গ্রুপ ক্যাপ্টেন বরুণ সিংহ।
সাধারণ মানের হলেও নিজের মধ্যে যে গুণ রয়েছে, যে সুপ্ত প্রতিভা রয়েছে তা জাগিয়ে তোলার কাজ করতে হবে। আর সেটা করতে পারলেই অনেক কিছু অর্জন করা সম্ভব। নিজের ক্ষমতার প্রতি বিশ্বাস, অগাধ আস্থা রাখতে হবে। এই বার্তা যিনি সেনা স্কুলের প্রতিটি পড়ুয়ার মধ্যে চারিয়ে দিতে চেয়েছেন, সেই সেনা আধিকারিক এখন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন।
বরুণ সিংহ। ভারতীয় বায়ুসেনার গ্রুপ ক্যাপ্টেন। গত ৮ ডিসেম্বর এমআই-১৭ ভি-৫ হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া একমাত্র সেনা আধিকারিক। ওই কপ্টারেই ছিলেন ভারতের প্রথম সেনা সর্বাধিনায়ক তথা চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ (সিডিএস) বিপিন রাওয়ত এবং স্ত্রী-সহ ১৪ জন। ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু বরাতজোরে বেঁচে গিয়েও মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই চালাচ্ছেন বরুণ। আরও উন্নত চিকিৎসার জন্য তামিলনাড়ুর ওয়েলিংটনের সেনা হাসপাতাল থেকে বরুণকে বিমানে করে বেঙ্গালুরুর কমান্ড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেনা সূত্রে খবর, বরুণের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তবে স্থিতিশীল। তিনটি অস্ত্রোপচার হয়েছে তাঁর। দেহের ৪৫ শতাংশ পুড়ে গিয়েছে বরুণের।
মাঝ আকাশে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে তেজস বিমান দুর্ঘটনা কবলে পড়েছিল। কিন্তু বরুণ দক্ষতার সঙ্গে সেই দুর্ঘটনা এড়ান। তাঁর এই সাহসিকতার জন্য এ বছরের অগস্টেই শৌর্য চক্র পান এই বায়ুসেনা আধিকারিক। ১৮ সেপ্টেম্বর সেনা স্কুলের অধ্যক্ষকে একটি চিঠি লিখেছিলেন বরুণ। এক জন ছাত্র হিসেবে কেমন ছিলেন তিনি। চিঠিতে সেই কথাই উল্লেখ করেছিলেন।
তিনি লিখেছিলেন, ‘অতি সাধারণ মানের হওয়া কোনও অপরাধ নয়। সবাইকেই দুর্দান্ত হতে হবে, পরীক্ষায় ৯০ পেতে হবে, এমনটাও নয়। তবে যদি তুমি এটা পারো, তা হলে সেটা দারুণ কৃতিত্ব। কিন্তু তুমি যদি সেই পারফরম্যান্স করতে না পারো, তা হলে এটা ভাবার কোনও কারণ নেই যে সাধারণ মানের বলেই তুমি ব্যর্থ হয়েছ।’
কী ভাবে নিজের ভিতরের ক্ষমতার প্রতি আস্থা রাখতে হয় এবং নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখতে হয় চিঠিতে সেই বার্তাও দিয়েছেন বরুণ। তিনি লেখেন, ‘যখন এক জন তরুণ ক্যাডেট ছিলাম, আমার মধ্যে আত্মবিশ্বাস ছিল না। কিন্তু যখন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট থেকে ফ্লাইট স্কোয়াড্রন হলাম, তখন উপলব্ধি করলাম, আমি আরও ভাল করতে পারব। মন এবং মস্তিষ্ককে যদি এক জায়গায় রাখতে পারি তা হলে অনেক কিছুই অর্জন করা সম্ভব। আরও ভাল করতে হবে এই পণ নিয়ে নিজেকে উজাড় করার কাজে লাগালাম।’
এর পরই বরুণের বার্তা, ‘স্কুলে তুমি সাধারণ মানের হতে পারো। সেটা কিন্তু তোমার বাকি জীবনের মাপকাঠি নয়। তোমার মধ্যে লুকিয়ে থাকা প্রতিভাকে বার করে আনো। তা সে সঙ্গীত হতে পারে, গ্রাফিক ডিজাইন বা সাহিত্য হতে পারে। তবে যেটাই করবে, তার মধ্যে অধ্যবসায় যেন থাকে।’
সবশেষে বরুণ লিখেছেন, ‘আমার এই বার্তা, এই ধারণা যদি আর পাঁচ জন পড়ুয়ার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারি, তাঁদের যদি আমার এই বার্তার মাধ্যমে উৎসাহিত করতে পারি, তবেই আমার জীবন সার্থক হবে।’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy