নিউক্লিয়ার সাবমেরিন আইএনএস অরিহন্ত যে কোনও রকম যুদ্ধের জন্য এখন প্রস্তুত। ঘোষণা করল ভারতীয় নৌসেনা। বেশ কিছু দিন ধরে সমুদ্রে পরীক্ষামূলক অভিযান চালাচ্ছিল ভারতের এই একমাত্র পারমাণবিক ডুবোজাহাজ। পরীক্ষা পর্ব শেষ। এখন কর্তব্য পালনে অরিহন্ত সব দিক থেকে প্রস্তুত। নৌসেনার এই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই ভারত আনুষ্ঠানিক ভাবে হয়ে উঠল পৃথিবীর ষষ্ঠ দেশ, যার কাছে নিউক্লিয়ার সাবমেরিন রয়েছে এবং যে দেশ স্থল, জল ও আকাশ থেকে পরমাণু আক্রমণ চালাতে সক্ষম।
রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য যে পাঁচটি দেশ, সেই আমেরিকা, রাশিয়া, চিন, ব্রিটেন ও ফ্রান্স ছাড়া কোনও দেশের হাতে পরমাণু শক্তিচালিত ডুবোজাহাজ বা নিউক্লিয়ার সাবমেরিন এত দিন ছিল না। আইএনএস অরিহন্ত তৈরি করে ফেলার পর সেই গোত্রের অন্তর্ভুক্ত হওয়া ভারতের কাছে ছিল সময়ের অপেক্ষা। সেই অপেক্ষা এ বার শেষ। আইএনএস অরিহন্তকে আনুষ্ঠানিক ভাবে যুদ্ধের উপযুক্ত বলে নৌসেনা ঘোষণা করার পর, ভারত বিশ্বের সেরা সামরিক শক্তিগুলির তালিকায় অনেক দেশকেই পিছনে ফেলে দিল।
স্থল এবং আকাশ থেকে পরমাণু হামলা চালানোর ক্ষমতা আগেই ছিল ভারতের। শুধু সমুদ্রগর্ভ থেকে পরমাণু হামলা চালানোর ক্ষমতা ভারতের ছিল না। প্রকৃত পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রের কাছে এই তিন সক্ষমতা থাকাই জরুরি। কারণ আধুনিক যুদ্ধের কৌশল বলছে, একটি পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রের উপর অন্য একটি পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র যদি পরমাণু হামলা চালায়, তা হলে এমন ভাবে হামলা চালানো হবে যাতে প্রতিপক্ষের ভূখণ্ডে যত পারমাণবিক পরিকাঠামো রয়েছে, সেগুলির সবক’টিকে ধ্বংস করে দেওয়া যায়। সেই কারণেই সেকেন্ড স্ট্রাইক কেপেবলিটি বা পরমাণু হামলা চালানোর বিকল্প পরিকাঠামো হাতে থাকা জরুরি। স্থলভাগে যে সব পরমাণু পরিকাঠামো রয়েছে, সেগুলিতে প্রতিপক্ষ হামলা চালাতে সক্ষম হলেও সমুদ্রের গভীরে লুকিয়ে থাকা পরমাণু অস্ত্রের ক্ষতি করা সম্ভব হয় না। কারণ পরমাণু অস্ত্র নিয়ে নিউক্লিয়ার সাবমেরিন কোথায় কখন লুকিয়ে থাকে, তা প্রতিপক্ষ বুঝতেই পারে না। আইএনএস অরিহন্ত সম্পূর্ণ রূপে প্রস্তুত হয়ে যাওয়ায় ভারত সমুদ্রের গভীরে পরমাণু অস্ত্র এবং মিসাইল মজুত করার সামর্থ্য পেয়ে গেল। অর্থাৎ ভারতে পরমাণু হামলা করে কোনও প্রতিপক্ষ দেশ ভারতীয় ভূখণ্ডে থাকা সব পরমাণু পরিকাঠামো ধ্বংস করে দিলেও, ভারতের পাল্টা পরমাণু হামলা চালানোর পথ বন্ধ হবে না। সমুদ্রের গভীর থেকে আইএনএস অরিহন্ত ভয়ঙ্কর প্রতিআক্রমণ চালাবে সেই প্রতিপক্ষের উপর। ভারত ছাড়া এই সেকেন্ড নিউক্লিয়ার স্ট্রাইকের ক্ষমতা রয়েছে আমেরিকা, রাশিয়া, চিন, ব্রিটেন ও ফ্রান্সের।
আরও পড়ুন:
বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী আন্ডার-সি মিসাইল ছুড়তে চলেছে ভারত
আইএনএস অরিহন্তকে পেতে অবশ্য ১২ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে ভারতকে। এই নিউক্লিয়ার সাবমেরিনের নির্মাণ কাজও অন্য অনেক প্রকল্পের মতো খুব গোপনে শুরু করেছিল ভারত। ২০০৯ সালে আইএনএস অরিহন্ত তৈরির কথা প্রথামবার প্রকাশ্যে আনে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। সে বছরই পরীক্ষামূলকভাবে চালানোর জন্য সমুদ্রে পাঠানো হয় অরিহন্তকে। কিন্তু তখনও এই ডুবোজাহাজে নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর বা পরমাণু চুল্লিটি লাগানোই হয়নি। ২০১০ সালে নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর লাগানো হয় আইএনএস অরিহন্তে। তার পর সেটি পুরোদস্তুর নিউক্লিয়ার সাবমেরিন হয়ে ওঠে। ২০১৩ সালে সেই নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর চালু করা হয়। ২০১৪ সালের মধ্যে আইএনএস অরিহন্ত যে কোনও ধরনের লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে বলে মনে করা হয়েছিল। কিন্তু তা হয়নি। সমুদ্রের বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন ধরনের পরিস্থিতিতে আইএনএস অরিহন্ত কতটা স্বচ্ছন্দে কাজ করতে পারে, সেই পরীক্ষা শেষ করতে সময় লেগে যায় অনেকটা। এই নিউক্লিয়ার সাবমেরিনে মিসাইল মজুত করা এবং সমুদ্রগর্ভ থেকে মিসাইল ছুড়ে হামলা চালানোর মহড়া দেওয়ারও দরক্রা ছিল। সব রকম পরীক্ষা এবং মহড়া নৌসেনা তথা প্রতিরক্ষা মন্ত্রক আইএনএস অরিহন্তের পারদর্শীতা নিয়ে খুবই সন্তুষ্ট। তাই এত দিনে গোষণা করা হল, যে কোনও রকম যুদ্ধ বা অভিযানের জন্য আইএনএস অরিহন্ত এখন সম্পূর্ণ তৈরি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy