জামিনে ছাড়া পান। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটির রিপোর্ট তাঁদের দোষী সাব্যস্ত করে। কানহাইয়াকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এক সেমেস্টারের জন্য বরখাস্ত করা হয় উমরকে। অনির্বাণ ১৫ জুলাই পর্যন্ত এবং আরও এক ছাত্র মুজিব ঘেটো দুটো সেমেস্টার থেকে বহিষ্কৃত হন। পাশাপাশি, আগামী ৫ বছর অনির্বাণ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও কোর্সে ভর্তি হতে পারবেন না বলে জানায় রিপোর্ট।
এই শাস্তির প্রতিবাদের ২৮ এপ্রিল থেকে শুরু হয় ছাত্রদের অনির্দিষ্ট অনশন। আন্দোলনকারীদের মতে, যে অভিযোগ সত্যি নয়, তার জন্য শাস্তি কীসের? এই শাস্তি মেনে নিলে পক্ষান্তরে স্বীকার করে নেওয়া হবে যে তাঁরা সত্যিই দোষী। পক্ষপাতের অভিযোগ তুলে অনশন শুরু করেন ছাত্ররা। পাশাপাশি ২৮ তারিখ থেকে দেশদ্রোহে অভিযুক্ত ছাত্রদের বিরুদ্ধে আরও কড়া শাস্তির দাবিতে অনশন শুরু করে এবিভিপি-র একটি দলও। গত কাল কানহাইয়া-সহ জেএনইউয়ের অনশনকারী ছাত্রদের পাশে দাঁড়ান শিক্ষকেরাও। সূত্রের খবর, ৭০ জন শিক্ষক এবং ১৮০ জন পড়ুয়া ওই দিন প্রতীকী রিলে অনশন করেছেন। আজ, জেএনইউএসইউয়ের সাধারণ সম্পাদক রাম নাগা বলেন, ‘‘এটা সত্যি যে অনশনের আট দিন পরে আমাদের শরীর ভাঙতে শুরু করেছে। কিন্তু লড়াইয়ের মনোবল এতটুকু পোড় খায়নি!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy