১। লাইব্রেরিতে ঢুকছে মুখ ঢাকা পুলিশকর্মীরা। ২। লাঠি উঁচিয়ে তেড়ে যাচ্ছে পড়ুয়াদের দিকে। ৩। চলছে বেদম মারধর। ৪। বার করে দেওয়া হচ্ছে পড়ুয়াদের (ঘড়ির কাঁটা অনুযায়ী)। জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ভিডিয়ো ফুটেজই ভাইরাল হয়েছে।
সামনে বই। লাইব্রেবির টেবিলগুলির এক দিকে রয়েছে পড়ুয়ারা। আচমকাই সেখানে ঢুকে পড়ুয়াদের বেধড়ক মারতে শুরু করল দিল্লি পুলিশের মুখঢাকা জওয়ানেরা। টেবিলের ও পাশ থেকে মুহুর্মুহু লাঠির আঘাত মাথার উপরে। হাত বাড়িয়ে বাঁচার চেষ্টা করছে পড়ুয়ারা। পালানোর চেষ্টায় ছুটে বেড়াচ্ছে কেউ কেউ।
সমাজমাধ্যমে এমনই ৪৮ সেকেন্ডের একটি ভিডিয়ো সামনে এনে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া ও প্রাক্তনীদের নিয়ে গঠিত কোঅর্ডিনেশন কমিটি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অবশ্য আজ জানিয়ে দিয়েছে, ওই ভিডিয়ো প্রকাশ করেনি তারা।
ভিডিয়োটি ১৫ ডিসেম্বরের। দাবি, জামিয়ার পুরনো লাইব্রেরি কক্ষে পুলিশি হামলার অকাট্য প্রমাণ এটি। দু’মাস আগে সেই দিনটিতে নাগরিকত্ব আইন বিরোধী বিক্ষোভের উপর পুলিশি হামলার অভিযোগ উঠেছিল। বিজেপির দাবি ছিল, প্রতিবাদীরা পাথর ছোড়াতেই আত্মরক্ষায় লাঠি চালিয়েছে এবং কাঁদানে গ্যাস ছুড়েছে পুলিশ। সে দিন মিনাজউদ্দিন নামে এক ছাত্র একটি চোখ হারিয়েছে। এর পরেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং পুলিশের দাবি ছিল, নিরাপত্তাবাহিনী লাইব্রেরিতে ঢোকেনি। ফলে এই ভিডিয়ো সামনে আসতেই বিরোধীরা সরকারকে নিশানা করেছেন।
এই ভিডিয়োই সামনে এসেছে।
টুইটারে প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা লিখেছেন, ‘‘দেখুন পড়ুয়াদের কী নির্মম ভাবে ভাবে মারছে দিল্লি পুলিশ। একটি ছেলে বই পড়ছে। পুলিশ তাকে মেরেই চলেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আর দিল্লি পুলিশ মিথ্যে বলেছিল। পুলিশ বলেছিল, তারা নাকি লাইব্রেরিতে ঢোকেনি, পড়ুয়াদেরও আঘাত করেনি।’’ কংগ্রেস নেত্রী আরও বলেন, ‘‘এর পরে পুলিশের বিরুদ্ধে যদি ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তা হলে সরকারের মনোভাব স্পষ্ট হয়ে যাবে।’’ সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির টুইট, ‘‘পড়ুয়াদের উপর পুলিশি হামলার পক্ষে অনেক যুক্তি দিয়েছিলেন অমিত শাহ। সে সব যে অসত্য, রাজনৈতিক ভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বক্তব্য, তা প্রমাণ হয়ে গেল।’’ তাঁর কথায়, ‘‘দিল্লি পুলিশ নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের অধীনে। পড়ুয়ায়াদের সঙ্গে তারা এমন ব্যবহার করছে। এটা লজ্জা।’’
তবে ওই ফুটেজেই দেখা যায়, এর জন পড়ুয়া মুখে কাপড় বেঁধে লাইব্রেরিতে বসে। সামনের বইটি বন্ধ। পুলিশকে লাইব্রেরি কক্ষে ঢুকতে দেখেই মুখের কাপড় নামিয়ে ফেলে সে। পুলিশকে দেখে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই বন্ধ বইটি খুলে ফেলে ওই পড়ুয়া। বিজেপির তথ্যপ্রযুক্তি সেলের প্রধান অমিত মালব্য পাল্টা আক্রমণ করে টুইট করেছেন, ‘‘লাইব্রেরিতে মুখ ঢাকা পড়ুয়া বন্ধ বই থেকে পড়াশোনা করছে। পড়াশোনা করার মনোযোগ কিংবা বইয়ে ডুবে যাওয়া নিশ্চিন্ত মুখ দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না। বরং লাইব্রেরির প্রবেশ পথের দিকে উদ্বেগের চোখে তাকিয়ে আছে। পাথর ছোড়ার পরে এ ভাবেই কি লাইব্রেরিতে লুকিয়ে ছিল জামিয়ার দাঙ্গাকারীরা?’’ মালব্যের দাবি, জামিয়ার দাঙ্গাকারীরা নিজেই নিজেদের চিনিয়ে দিয়েছে। তবে রাজনৈতিক স্তরে প্রশ্ন উঠেছে, কোনও পড়ুয়ারা যদি পাথর ছুড়ে লাইব্রেরিতে আশ্রয় নিয়েও থাকে, তা হলেও গ্রেফতারের বদলে নির্মম ভাবে মারা হল কেন?
এর পরেই আর একটি সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ্যে আসে। তাতে দেখা যাচ্ছে, লাইব্রেরিতে ঢুকছে অন্তত ৫০ জন পড়ুয়া। এক জনের হাতে পাথর। টেবিল দিয়ে দরজা আটকাচ্ছে তারা। বিজেপির দাবি, পাথর ছোড়ার পরে বিক্ষোভকারীরা যে লাইব্রেরিতে জড়ো হয়েছিল, এ থেকেই তা বোঝা যাচ্ছে। আনন্দবাজার পত্রিকা অবশ্য কোনও ভিডিয়োরই সত্যাসত্য যাচাই করেনি। তবে কেজরীবালের শপথের দিনেই জামিয়া নিয়ে এমন ভিডিয়োগুলি সামনে আসায় অনেকেই মনে করছেন, আপের প্রচারকে লঘু করে দিতেই নতুন বিতর্ক সামনে আনা হল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy