প্রতীকী ছবি।
প্রায় আড়াই দশকের ব্যবধান। ২৪ বছর আগেও সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের মধ্যে ঐকমত্য হয়নি। ২০১৮-এও হল না।
১৯৯৪-এ সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চে প্রধান বিচারপতি-সহ তিন জন রায় দিয়েছিলেন, মসজিদ ইসলাম ধর্মে আবশ্যিক নয়। সে দিনও সংখ্যাগরিষ্ঠের এই রায়ের সঙ্গে অন্য দু’জন একমত হতে পারেননি। আজ সুপ্রিম কোর্ট সেই রায়েই সিলমোহর বসাল। কিন্তু এ দিনও প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র এবং বিচারপতি অশোক ভূষণের সঙ্গে একমত হতে পারলেন না বিচারপতি এস আবদুল নাজির।
সংখ্যার জোরে বাকি দু’জনের মতই আদালতের রায় হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। কিন্তু তীব্র বিরোধিতায় পৃথক রায় লিখে বিচারপতি নাজিরের মত, তাড়াহুড়ো করে, মুসলিমদের ধর্মবিশ্বাস, ধর্মতত্ত্ব খতিয়ে না দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না যে, মসজিদ ইসলামে আবশ্যিক নয়। তার জন্য সাংবিধানিক বেঞ্চ প্রয়োজন। তাঁর যুক্তি, মুসলিমদের তিন তালাক প্রথা নিয়ে ফয়সালা হয়েছে সাংবিধানিক বেঞ্চে। নিকাহ হালালা, যোনিচ্ছেদের মতো প্রচলিত প্রথার বিরুদ্ধে মামলাও সাংবিধানিক বেঞ্চেই পাঠানো হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের আজকের সিদ্ধান্তের পরে আরএসএস-বিশ্ব হিন্দু পরিষদ রামমন্দির তৈরির পথে যাবতীয় বাধা কেটে গেল বলে রব তুললেও হার মানছেন না বাবরি মসজিদ অ্যাকশন কমিটির নেতা জাফরায়ব জিলানি। মসজিদ নিয়ে সাংবিধানিক বেঞ্চে শুনানির দাবি জানিয়েছিলেন সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডের আইনজীবী রাজীব ধবন। তাঁর মন্তব্য, “সংখ্যাগরিষ্ঠের রায় সংখ্যাগুরুদেরই খুশি করবে। সংখ্যালঘুর রায় সংখ্যালঘুদের খুশি করবে। কিন্তু যে সমস্যা নিয়ে আমরা শুরু করেছিলাম, তার কোনও সমাধান হল না। এখানে পাটিগণিতের প্রশ্ন নয়। প্রশ্নটা সবাইকে বিশ্বাস করানোর যে সুপ্রিম কোর্ট এক স্বরে কথা বলছে।”
জিলানির যুক্তি, আজ সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট করল যে, ১৯৯৪-এর রায় শুধু অযোধ্যার বিতর্কিত জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ছিল। বিচারপতি নাজিরও তা মেনেছেন। তা সত্ত্বেও ১৯৯৪-এর ওই রায় ২০১০-এর ইলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়কে প্রভাবিত করেছিল বলে বিচারপতি নাজিরের মত।
হাইকোর্ট অযোধ্যার বিতর্কিত জমি তিন ভাগ করে রামলালা বিরাজমান, নির্মোহী আখড়া ও সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডের মধ্যে ভাগ করে দিতে বলে। হিন্দুরা পায় তিন ভাগের দুভাগ। মুসলিমরা এক ভাগ।
এই মামলার গুরুত্ব বোঝাতে ইলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়ে বিচারপতি এস ইউ খানের মন্তব্য উদ্ধৃত করেছেন বিচারপতি নাজির। বিচারপতি খান রায়ে লিখেছিলেন, ‘অযোধ্যার এক ফালি জমিতে দেবদূতরাও পা ফেলতে ভয় পায়। অসংখ্য ল্যান্ডমাইন ভর্তি। আমাদের তা সাফ করতে হবে। বোকার মতো তাড়াহুড়ো করলে সবাই উড়ে যাবে’।
এমআইএম নেতা আসাউদ্দিন ওয়াইসি বলেন, “সাংবিধানিক বেঞ্চেই এই ফয়সালা হলে ভাল হত।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy