Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

বাংলা ও অসমে জেহাদের ছক ছিল কওসরের, বিস্মিত তদন্তকারীরা!

পশ্চিমবঙ্গ ও অসমকে কেন্দ্র করে জেহাদের প্রস্তুতি চালিয়েছিল জেএমবি জঙ্গি নেতা কওসর। সম্প্রতি রোহিঙ্গাদের নিয়ে এ দেশে যে-বিতর্ক শুরু হয়েছে, তাকেও কাজে লাগাতে চেয়েছিল এই জঙ্গি এবং তার সংগঠন ‘নব্য জেএমবি’।

জেএমবি জঙ্গি নেতা কওসর।

জেএমবি জঙ্গি নেতা কওসর।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০১৮ ০৪:১২
Share: Save:

চেহারা নিতান্তই সাদামাঠা। কিন্তু তার জঙ্গি ষড়যন্ত্রের নানান দিকের কথা জেনে তদন্তকারীরা বিস্মিত! তাঁরা জেনেছেন, পশ্চিমবঙ্গ ও অসমকে কেন্দ্র করে জেহাদের প্রস্তুতি চালিয়েছিল জেএমবি জঙ্গি নেতা কওসর। সম্প্রতি রোহিঙ্গাদের নিয়ে এ দেশে যে-বিতর্ক শুরু হয়েছে, তাকেও কাজে লাগাতে চেয়েছিল এই জঙ্গি এবং তার সংগঠন ‘নব্য জেএমবি’।

বেঙ্গালুরু থেকে গ্রেফতারের পরে কওসরকে জেরা করে এই সব তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা। তাঁরা জানান, বাংলাদেশে জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)-এর সংগঠন ধাক্কা খাওয়ার পরে এ দেশে ঘাঁটি সরিয়ে আনে কওসর এবং তার সহযোগী সালাউদ্দিন সালেহিন। গত জানুয়ারিতে দলাই লামার পরিদর্শনের আগে বুদ্ধগয়ায় বিস্ফোরণের ছক কষা হয়েছিল। ব্যাপক আকারের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে রোহিঙ্গা প্রসঙ্গটিকে তুলে ধরতে চেয়েছিল কওসর।

গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, জেহাদের পথে হাঁটার জন্য আদর্শের ক্ষেত্রেও কিছু অদলবদল করে নিয়েছিল কওসরেরা। পুরনো জেএমবি ছিল আল কায়দা ঘনিষ্ঠ। নব্য জেএমবি কিন্তু ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর মতাদর্শে বিশ্বাসী। পশ্চিমবঙ্গ, অসম, ঝাড়খণ্ডের কোথায় কোথায় আইএসের আদর্শে বিশ্বাসী নব্য জেএমবি মডিউল রয়েছে, তা জানার চেষ্টা চলছে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সূত্র জানাচ্ছে, বুদ্ধগয়ায় বিস্ফোরণের ছক ব্যর্থ হওয়ার পরে কওসর, তুহিনেরা শ্রমিক সেজে দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে ছিল। কওসর কখনও কলের মিস্ত্রি, কখনও গাড়ির মিস্ত্রি, কখনও ফেরিওয়ালা সেজে থাকত। লুকিয়ে থাকার জন্য তারা বেছে নিয়েছিল বাঙালি শ্রমিকদের মহল্লা। তাদের সংস্রবে সেই শ্রমিকের মধ্যে জঙ্গি মনোভাব ছড়িয়েছে কি না, সেটাও যাচাই করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।

গোয়েন্দা সূত্রের খবর, বছরখানেক আগে মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ানে একটি বৈঠক করে কওসর ও সালেহিন। মুর্শিদাবাদ, মালদহের মতো সীমান্ত জেলায় বেশ কিছু মডিউলও তৈরি করেছে তারা। বুধবার দুপুরে ঝাড়খণ্ডের পাকুড় থেকে দিলওয়ার হাসান ওরফে আলি ওরফে উমর আর এক জেএমবি জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছে লালবাজারের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)। ওই জঙ্গি মালদহের কালিয়াচকের বাসিন্দা। কলকাতা পুলিশ আগেও পয়গম্বর শেখ-সহ পাঁচ জনকে কব্জা করেছিল।

সোমবার রাতে বেঙ্গালুরুতে কওসরকে গ্রেফতার করে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)। কয়েক দিন আগেই কেরলে ধরা পড়েছে কওসরের শাগরেদ তুহিন এবং আব্দুল করিম। তুহিনকে জেরা করেই কওসরের ডেরার হদিস মেলে। ২০১৪ সালে বর্ধমানের খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণের অন্যতম চক্রী কওসরকে আপাতত বুদ্ধগয়া বিস্ফোরণ মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে। পটনায় এনআইএ-র হেফাজতে রয়েছে সে।

আরও পড়ুন: ভারতে গুরুত্ব পেতেই বুদ্ধগয়াতে হামলার ছক বোমা

জেরায় কওসর ওরফে বোমা মিজান জানিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরছিল সে। কখনও কলের মিস্ত্রি, কখনও বা কারিগর সেজে। তার বেঙ্গালুরুর ঘরে হানা দিয়ে বেশ কিছু কাগজপত্র এবং বোমা তৈরির যন্ত্রাংশ আটক করা হয়েছে। জুলাইয়েই সে কেরলের মাল্লাপুরমে শাগরেদ তুহিনের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিল।

বাংলাদেশি নাগরিক কওসর জেএমবি-র সূচনা পর্ব থেকেই ওই সংগঠনের নেতা। বোমা বানানোর দক্ষতার জন্য তার নাম হয় বোমারু মিজান। ২০১৪ সালে বাংলাদেশে প্রিজন ভ্যান থেকে পালায় সে। আসে মুর্শিদাবাদে। বীরভূমে বিয়েও করে। একটি মাদ্রাসায় পড়ানোর আড়ালে জঙ্গি সংগঠনের শাখা খুলতে শুরু করে সে। বেলডাঙাতেই তার সঙ্গে থাকত হাতকাটা সোহেল মাহফুজ ও সাকিল গাজি নামে দুই জেএমবি নেতা। মুর্শিদাবাদ, মালদহ, বর্ধমানের পরে শাখা ছড়ায় ঝাড়খণ্ডেও। ঝাড়খণ্ডের পাকুড়ে জেএমবি-র একাধিক ঘাঁটি আছে বলে জানাচ্ছে এনআইএ।

কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী, গুজরাত থেকে মণিপুর - দেশের সব রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে আমাদের দেশ বিভাগে ক্লিক করুন।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE